চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বঙ্গবন্ধুর ছাত্র রাজনীতি

নিহার সুলতানা

২১ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:২০ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একটি অবিচ্ছেদ্য নাম। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলনে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রয়েছে নেতৃত্ব। কিন্তু সেই ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে অজানা।

আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নানা কর্মসূচি। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশকে জানার কর্র্মসূচি গ্রহণ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তারই আলোকে চট্টগ্রামের সেন্ট স্কলাসটিকা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের একদল শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে জানার জন্য একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরীর একটি সাক্ষাতকার নিয়েছেন।

সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী, শর্মিলা দাশ, অরপারিজতা দাশ, তাসনুভা খানম, তাথৈ চৌধুরী, দুররিয়া হোসেইন, তৃষা পাল, অনন্যা দাশ, শিবাঙ্গী গুপ্তা, প্রান্তিকা চৌধুরী ও অর্পণা বিশ^াস। সেন্ট স্কলাসটিকা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রদত্ত সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন
চৌধুরীর সাক্ষাতকারটির অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর মেধা, বুদ্ধি, সাংগঠনিক দক্ষতা, কৌশল আর নেতৃত্ব-সবকিছু মিলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবস্থা থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি যখন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের ছাত্র, তখন থেকে সংগঠন করতেন। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক ক্ষমতার বিকাশ ঘটে। পরবর্তীতে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি পুরোপুরি ছাত্র
রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন জাত নেতা (ইড়ৎহ খবধফবৎ)। তিনি নেতৃত্বের ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিলেন এবং অতি অল্প বয়সে তাঁর এই ক্ষমতার প্রকাশ ঘটেছিলো। ছোটবেলা থেকে তিনি একজন স্বাধীনচেতা মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠেছিলেন। ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং তাঁর ক্যাবিনেটের বাণিজ্য ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ সফরে গিয়েছিলেন। শেখ মুজিব মন্ত্রীদ্বয়ের সফর উপলক্ষে গঠিত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছিলেন। দুই নেতা সফরকালে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলও পরিদর্শন করেন। ওইস্কুলেই কিশোর মুজিব পড়াশুনা করতেন। কিশোর মুজিব ওই দিন (১৬ জানুয়ারি, ১৯৩৮) স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রীর পথরোধ করে দাঁড়ান। তিনি দুই মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের স্কুলের ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে, আমরা ক্লাস করতে পারি না। আমাদের স্কুলের ছাদ মেরামতের আশ^াস না দিলে আমরা আপনাদের পথ ছাড়বো না। কিশোর মুজিবের দৃঢ়তা দেখে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক তাঁর ঐচ্ছিক তহবিল থেকে বারশত টাকা প্রদান করেন। দুই মন্ত্রী স্কুল পরিদর্শন শেষে ডাক বাংলোতে ফিরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে সেদিনের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন। কে এই কিশোর, কার এতো সাহস এবং বুকের পাটা যে বাংলার প্রধানমন্ত্রীর পথ আটকে দাঁড়ায়। খবর নিয়ে জানতে পারলেন এই কিশোরের নাম ‘শেখ মুজিব’, টুঙ্গিপাড়ার শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে। দুই মন্ত্রী তখনই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘শেখ মুজিব ভবিষ্যতে একজন বড় নেতা হবেন।’ সেই কিশোরই আজকের বঙ্গবন্ধু; স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৩৮ সাল থেকে বলতে গেলে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পথচলা শুরু। হোসেন সোহরাওয়ার্দী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর নেতা। সোহরাওয়ার্দী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে দীক্ষা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৩৯ সালে মুসলিম লীগের সদস্য হন এবং পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে জড়িত হন। তখন অধিকাংশ বাঙালি মুসলমান পাকিস্তান আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। ১৯৪৬ সালে পাকিস্তানের লক্ষে সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু একজন ছাত্রনেতা হিসবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সেটি ছিলো বৃটিশদের কাছ থেকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলো। পাকিস্তান যখন হলো বঙ্গবন্ধু তখন কলকাতায়।

কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের বেকার হোস্টেলে থাকতেন বঙ্গবন্ধু। তিনি ঢাকা চলে আসার প্রস্তুতি নিলেন। ঢাকায় চলে আসার আগে ইসলামিয়া কলেজের সিরাজদ্দৌলা হলে বঙ্গবন্ধু তাঁর কিছু বিশ^স্ত সহকর্মীদের নিয়ে একটি গোপন বৈঠক করেন। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু তাদেরকে বললেন, পাকিস্তান স্বাধীন হলেও

প্রকৃত স্বাধীনতা আসবে না। প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য ঢাকায় গিয়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে হবে। বঙ্গবন্ধু ঢাকায় এসে ১৫০ নম্বর মোগলটুলীতে সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের অনুসারীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত কর্মীশিবিরে যোগদান করেন। সেদিন থেকে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে ঠাঁই করে নেয়। বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা, যিনি গোটা পাকিস্তানি জমানায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে অনমনীয় ও অবিচল ছিলেন। তাঁর সমস্ত আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। নাম দেওয়া হলো ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’। ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানকে ধ্বংস করার বীজ রোপন করেন। ছাত্রলীগই পরবর্তীকালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সমস্ত আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। ছাত্রলীগ ছিলো একটি ‘মেয়াদী বোমা’, যা’ ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু তৈরি করেছিলেন এবং ১৯৭১ সালে তার বিস্ফোরণ ঘটেছিলো; ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

শিক্ষিকা, সেন্ট স্কলাসটিকা স্কুল এন্ড কলেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট