চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই

মনোয়ার হোসেন রতন

১৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

বিগত সাড়ে পাঁচ হাজার বছরে বিশে^ সাড়ে চৌদ্দ হাজার যুদ্ধ হয়েছে। এরপরতো রয়েছে আরো দু’টি বিশ্বযুদ্ধ। এখনও বিশ্বে বহু যুদ্ধ, ধ্বংস এবং রক্তের গঙ্গা বয়ে চলেছে। ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী রিপাবলিকান গার্ডসের কুদস বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে সঙ্গীসহ বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলার মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, যার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের শঙ্কা আরো ঘনিভূত হলো। সামগ্রিক অবস্থা বিশ্লেষণের মধ্য দিয়েই হয়তো জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস বলেই ফেললেন, আরেকটি যুদ্ধের ধকল সামলাতে পারবে না বিশ্ব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবী করলেন, যুদ্ধ ঠেকাতেই সোলাইমানিকে হত্যা, শুরু করতে নয়। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ মার্কিন হামলার ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ’ আখ্যা দিয়েছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এ ঘটনার ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি এরই মধ্যে দিয়েছেন। যা বিশ্বের কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না। বিশ্বনেতারা শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন। এ যাবতকালে আমরা খুব একটা দেখতে পাইনি বিশ্ব নেতাদের আহ্বানে শান্ত হয়েছে বিশ্ব। কারণ তাঁদের নিজেদের চরিত্রই হচ্ছে আধিপত্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশবাদী। এ কারণেই ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরাইলের জুলুম, আমেরিকার ইরাক আক্রমণ, লিবিয়া, লেবানন, সিরিয়াসহ আজ বিশ্বের বহু দেশ যুদ্ধের আগুনে পুড়ছে। দ্বন্দ্ব, সংঘাত, যুদ্ধ এবং বিশৃংখলা চলছে। এর মূল কারণ উরারফব ধহফ জঁষব পলিসি, বিশ্ব নেতাদের মুল চরিত্রই হচ্ছে ভাগ কর, শাসন ও শোষণ কর নীতি। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি আজ সবই শাসন, শোষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করছে তথাকথিত বিশ্বনেতারা। বিশ্বের সর্বকালের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যের রানী ভিক্টোরিয়ার (১৮১৯-১৯০১ খ্রি.) সময় বলা হতো ব্রিটিশসাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত্র যেত না। আজ সেই দম্ভ ব্রিটিশদের নেই। বলশেভিক বিপ্লবের দুনিয়া কাঁপানো আওয়াজ একদিন সারাবিশ্বের নিপীড়িত মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিল মুক্তির আকাক্সক্ষায়। আজ তাও নেই। অমিত ক্ষমতার অধিকারী সোভিয়েত ইউনিয়নের দম্ভও চূর্ণ হয়েছে। বর্তমান একক মহাশক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এককেন্দ্রীপ্রবণ হয়ে বিশ্বনিয়ন্ত্রণের নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারও যবনিকাপাত হবে। মধ্যপ্রাচ্যে যে সহিংসতা এবং আগুনের লেলিহান শিখা ট্রাম্প জ্বালিয়েছেন তা নিশ্চিত যুদ্ধের আশংকা বাড়াবে। মার্কিন কংগ্রেসকে অন্ধকারে রেখে, মার্কিন জনগণকে নিরাপত্তাহীনতার অন্ধকার চাদরের মধ্যে রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠা কি সম্ভব?

আশার আলো মনের মধ্যে উঁকি দেয়, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকরা ‘আর নয় যুদ্ধ’ নো জাস্টিস, নো পিস্ , ইউএস আউট অব দ্য মিডল ইস্ট স্লোগানে বিক্ষোভ করে। বিশ্বের প্রগতিশীল মানুষেরা একদিন যুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে শান্তির জন্য আন্দোলন করেছিলেন, ‘যুদ্ধ নয় শান্তি চাই’। আমরা আবার এ রকম একটা বিশ্ব আন্দোলন দেখতে চাই। জেনারেল কাশেম সোলাইমানির জানাজায় লাখো মানুষের ঢলের যে দৃশ্য দেখেছি, তা আজ দেখতে চাই পৃথিবীর দেশে দেশে শান্তির মিছিলে, ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’ স্লোগানে। যুদ্ধবাজ শক্তির বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হওয়ার সময় এখনি।

অশান্ত দশকের সূচনালগ্নে, বিশ্বের দেশে দেশে কোটি কোটি মানুষ শান্তির পক্ষে। মানুষ সহজাতভাবে শান্তিকামী, শান্তি চায়। সাধারণ মানুষ জানে যুদ্ধ মানেই সভ্যতার বিনাশ, যুদ্ধ মানেই মানুষের অস্তিত্বের অবসান। যুদ্ধবাজ দেশের নেতাদের তেল, জল, খনিজ সম্পদ এর ভাগাভাগি মানুষ চায় না। পৃথিবীর মানুষ চায় শান্তি, শান্তির বানী। একদিন শান্তিকামী মানুষের উদ্যোগেই গড়ে উঠেছিল জাতিসংঘ। যুদ্ধবাজ নেতাদের ঘৃণ্য চক্রান্ত রুখতে আবার শান্তির পক্ষে পৃথিবীর মানুষকে রাস্তায় নামতেই হবে, আওয়াজ তুলতেই হবে। আন্তর্জাতিক অপ-রাজনীতি নিপাত যাক, যুদ্ধ, মৃত্যু, ভোগান্তি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা দূর হয়ে যাক বিশ্ব থেকে। আমরা কি ইতিহাসে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১ খ্রি.) যাকে বলা হতো ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর, যিনি কিনা একদিন ইংরেজদের বলতেন, দোকানদারের জাত। সেই ইংরেজদের হাতে ওয়াটারলুর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে খাঁচার পোষা পাখীর মত বন্দীজীবনেই প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন। এ্যডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫ খ্রি.) অসাধারণ সংগঠন শক্তি, বুদ্ধি, প্রবল ব্যক্তিত্ব থাকা সত্বেও ধ্বংসের মূল কারণ ছিল তার উচ্চাকাক্সক্ষা, অহমিকা, রক্তপিপাসু দানবের মত মানবজাতিকে ধ্বংস করার ইচ্ছা। অবশেষে নিজের মুখের মধ্যে গুলি করে তিনি আত্মহত্যা করলেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে গোটা বিশ্ব যখন হতভম্ব, দাম্ভিক বিশ্বনেতাদের দম্ভ একদিন চুর্ণ হবে-এটাই ইতিহাসের শিক্ষা, যে ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি না।

মনোয়ার হোসেন রতন কলামিস্ট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট