চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পুষ্টিসমৃদ্ধ দেশি জাতের মাছের বিলুপ্তি রোধে চাই সুপরিকল্পিত উদ্যোগ

১৫ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:০১ পূর্বাহ্ণ

দেশি মাছ ক্রমশ বিলুপ্ত ও বিপন্ন হওয়ার খবরটি নতুন নয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই দেশি মাছের বিলুপ্তি ঠেকাতে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেই। দেশি মাছ রক্ষায় কিছু বেসরকারি উদ্যোগ দেখা গেলেও এ ব্যাপারে সরকারের মৎস্য বিভাগের উদ্যোগ খুবই দুর্বল। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ দেশি মাছ। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশি মাছ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। দেশি মাছ বিলুপ্ত ও বিপন্ন হওয়ার এমন চিত্র উদ্বেগকর।
দেশি মাছের উপর পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মেনি, পাবদা কালবাউস, ফলি, সরপুঁটি ও রুইসহ ৫৪ প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। অবাধ মাছ শিকার, বেপরোয়া কীটনাশক ব্যবহার ও কারখানার বর্জ্যজনিত দূষণের মধ্য দিয়েই দেশের মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে এক সময় এদেশের নদ নদী, খাল বিলে প্রচুর দেশি মাছের সমারোহ থাকলেও এখন নেই। নদীমাতৃক দেশ হওয়ার পরও আমরা দেশি মাছগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পারিনি কিছু পরিবেশ বিনাশী পদক্ষেপ ও খামখেয়ারির কারণে। যেসব নদ-নদী এক সময় নানা জাতের দেশি মাছে পূর্ণ ছিল, এখন সেসব নদ-নদীতেই মাছ নেই। শুধু তাই নয়, এসব নদ-নদীর অনেকগুলোর চিহ্ন পর্যন্ত আজ অবশিষ্ট নেই।

দেশের সমস্ত মুক্ত জলাশয়ে অবাধে কারেন্ট জালের ব্যবহার এবং সেচের মাধ্যমে মাছ শিকার এই অবস্থার জন্যে বিশেষভাবে দায়ী। সাম্প্রতিক সময়ে মাছচাষ এবং মাছ উৎপাদনে আগ্রহ কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও দেশি মাছের চাষ ও সংরক্ষণের প্রতি কেউ আন্তরিক নয়, সবাই স্বল্প বিনিয়োগে বেশি মুনাফা লাভেই আগ্রহী। ফলে আজ দেশি মাছ নয়, হাইব্রিড জাতীয় মাছ উৎপাদনেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে সবাই। অথচ দেশি মাছই সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। প্রসঙ্গত, দেশের কেউ কেউ দেশি মাছের সুরক্ষা এবং উৎপাদনে আগ্রহী হলেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং মৎস্যবৈচিত্র্য সংরক্ষণে উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় তাদের আগ্রহেও ভাটা পড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া কোনো মাছ ধরা এবং নগরায়ন ও উন্নয়নের নামে খাল-বিল, হাওর-জলাশয় ভরাট করার ফলে দেশি মাছ আজ ক্রমশঃ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। অথচ দেশের খাল, বিল এবং জলাশয়ে পরিকল্পিত উপায়ে দেশি মাছ উৎপাদনের যথেষ্ট সুযোগ-সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশি মাছ সংরক্ষণের জন্যে ‘নো ফিশিং জোন’ বলে কোন বিশেষ এলাকার অস্তিত্ব নেই দেশে। অভয় জলাশয় এবং অভয়াশ্রমের যে গালভরা নাম শোনা যায়, কার্যত তারও বড় একটা অস্তিত্ব চোখে পড়ে না দেশি মাছের ক্ষেত্রে। আবার ফসল রক্ষার প্রয়োজনে ব্যবহৃত কীটনাশক ও কল কারখানার বর্জ্য যা নদী বা জলাশয়ের পানির সাথে মিশে মাছের ডিম পর্যন্ত বিনষ্ট করছে তা প্রতিরোধেও কোন তৎপরতা দেখা যায় না। এ অবস্থায় দেশি মাছের জীবন ও বংশ রক্ষা তথা দেশি মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা যে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে, তা বলাই বাহুল্য। তবে এই হতাশঅপূর্ণ চিত্রের বিপরীতেও বেসরকারি উদ্যোগে দেশি মাছ রক্ষার কিছু আশা জাগানিয়া খবর মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে দেখা যায়। এসব উদ্যোগকে উৎসাহিত করা গেলে এবং সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করা গেলে অবশ্যই এর ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। এজন্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল ভূমিকার বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট