চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দূর করতে হবে জাতীয় ঐকমত্যের অন্তরায়

১২ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম অধিবেশনের (শীতকালীন) ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সবার ঐকমত্য গড়ে তুলতে সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন তা সময়ের প্রেক্ষাপটে অতিব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যথার্থই বলেছেন, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে জাতিকে আরো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধিকে স্থায়ী রূপ দিতে জাতীয় ঐকমত্যের বিকল্প নেই। জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব নয়। একাত্তরের মতো ইস্পাতকঠিন দৃঢ় জাতীয় ঐক্য থাকলে দেশ সহজেই কাক্সিক্ষত লক্ষে পৌঁছতে পারবে। জাতির জনকের স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাইলে রাষ্ট্রপতির আহ্বানকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

চলতি বছরের শুরুতে সংসদ অধিবেশনে দেয়া রাষ্ট্রপতি তাঁর ১৬৩ পৃষ্ঠার ভাষণে অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, খাদ্য, কৃষি, পরিবেশ, জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। রাষ্ট্রপতির ভাষণে সরকারের গুণগান ও উন্নয়নের ফিরিস্তি থাকলেও তিনি বেশ কিছু জাতীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন। তিনি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালনের আহবান জানিয়েছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, গণতন্ত্রে বিরোধী দলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ‘ছায়া মন্ত্রিসভা’ গঠন করে সরকারের কাজে নজরদারী ও গঠনমূলক ভূমিকা রাখা হয়। বাংলাদেশেও যদি এমন ব্যবস্থা কার্যকর করা যেতো তাহলে গণতন্ত্র জনকাক্সিক্ষত পরিমাণে মজবুত ভিত্তি পেতো সন্দেহ নেই।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাবসহ নানা কারণে তা হয়নি। এতে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের পথ জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী মসৃণ হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। আবার শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাবে মহান জাতীয় সংসদও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি দেশে শক্তিশালী বিরোধীদলের প্রয়োজনীয়তা এবং সরকারিদল ও বিরোধীদল নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সকলকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের যে আহ্বান জানিয়েছেন তা প্রণিদানযোগ্য।

চলতি বছর আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ খ্রিস্টাব্দে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আমাদের দৃষ্টি ২০২১ খ্রিস্টাব্দ ছাড়িয়ে আরো সামনের দিকে, ২০৪১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা পূরণে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। সব ক্ষেত্রে গড়ে তুলতে হবে সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য। ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে দুর্নীতি-সন্ত্রাস-মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এসব ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছেন। সব ধরনের দৃর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান। এতে সফলতাও আসছে। তবে উন্নয়নকে টেকসই করতে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে এই বিষয়েই সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছেন। যদি মৌলিক বিষয়গুলোতে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়, তাহলে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হবে সন্দেহ নেই। তাই জাতীয় ঐক্যের অন্তরায়গুলো শণাক্ত করে অপনোদনে উদ্যোগ নেয়া দরকার। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই। একইসঙ্গে জাতির পিতার জীবনাদর্শ, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য তাঁর অব্যাহত সংগ্রাম, নির্ভীক, দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাময় নেতৃত্ব এবং তার গভীর দেশপ্রেম নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপনের বিস্তৃত কর্মসূচিও থাকতে হবে। এতে নতুন প্রজন্ম দেশস্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার শিক্ষা ও প্রেরণা পাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট