চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

স্বাগত ২০২০ সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনুক নববর্ষ

১ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

আলোড়ন আর তোলপাড় করা ঘটনাবহুল বিদায়ী বছর ২০১৯ এর অনেক ঘটনার রেশ নিয়েই শুরু হলো নতুন বছরের নতুন পথচলা। স্বাগত ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। নববর্ষের ঊষার আলোয় সম্পূর্ণ নতুন শক্তি ও সাহসে শুরু হোক আমাদের পথচলা। প্রতিটি নতুন বছরের উদয় হয় আমাদের মনে নতুন নতুন স্বপ্ন নিয়ে। পুরনো বছরের ব্যর্থতা, গ্লানি, হতাশাকে ঝেড়ে ফেলে নবউদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায় নববর্ষ। ২০২০ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কী রূপ নেবে, তা এ মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে আমরা সবাই আশা করব, নতুন বছরটি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের জনগণের জন্য নিয়ে আসবে স্বস্তিদায়ক ও আনন্দের সব খবর।

বিশ্বঅর্থনীতি এখন এশিয়ামুখী। বিশেষ করে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দিকে অগ্রসরমান। অর্থনীতি, সামরিকসহ নানাক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবেশী চীন ও ভারতের উত্থান বিস্ময়কর। বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সন্নিহিত কোণে অবস্থিত, তাই এই দেশের সম্ভাবনাও অনেক। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে। গণতন্ত্র ও সুশাসনে ঘাটতি থাকলেও বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বিশ্বে। বাংলাদেশকে এখন ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসাবে দেখা হচ্ছে সারাবিশ্বে। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের উন্নয়নদৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা বীরদর্পে এগিয়ে যেতে চাই সামনে, আরো সামনে। ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে শামিল হতে চাই উন্নত দেশের কাতারে। সে জন্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ খুবই সম্ভাবনাময় একটি দেশ। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টায় ত্রুটি রাখা যাবে না। সবাইকেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রেই সৃষ্টি করতে হবে সঠিক, দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব। যে স্বর্ণযুগ আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে, তার জন্য আমরা আসলে কতটা প্রস্তুত? উত্তর খুঁজতে হবে সে প্রশ্নেরও।

বস্তুত প্রতিটি বছরের সাফল্য নির্ভর করে আমাদের কর্মযজ্ঞের ওপর। আমরা যদি ভাল কাজ করি, মনেপ্রাণে পরিশ্রম করি, তবেই প্রতিটি বছরকে ব্যক্তিগতভাবে যেমন, তেমনি জাতীয়ভাবেও অবিস্মরণীয় করে রাখতে পারি। আমরা সবাই যদি রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকি, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের জীবনে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দেবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা থাকলেও বিদায়ী বছরটি মোটের ওপর শান্তিপূর্ণভাবেই কেটেছে। যে কারণেই হোক, সরকারের বাইরে থাকা রাজনীতিকরা সহিংসতার পথে হাটেনি। তবে রাজনৈতিক উত্তেজনার বীজ রয়ে গেছে। গত সোমবার এর কিছুটা আভাষ পাওয়া গেছে। তবে সব পক্ষেরই উচিত দেশ ও জনস্বার্থে সংলাপের টেবিলে বসেই সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে ব্রতী হওয়া।

অশুভশক্তির অপতৎপরতা থেমে নেই। তারা নানাভাবে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির পথকে রুদ্ধ করে দিতে চাইছে, পাঁয়তারা করছে জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতি নষ্ট করার। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। আমরা চাই উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত পথ। চাই বিগত দিনের ব্যর্থতা, হতাশা আর বঞ্চনার অবসান। চাই না, ধ্বংস, হানাহানি সংঘাত আর মৃত্যুর অসুস্থ রাজনীতি। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বই পারেন এ বিষয়ে সুখবর দিতে। আশা করি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব নতুন বছরে শুভবুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হয়ে বছরটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলবেন। চলতি বছরের মার্চ থেকে আগামি বছরের মার্চ পর্যন্ত বহুমাত্রিক আয়োজনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পালিত হবে ‘মুজিব বর্ষ’। পাশাপাশি ২০২১ খ্রিস্টাব্দে জাঁকজমকভাবে পালন করা হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ দুই কর্মসূচিতে জড়িয়ে আছে সমগ্র জাতির আবেগ-অনুভূতি। তাই সুন্দর-সুচারুভাবে যাতে কর্মসূচি দুটি সম্পন্ন হয়, একইসঙ্গে দল-মত নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ যাতে নিশ্চিত হয়, সে পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমাদের লক্ষ্য একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও সম্প্রীতিময় সমাজ। এ জন্যে নতুন বছরে মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা আর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হয়ে আমাদের নতুন শপথে দাঁড়াতে হবে। নতুন বছরের নতুন সূর্যোদয় সব অন্ধকার কেটে আমাদের নিয়ে যাক এমন এক সকালের দিকে যেখানে থাকবে না সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের কালো ছায়া, সুশাসন ও গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, অশিক্ষা, দারিদ্র্য আর অনটনের অন্ধকার। নতুন বছর হোক সবার জন্য সুসময়ের উদ্বোধন। ফিরে আসুক সব মানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধি। নতুন বছরের এই নবীন প্রভাতে আমাদের অগণিত পাঠক, লেখক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি রইল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট