চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

অভিবাসীকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ

কয়েকবছর ধরেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে অভিবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। বর্তমানে রেমিটেন্স ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরে রেমিটেন্স ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী। বর্তমানে অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে রেমিটেন্সই সবচেয়ে ভালো অবস্থানে। বিদেশে দক্ষ জনশক্তি পাঠানো, অভিবাসীদের নিরাপত্তা এবং দালালচক্রের দৌরাত্ম্য কমানোর বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া গেলে এ খাত আরো শক্তিশালী হবে সন্দেহ নেই।
টেকসই উন্নয়ন ২০৩০ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অভিবাসন খাত সরাসরি জড়িত। বিশ্ব অভিবাসন রিপোর্ট ২০১৯ অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে অভিবাসী প্রায় ২৭ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে বর্তমান বিশ্বের ১৭৩ দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ২০ লাখের কিছু বেশি মানুষ অভিবাসী হিসেবে কর্মরত আছেন। বিশ্বে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছরই রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ ১৬.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাওয়া গেছে, যা আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৯.৬১ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ২১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রতিবছরই বাড়ছে এ খাতের ভূমিকা। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এক কোটি বাংলাদেশি সব সময়ই বিদেশে কর্মরত থাকছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন উপায়ে অনেকেই আবার ওই সব দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে নিয়েছেন। অভিবাসীকর্মীরা তাঁদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন। অভিবাসীকর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে পারলে রেমিটেন্স আয় আরও বাড়বে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিদেশ যায় কিন্তু সবচেয়ে কম আয় করে। এর মূল কারণ হচ্ছে, অদক্ষতা। তাই প্রবাসী আয় বাড়াতে দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে হবে। আশার কথা হচ্ছে, বাস্তবতা উপলব্ধিতে সরকার এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে ফল নির্ভর করছে গৃহীত কর্মসূচিগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের উপর। মনে রাখা দরকার, বর্তমান সময়টা হচ্ছে প্রতিযোগিতার। একমাত্র দক্ষতা ও যোগ্যতাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার উপায়। যেসব দেশ সময়ের চাহিদানুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব দেশই রেমিটেন্স আয়ে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়, তাহলে দ্রুত রেমিটেন্স আয় বাড়বে।
আমাদের অভিবাসীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় যায়। কিন্তু পশ্চিমাবিশ^সহ পৃথিবীর নানা দেশে দক্ষ শ্রমিকের প্রচুর চাহিদা আছে। দক্ষতার অভাবসহ নানা কারণে সেসব দেশে আমাদের অভবাসীকর্মীর সংখ্যা নগন্য। অথচ ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ ক্রমশ এসব দেশের শ্রমবাজার দখলে নিচ্ছে। বাংলাদেশকেও এ ব্যাপারে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোয় মানুষ যাতে কম যায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আবার প্রবাসীরা কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠালেও তারা যথাযোগ্য সম্মান পান না। এ বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে প্রবাসীদের মর্যাদা। নিশ্চিত করতে হবে জনশক্তি রফতানিকারকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও। কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফেরত আসা শ্রমিকদের পুনর্বাসনেও নিতে হবে যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ। প্রতারণা, লাঞ্ছনা-বঞ্চনার খবরগুলো জনগণের সামনে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সচেতন হয়। একইসঙ্গে অভিবাসীকর্মীদের জন্য জীবনবীমা প্রবর্তন ও ব্যাংকিং খাতে নানা সুবিধা প্রদান, তাদের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, অভিবাসন মেলার আয়োজন, জাতিসংঘ কনভেনশনের অনুসরণে যাতে অভিবাসীকর্মীদের অধিকার সংরক্ষিত থাকে সে জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ব্যবস্থা করাসহ অভিবাসীবান্ধব উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে অভিবাসীকর্মীরা প্রবাসে এবং স্বদেশের উন্নয়নে অতুলনীয় অবদান রেখে চলেছেন। তাঁদের যথাযথ সম্মানপ্রাপ্তি, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বিধান ও সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা বিধানও সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট