চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

মেরুদ-ের আঘাতে করণীয়

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

মেরুদন্ড গড়ে ওঠে চৌত্রিশটা টুকরো টুকরো হাড় উপরে-নীচে পর পর সংযুক্ত হয়েই। এ টুকরো হাড়ের নাম কশেরু ঠঊজঞঊইজঅ বা গ্রীবা অঞ্চলে থাকে সাতটা কশেরু, বক্ষ অঞ্চলে বারোটা এবং কোমরে থাকে পাঁচটা কশেরু। তারও নীচের পাঁচটা কশেরু একত্রে জুড়ে গিয়ে তৈরী করে ত্রিকাস্থি বা ঝঅঈজটগ। স্যাক্রাম কথাটি আসছে ল্যাটিন স্যাকার থেকে যার অর্থ পবিত্র। শবদাহের আগুনেও এ হাড়টা পুড়তো না বলে প্রাচীন রোমনরা একে বলতো পবিত্র অস্থি বা স্যাক্রাম। ত্রিকাস্থির আরো নীচে ৫টা ছোট ছোট কশেরু একত্রে জুড়ে তৈরী হয় অনুত্রিকাস্থি বা ঈঙঈঈণঢ। হাজার হাজার বিবর্তনের ধারায় মানুষ খুইয়েছে তার লেজ কিন্তু হাড়গুলো থেকে গেছে দেহে। অনুত্রিকাস্থি হলো মানুষের পূর্ব পুরুষের লেজের অবশিষ্টাংশ।

অর্থাৎ মেরুদন্ড শুরু হয় ঘাড়ের প্রথম কশেরু থেকে এবং শেষ হয় অনুত্রিকাস্থিতে। কশেরুস্তম্ভের মাঝখানের প্রণালীটি হলো মেরুনালী বা ঝচওঘঅখ ঈঅঘঅখ মেরুনালীর কিস্তার ঘাড় থেকে ত্রিকাস্তি পর্যন্ত। এ মেরুনালীতে থাকে সুষুষ্মাকা- এটা আরো ছোট। সুষুষ্মাকা- প্রথম গ্রীবা কশেরুতে শুরু হয়ে শেষ হয় ১ম কটি কশেরুর নি¤œ প্রান্তে। তারও নীচে শুধুমাত্র ¯œায়ুমূল থাকে সুষষ্মাকা- থাকে না। সুষষ্মাকা-ে থাকে ¯œায়ুকোষ এবং হরেক রকমের ¯œায়ুতন্ত্র।

এরাই মস্তিষ্কের নির্দেশকে পৌঁছে দেয় দেহের বিভিন্ন প্রান্তে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের খবরা খবরও মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় এদের মাধ্যমেই। এটা যেন টেলিফোনের কেবল শত সহ¯্র বার্তা অনবরত আসছে আর যাচ্ছে বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। কেবল ফল্ট হলে টেলিফোন নীচের অচল হয়ে পড়ে সুষুষ্মাচোটেও আঘাতের নীচের দেহাংশটা অসাড় হয়ে যায়। আঘাতের নীচের অংশের কোন অনুভূতিই মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারেন। মস্তিষ্কের নির্দেশ ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেতে পারে না, ফলে সৃষ্টি হয় পক্ষাঘাতের। আমাদের পাঠক হয়ত ভাববেন এনাটমী বড় নিরস। কি হবে এতসব জেনে? কিন্তু শুনে আশ্চর্য হবেন, বোল্তার এনাটমী জ্ঞান অত্যন্ত চমৎকার। বোলতা মাকড়সাকে কখনই মেরে ফেলে না কিন্তু হুলটা এমন জায়গায় ফোটয়ে যাতে মাকড়সাটা চলনশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এটা জেনে রাখা ভালো যে, গ্রীবা অঞ্চলের, বক্ষদেশের এবং কোমরের ১ম কশেরু পর্যন্ত মেরুদন্ডের যে কোনো গুরুতর চোটে সুষুষ্মাকা- জখম হতে পারে।

তার নিচের মেরুচোটে শুধুমাত্র ¯œায়ুমূলগুলিই জখম হয়। অর্থাৎ কোমরের উপরের অংশের মেরুদ-ের চোটই সবচেয়ে মারাত্মক কেন না তাতে সুষুষ্মাকা- এবং ¯œায়ুমূল দুটোই জখম হতে পারে। তাছাড়া মলমূত্র ত্যাগের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটাও থাকে এই অঞ্চলেই। মেরুদন্ডের সবচেয়ে সচল অংশ হল গ্রীবাদেশ এবং কোমর অঞ্চল।

ফলে মেরুদন্ডের আঘাতও সবচেয়ে বেশী দেখা যায় গ্রীবা ও কোমর অঞ্চলে। মেরুদন্ডে আঘাত লাগলেই যে সুষুষ্মাকা-ে জখম হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

তবে গুরুতর ধরনের আঘাতে মেরুদন্ড ভাঙ্গার সঙ্গে সঙ্গে সুষুষ্মাকা- ও জখম হয়।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ঔষুধের সূক্ষ্মতম মাত্রা প্রয়োগটা বিধিবন্ধ বিধান।

কিন্তু যেখানে আঘাত জনিত বিষয়ে সূত্রপাত সেখানে সুনির্বাচিত ওষুধের স্থুলমাত্রা প্রয়োগের বিধান ফ্রেডারিক স্যামুয়েল হানেমান বিশেষভাবে নির্দেশ করেছেন। আঘাতে যে সমস্ত ওষুধ বহুল ব্যবহৃত হয়। সেগুলো সংক্ষেপে নি¤েœ বর্ণিত হলো। ১) আর্নিকা, হাইপেরিকাম, রুটা, নেট্রাম, সালফ, সিম্ফাইটাম, লিডাম, কোনিয়াম ও আর্টিমিসিয়া ভাল্গারিস উল্লেখযোগ্য। তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খেতে নেই। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ
সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট