চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পরিবহন সংকট নিরসনে চাই স্মার্ট পরিকল্পনা

সিয়াম আহমেদ

২৯ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:১১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে পরিবহন ব্যবস্থার সংকট কয়েক দশকের। পরিবহন ব্যাবস্থার এই অরাজকতা ও ড্রাইভারদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলানোর দরুন এ পর্যন্ত সড়াকদুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান-সংগঠন, শিক্ষার্থী ও জনগণের একাধিক আন্দোলন ও প্রচেষ্টার ফলাফল সরূপ সরকার এ খাতে শৃঙ্খলা আনয়নে নজর দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বর ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাশ হয়।

পাশকৃত আইনটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে সরকার তেরো মাস সময় নেয়। অবশেষে এবছর নভেম্বরে কার্যকর করা হয় নতুন আইন। আইন কার্যকরের কয়েক সপ্তাহ না যেতেই বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চালক সংঘঠন থেকে সারাদেশে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। পরিবহন খাতে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ফিরিয়ে আনা সরকারের নিকট এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিআরটিএ’র তালিকায় কাভার্ড ভ্যান নামের কোন যানবাহন নেই। এটি একটি রূপান্তরিত যান। যা আইনত নিষিদ্ধ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২২ হাজারের বেশি কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। যেগুলো গত এক যুগে ধীরে ধীরে রাস্তায় নেমেছে। এখন প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, সরকার কেন শুরু থেকেই এ ধরণের অননুমোদিত যানবাহনের বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নেয়নি? আইনের সঠিক ও জোড়ালো প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টি ধাপে ধাপে হওয়া জরুরী।

রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব করণে সময়ের সাথে সাথে গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি রাস্তাঘাটের পরিমাণ।

পর্যাপ্ত বাস ও ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় গাড়িগুলোকে রাস্তাতেই পার্ক করে রাখা হচ্ছে। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, পরিবহন খাতের আধুনিকায়ন, স্মার্ট ও দীর্ঘ মেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও সময়োপযোগী আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমেই এই পরিবহন সংকট থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। বর্তমানে পরিবহন খাতে সৃষ্ট এই সংকট সমাধানে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিকল্প নেই। সে লক্ষ্য এককেন্দ্রিক পরিবহনব্যাবস্থা থেকে সরে আসতে হবে সরকারকে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪২ লাখের উপর যানবাহন রয়েছে। এই বিশালসংখ্যক যানবাহনের নিবন্ধন, ফিটনেস পরীক্ষা ও তদাররকি ইত্যাদি কার্যক্রম সরকারের একার পক্ষে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এসমস্যা সমাধানে পরিবহনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের কোন বিকল্প নেই। পরিবহনগুলোকে বিভিন্ন বেসরকারী অপারেটরের (কোম্পানির) আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি অপারেটরগুলোর জবাবদিহিতা ও তদারকি নিশ্চিত করার জন্য রেগুলেটরি কমিশন গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের টেলিকম ও বেসরকারি বিমান পরিবহন খাতকে উদাহরণ হিসেবে নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের পরিবহন সংকটের মূলে রয়েছে পরিকল্পনা প্রণয়নের অদক্ষতা। যারা গণপরিবহনগুলোর রুট পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন তারা একই রুটে ১০-১২টি কোম্পানির বাস অনুমোদন করে থাকেন। এর ফলে চালকদের মাঝে একধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। ঘটে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। এরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণ রুট বিন্যাস পদ্ধতির পরিবর্তে ফ্রেঞ্চাইজ ভিত্তিক স্মার্ট রুট বিন্যাস করা প্রয়োজন। এতে একটি রুটে কেবল একটি অপারেটর বা কোম্পানির বাসই সেবা দিবে। এতে করে যেমন অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে, তেমনি সাধারণ মানুষ সুশৃঙ্খল ও স্বনিয়ন্ত্রিত হতে শিখবে। ফলে অরাজকতা অনেকাংশেই কমে যাবে। এছাড়া পরিবহন খাত ও তদসংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠান ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলতেও রয়েছে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব। সরকারকে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি এসব বিষয়েও মনোযোগ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিবহন খাতের এ সংকট বহুদিনের। রাতারাতি এর সমাধান সম্ভব নয়। এই সংকট সৃষ্টি হতে যেমন অনেকদিন লেগেছে তেমনি সমাধান করতেও সময়ের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারকে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য বর্তমান সময়ে উদ্ভূত সংকট মোকাবিলা ও ভবিষ্যতের টেকসই সমাধানের দিকে নজর দিতে হবে। আজ থেকে ৫০ বা ১০০ বছর পর দেশ কেমন হবে, কী পরিমাণ মানুষ বসবাস করবে এবং তাদের সেবা প্রদানে পরিবহন ব্যাবস্থা কিরূপ হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে টেকসই উন্নয়নের লক্ষে বিবিধ বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট