চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে ভোগ্যপণ্যের দামে হঠাৎ উল্লম্ফন

২০ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:১৫ পূর্বাহ্ণ

পেঁয়াজের পর মুনাফাশিকারি সিন্ডিকেটগুলোর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে চালের বাজারে। তাদের কারসাজিতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কোনো কারণ ছাড়াই সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। চালের মূল্য বৃদ্ধির কোনো কারণ না মিললেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দোষ চাপাচ্ছে মিল মালিকদের ঘাড়ে। তাদের অভিযোগ, মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। কয়েকটি জেলায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অতি মুনাফার সুযোগ নিতে মিল মালিকরা চালের মূল্যবৃদ্ধি করছে। মাসকয়েক ধরে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। এখন তার সাথে যোগ হয়েছে চালের বাজারের অস্থিরতা। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পেঁয়াজ, শাক-সবজি, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যে বেশি দাম দেয়ার পাশাপাশি চড়া দামে চাল কেনার কারণে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো বাড়তি চাপের শিকার হবে। চালের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের বহুমাত্রিক পদক্ষেপের পরও কাক্সিক্ষত ফল না আসা দুঃখজনক। সন্দেহ নেই, এতে স্বল্প আয়ের মানুষদের দুর্ভোগের পরিধি আরো বাড়বে।

দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে বাজারভীতি দেখা দিয়েছে। মাসের বাজার খরচ মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন নি¤œআয়ের মানুষজন। কৃষিবিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে ৮টি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের গড়ে দাম বেড়েছে ১০৭ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৭১ শতাংশ দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। তার পরের অবস্থানে রয়েছে রসুন। এই পণ্যের দাম বেড়েছে ১২১ শতাংশ। এছাড়া আদার দাম বেড়েছে ৬৬ শতাংশ, বেগুন ৩৮ শতাংশ, আটা ২৪ শতাংশ, চিনি ১৮ শতাংশ, ডিম ১৩ শতাংশ এবং গুঁড়ো দুধের দাম ৮ শতাংশ বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি চালে ৭ থেকে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, আমাদের দেশের অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সারাবছর কিছু না কিছু পণ্যের সংকট সৃষ্টি করে। ইচ্ছাকৃত এই সংকটের কারণে পণ্যের দাম দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত দাম বৃদ্ধি বা মজুদ করলেও প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই। প্রসঙ্গত, কয়েক বছর ধরে দেশে ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে, চালের মজুদও পর্যাপ্ত। কিন্তু তারপরও দেশে বাঙালির সবচেয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য চালের দাম বেড়েই চলেছে। মুনাফাশিকারিদের অপতৎপরতায় বার বার লাগামহীন হয়ে পড়ছে চালের বাজার।

এ কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, চালের বাজারে প্রশাসনের কোন তদারকি না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদেরকেই। চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে দাম বেশি তাই পাইকারি এবং খুচরাবাজারে সে প্রভাব পড়ছে। আড়তদাররা মিল-মালিকদের দায়ী করছেন। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও বলছে, কতিপয় মিল-মালিকের কারসাজিতে বাজারে চালের দাম বাড়ছে। বাজার বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, আগামি মৌসুমেও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী রাখতে চায় অসাধু মিল-মালিকরা। সে জন্যে এখন অকারণে দাম বাড়াচ্ছে। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্লিপ্ততার সুযোগে তারা এ ক্ষেত্রে দুঃসাহস দেখাচ্ছে, বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কিন্তু চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠার ফলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।

চাল এ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। সংগত কারণে এর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ বয়ে আনে। বিষয়টি উপলব্ধি করে সরকারও। সে জন্যেই সরকার কৃষির উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। চালের দাম সহনীয় করতে শুল্ক কমানো সহ বিভিন্ন উদ্যোগও আছে। কিন্তু যথাযথ নজরদারির অভাবে সরকারের এসব উদ্যোগের ফল জনগণ পাচ্ছে না। টাউট ও মুনাফাখোররাই নিয়ে নিচ্ছে। এ অবস্থায় চালের বাজার সহনীয় করতে কার্যকর কর্মপন্থা অবলম্বন জরুরি। অসৎ ব্যবসায়ীরা জনগণকে পুঁজি করে অবৈধ মুনাফা করবে, তা কিছুতেই হতে পারে না। এ অবস্থায় চালের বাজার তদারকিতে মাঠপর্যায়ে বাড়াতে হবে কঠোর নজরদারি। পাশাপাশি টিসিবির ডিলারদের কার্যক্রমও জোরদার করতে হবে। নিয়মিত করা দরকার খোলা বাজারে চালবিক্রি, ওএমএস কার্যক্রম। একই সঙ্গে নিশ্চিত করা প্রয়োজন সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচিগুলোর মাঠপর্যায়ে কঠোর নজরদারি। অতি মুনাফালোভীচক্রের কারণে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনে দুরবস্থা নেমে আসবে, তা কারো কাম্য হতে পারে না। যেভাবেই হোক, জনগণকে এই জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট