চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সন্তানের সমস্যা ও অভিভাবকের কর্তব্য

জোবাইদা আখতার চৌধুরী

২৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

আমরা এবার অন্যের দিকে আঙুল না উঠিয়ে সমালোচনার তীরটা নিজেদের দিকে একটু দিই।

আমরা প্রতিনিয়ত সরকার, প্রশাসন শিক্ষক সবাইকে দোষারোপ করে যাচ্ছি। তাহলে আমাদের অভিভাবকদের কোনও দায় নেই ? একজন ব্রিলিয়েন্ট ছাত্র হুট করেই সন্ত্রাসী কিভাবে বনে যায়? পরিবার থেকে নৈতিক মূল্যবোধ তৈরী হয়ে আসলে, সেই সন্তান কখনো বিপথে যেতে পারে না এটা আমার বিশ্বাস। সন্তান যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, তখন তাদের সাথে আমরা অভিভাবকরা কতটা পূর্ণাঙ্গ বাবা মা হতে পারি? আগেকার বাবা-মায়েদের অনেক সন্তান থাকতো। আলাদা করে কারো দিকে বেশী নজর দেবার সময় তাদের ছিল না। বড়ভাই-বোনদের আদরে শাসনে বেড়ে ওঠে তারা। কিন্তু বর্তমানে সবার একটা কী দুটো সন্তান। অতি আহ্লাদে তারা বড় হয়। এই যে বেড়ে ওঠার সময় বাবা মায়ের কতটা সচেতন থাকতে হবে, সেটা নিয়ে আমরা কতটা ভাবি? সন্তান বেড়ে ওঠার সময় দেখা যায়, হয় বাবা না হয় মায়ের কিছু অন্যায় প্রশ্রয় আশ্রয় থাকে, যেটা আমাদের চোখে পড়ে না বা বাবা-মা সেটাকে অন্যায় মনে করেন না। সন্তানের ছোটখাটো অন্যায় পরিবারের কাছ থেকে লুকানো হয় পরম মমতায়। কিন্তু আমরা তখন একটুও ভাবি না এই ছোট অপরাধ লুকাতে যেয়ে তাকে আমরা বড় অপরাধী করে তুলছি। সেই তখন থেকেই একজন শিশুর নৈতিক অবক্ষয় ঘটতে থাকে।

মাঝেমাঝে বাবা-মায়েরা নিজের অজান্তেই একটা মস্ত বড় ভুল করে থাকি। যেমন বাচ্চাকে ঠা-া রাখার জন্য তার হাতে ডিভাইস তুলে দিই। এটা যে পরবর্তীতে কাল হয় এটাই আমদের বোধদয় হয় না। আহ্ কী বাহাদুরি…. আমার ছেলে এই বয়সে এই পারে ঐ পারে। আমাকে এটা ডাউন লোড করে দিয়েছে, ওটা সেট করে দিয়েছে। আপনি নিজেই জানেন না, আপনার অজান্তে আপনি তার হাতে মারণাস্ত্র তুলে দিয়েছেন। এটাও এক ধরনের নেশা। এভাবেই শুরু হয় একের পর এক নেশা। আজ এটা চাই কাল ওটা চাই। এভাবে তার চাহিদা এবং জেদ বাড়তে থাকে। আপনি তাকে খেলতে পাঠান। কিন্তু আমরা সেটা না করে তার হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছি। থাক বাবা ছেলে তো ঘরেই আছে। গর্বের সাথে বলি আমার ছেলেটা একদম বাহিরে ঘুরাঘুরি করে না। সারাদিন কম্পিউটার না হয় পড়ার টেবিলে। বেশি হলে বাবার বা আমার মোবাইল নিয়ে একটু খেলে। আসলে সে ঘরে থেকে ওঘরে নেই। মুহূর্তে দুনিয়া ঘুরে আসছে। আপনি এখানেই তার শৈশবকে গলাটিপে মেরে ফেললেন।

আমি আরেকটা ব্যাপার ইদানিং খেয়াল করেছি, এখনকার ছেলেমেয়েদের আদব-কায়দার বড় অভাব। দিনেদিনে ওদের আচার-আচরণ বদলে যাচ্ছে। বড়দের দেখলে সালাম প্রণাম জানাচ্ছে না। ও ভাবছে ফ্যাশন, আসলে সেটা যে বেয়াদবি, এটাই সে বুঝতে পারছে না। এভাবে সে বড়দের অশ্রদ্ধা করতে শেখে। সন্তানের স্বভাবের দিকে লক্ষ্য করুন। শুধু অন্যকে নীতিকথা ঝাড়বেন, সেটা ঠিকনা। তাদের পোষাক-আশাক, সময়জ্ঞানের দিকে নজর দিন। ক’টায় বের হয় ক’টায় ঘরে ফিরছে।
আপনাকে দূরে কোথাও যেতে হবে না। খিলগাঁও মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় যাবেন। সেখানকার ছেলেমেয়েদের পোষাক-আষাক এবং সময়ের অবস্থান দেখলেই বোঝা যায় আজকালকার বাবা-মায়েরা সন্তানের প্রতি কতটা সচেতন। খোলামেলা পোষাক পড়া বা শরীর দেখালেই কী আপনার সন্তান স্মার্ট ? কখনই না। বরং বন্ধ করে ঘরের ভেতর থাকবে কেন ? এসি’র জন্য ? ভেজানো থাকবে, লক করতে দিবেন না। আপনি হুটহাট তার রুমে ঢুকে মনিটর করুন সে আসলে কী করছে। ঠিকভাবে ক্লাস করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিলেই দায়িত্ব পালন হয়না। আর সব দায়িত্বও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের না।

আপনার অনেক ধন সম্পদ আছে, সেটা সন্তানকে জানাতে হবে কেন ? বা শোঅফ করতে হবে কেন ? সেটাও আপনার সবচেয়ে বড় ভুল পদক্ষেপ। তাকে সঠিক এবং সৎভাবে বড় হওয়ার পথ তাকেই খুঁজতে দিন। আপনারা যারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, একটু খেয়াল করে দেখুনতো আপনাদের বাবা-মা সব চাহিদা পূরণ করে দিয়েছিল? অনেকের হয়তো অভিমান থাকতে পারে আমার বাবাতো অন্য বাবাদের মতো এতো সুযোগ-সুবিধা দেয়নি, এতো এতো স্যার প্রাইভেট দেয়নি, আমার পেছনে কারিকারি টাকা খরচ করেনি। আমার বাবার এই এই….. সুযোগ ছিল, কিন্তু উনি আমার জন্য তা করেন নি।

আরে ভাই আপনার বাবা যদি আপনার না চাইতে সব চাহিদা পূরণ করে দিত, আজ আপনি এই চেয়ারে বসতে পারতেন? না পারতেন না। হয়তো বাপের সম্পত্তি বেঁচে মুদি দোকানের মালিক হতেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট