চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বীভৎস কায়দায় শিশুহত্যা শিশুনির্যাতন বন্ধে চাই সামাজিক আন্দোলন

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

২১ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০৩ পূর্বাহ্ণ

অবশ্যই আমি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে পয়দা করেছি, তারপর (অকৃতজ্ঞতার কারণে) আমি তাকে সর্বনি¤œস্তরে নিক্ষেপ করব’- সূরা আত্ তীন-আয়াত ৫, ৬। এই বিশাল আকাশ-জমিনের একচ্ছত্র অধিপতি মহান রাব্বুল আ’লামিন সৃষ্টির সেরা জীব মানুষদের সম্পর্কে পবিত্র কালামে পাকে এভাবেই ঘোষণা করেছেন। সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও মানুষ কত নীচে নামতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ কয়েকদিন আগে আমাদের দেশেই সংঘটিত হয়েছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামে। মাত্র ৫ বছর বয়সী শিশু তুহিন মিয়াকে তার বাবা, চাচা ও এক চাচাত ভাই মিলে বীভৎস কায়দায় হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্যে। শুধু হত্যা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, লাশটির বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা হয় এবং লাশের পেটে দু’টি ছুরি ঢুকিয়ে কদমগাছের ডালে ঝুলে রাখা হয়। বর্বরতার এখানেই শেষ নয়-তার দু’টি কানও কেটে ফেলা হয়েছে।

নির্মম হত্যাকান্ড! পাশবিক কায়দায় নির্যাতন করে হত্যা করা এ শিশুটি কাল কেয়ামতের ময়দানে তার বাবা-চাচার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিবে। ইতোমধ্যেই হত্যাকান্ডে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে হয়তো আসামীরা জামিন পেয়ে যাবে। কিন্তু আরশে আজিম থেকে আমার আল্লাহ তায়ালা সবকিছু দেখছেন এবং শুনছেন। হাশরের ময়দানে কঠোর শাস্তি থেকে তাদের মুক্তি কোনদিন মিলবে না। দুনিয়ার বিচারকদের প্রভাবিত করে হয়তো তারা বেকসুর খালাস পেতে পারে। কিন্তু শেষ বিচারের দিন তাদেরকে কে রক্ষা করবে? ‘আল্লাহ তায়ালা কি সব বিচারকের (তুলনায়) শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?- সূরা আত্ তীন- আয়াত ৮। যে বাবার কোলে সন্তানদের আশ্রয়স্থল সবচে’ নিরাপদ সে বাবার কোলেই এ নিরপরাধ, নিরীহ ক্ষুদে মানুষ মাসুম বাচ্চাটিকে নির্মম কায়দায় তার জন্মদাতা পিতা হত্যা করেছে-এটা ভাবতেই যেন গা শিউরে উঠে, পুরো দেশ কাঁদছে-কান্নার সাগরে ভেসে যায় বাংলার জমিন। আমরাও গুমরে গুমরে কাঁদছি।

কোমল হৃদয়ের অধিকারী পিতা-মাতারা এ ঘটনা শুনে ও গণমাধ্যমে দেখে স্তম্ভিত হবেন ভীষণভাবে-এটাই দিবালোকের মতন সত্য আর অভিযুক্ত পিতাকে ধিক্কার দিতে থাকবেন অবিরত। কোন পশু একটি পশুকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করে না, লাশ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে না-যা মানুষদের পক্ষে সম্ভব। শুধু শিশু তুহিন মিয়ার ঘটনা নয়, এ ধরনের ঘটনা আবহমান কাল থেকেই হয়ে আসছে এ বাংলাদেশেই।

লাশ টুকরো টুকরো করে বস্তাবন্দি করা, মস্তক বিচ্ছিন্ন করে শরীরের নীচের অংশ সাগরে ফেলে দেয়া-এটাও মানুষদের পক্ষে সম্ভব। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষদেরকে যেমনি উচ্চকিত মর্যাদা প্রদান করেছেন, অবাধ্যতার জন্য তেমনি অধিকতর নি¤œস্তরেও নামিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র বাইতুল্লাহ্ শরীফ তাওয়াফ করার সময় বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) পবিত্র কাবা ঘরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘এ কাবা ঘর আমি জানি তোমার মর্যাদা অনেক বেশি, কিন্তু একজন মুমিনের মর্যাদা তোমার চেয়েও অনেক বেশি’-সুবহানাল্লাহ্। পবিত্র শ’বে মেরাজ এর রাতে হযরত সাইয়েদ্যানা জিবরীল (আ) সিদ্রাতুল মুনতাহা পর্যন্ত আমার রাসুল (স.) কে নিয়ে গেলেন বোরাক-এ আরোহণ করে। কিন্তু এর উপরে যেতে হযরত জিবরীল আমিন অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন মহান রাব্বুল আলামিন এর কুদরতের উছিলায় রফ্ রফ্ নামক বাহনে আরোহণ করে আমার রাসূল (স.) আরশে আজিম পৌঁছান অর্থাৎ মানুষের মর্যাদা এত বেশি যে, ফেরেশতাদেরও হার মানায়। আল্লাহ্ তায়ালা মানুষদেরকে সুন্দর আকৃতি ও সুদর্শন করে সৃষ্টি করার পরেও তাদের স্থান হবে জাহান্নাম যদি তারা আল্লাহকে অস্বীকার করে এবং তার প্রিয় হাবীব বিশ্বনবীকে মিথ্যাবাদী মনে করে। আমাদের দেশে বিশেষ করে জমি সংক্রান্ত বিরোধ সবচেয়ে বেশি। আপন ভাই, আপন চাচা, আপন মামা সহ ঘনিষ্টজন এ ধরনের বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি রক্তপাত, খুনাখুনি পর্যন্ত হয়ে থাকে। শিশু তুহিন মিয়া এ ধরনের ঘটনার ভিক্টিম হিসেবে পৃথিবী থেকে চিরতরে ওপারের দেশে চলে গেছে। কেয়ামতের ছোট ছোট আলামতগুলোর কেন যেন এখন দেখা যাচ্ছে। সৃষ্টির সেরা মানুষ পশুর চেয়েও নির্মম হয়ে অপ্রত্যাশিত ও বর্বর ঘটনা ঘটাবে। পৃথিবীতে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে, মূর্খ লোকেরা দেশ শাসন করবে, অযোগ্য ও অথর্ব নেতা-নেত্রীরা ক্ষমতার মসনদ আঁকড়িয়ে ধরে রাখবে। অতি উঁচু উঁচু ভবন নির্মিত হবে। তাপমাত্রার তারতম্য অর্থাৎ বৃষ্টির সময় প্রচন্ড গরম আর গরমের সময় প্রচন্ড বৃষ্টি।

‘কাফেররা কি একথা মনে করে নিয়েছে, তারা আমার বদলে আমারই (কতিপয়) গোলামকে অভিভাবক বানিয়ে নেবে, (আর আমি এ ব্যাপারে তাদের কোন জিজ্ঞেসাবাদই করব না) আমি তো জাহান্নামকে কাফেরদের মেহমানদারীর জন্য সাজিয়ে রেখেছি’- সূরা আল কাহ্ফ আয়াত- ১০২। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘(সে’দিনের কথা ভাব) যেদিন আমি প্রতিটি উম্মত থেকে একেকটি দলকে এনে জড়ো করব, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, অর্থাৎ তাদের বিভিন্ন দলে উপদলে ভাগ করে দেয়া হবে’- সূরা আন-নামল আয়াত- ৮৩। বিশ্ব নবী কেয়ামতের আগে ফেতনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘শীঘ্রই তোমরা আমার পরে স্বজনপ্রীতি এবং এমন সব কাজ প্রত্যেকে করবে, যা তোমরা পছন্দ করবে না। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (স.) তখন আমাদেরকে কি করতে বলছেন? তিনি বললেন, তোমরা অপরের অধিকার আদায় করে দিবে এবং স্বীয় অধিকার আল্লাহর নিকট কামনা করবে।’ একদিন নবী করিম নিদ্রা হতে জাগ্রত হলেন। তাঁর চেহারা লালবর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি বললেন, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ অদূর ভবিষ্যতে সংঘটিত দুর্যোগে আরবরা ধ্বংস হবে। আজ ইয়াজুয মাজুযের প্রাচীর এতটুকু পরিমাণ খুলে গিয়েছে। সুফিয়ান (রাবী) নিরানব্বই অথবা একশ’ ইঙ্গিতের ঘিরা (ইঙ্গিতের এক বিশেষ পরিমাপ) করলেন। বলা হল, আমাদের মধ্যে সৎলোক থাকা অবস্থায়ও কি আমরা ধ্বংস হব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপাচার (ব্যভিচার) বেশি হবে। ফেতনা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল বলেছেন, ‘সময় সংকীর্ণ হয় যাবে, কাজ কমে যাবে, বিপদাপদ বৃদ্ধি পাবে, হারজ বেড়ে যাবে। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন হারজ কি হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, হত্যা, হত্যা।

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক সভাপতি, রাউজান ক্লাবজুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট