চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

এমন মর্মান্তিক চিত্র আর কত দেখতে হবে? গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত্যু

১৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১৫ পূর্বাহ্ণ

কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যের এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ার কারণে যানবাহনে ইদানিং গ্যাসের ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই অতি দাহ্য বায়বীয় পদার্থটি ব্যবহারে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করেন না। পরিণামে দুর্ঘটনার সংখ্যাও ক্রমে বেড়ে চলেছে। আর এসব দুর্ঘটনার মূলে আছে কোনো না কোনো পর্যায়ে গাফিলতি ও অসচেতনতা। এ অবস্থায় গ্যাসের অনিরাপদ ব্যবহার ক্রমেই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজারের উত্তর পাশে বাঁশখালীগামী একটি এম্বুলেন্সের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন আরো তিনজন। এভাবে প্রতিদিনই যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এমন চিত্র উদ্বেগকর। গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপদ ব্যবহারে কঠোরতা ও ব্যবহারকারীদের সচেতনতা থাকলে এমন অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা দেখতে হতো না নিশ্চয়ই।

দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার বিকালে বাঁশখালীগামী রোগীবাহী এম্বুলেন্সটি আনোয়ারায় পিএবি সড়কে শশী ক্লাবের সামনে পৌঁছলে চলন্ত অবস্থায় গ্যাস সলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় সড়কের উপরে গাড়িটি ঘুরতে থাকে। রাস্তা থেকে উপরে উঠে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এসময় বাজারের লোকজন দৌড়ে ঘটনাস্থলে যান। তিনজনের মৃত্যুর পাশাপাশি আরো তিনজন আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে। আহতের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশংকাজনক। যানবাহনে অনিরাপদ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডারের বিপুল ব্যবহার সড়ক-মহাসড়কের জন্য একটি অশনি সঙ্কেত বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, যানবাহনে যে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে তার ৭০ ভাগ রি-টেস্টিংয়ের আওতার বাইরে থাকছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডার হরহামেশায় ব্যবহার হচ্ছে। নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করায় একেকটি গাড়ি যেন একেকটি বোমা বহন করে চলেছে। আইন অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর পর যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের মান পরীক্ষা করা বা রি-টেস্টিং করা বাধ্যতামূলক। রি-টেস্টিংয়ের মান ভাল পাওয়া গেলে সেটি আরও তিন বছর অতিরিক্ত ব্যবহারের বিধান রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ বছর ব্যবহারের পরও সিলিন্ডর রি-টেস্টিং করা হচ্ছে না। পরিণামে এই অনিরাপদ সিলিন্ডার থেকে প্রতিনিয়তই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। হচ্ছে প্রাণ ও সম্পদহানি। যানবাহনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আরও ঝুঁকি রয়েছে, ভাঙ্গাচোরা সড়ক-মহাসড়ক ও অপ্রয়োজনীয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্পিড ব্রেকারের কারণে। ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ও স্পিড ব্রেকারের ধাক্কা লেগে যানবাহনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ফলে মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। বিভিন্ন গবেষণারিপোর্টও বলছে, সিলিন্ডারদুর্ঘটনা এখন সড়ক-মহাসড়কে ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদ হয়ে দেখা দিয়েছে।

আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে আর নির্লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। এসব দেখার দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের সচেতন করার জোরালো পদক্ষেপ থাকতে হবে। প্রথম সিলিন্ডার সংযোজনের পর সেটি যথাযথ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পরীক্ষা করে নেয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাধ্যতামূলক করতে হবে যানবাহনের সিলিন্ডার ঠিক আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণও। যথাসময়ে সিলিন্ডার পরীক্ষা না করালে জেল-জরিমানাসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। সঠিক সিলিন্ডার লাগানো হলো কিনা তার দায়িত্ব পুলিশ ও বিআরটিএ’র। এ দায়িত্ব তারা সঠিকভাবে পালন করছে কিনা, তারও মনিটরিং হওয়া দরকার। আইনের ফাঁক-ফোকর থাকলে তা বন্ধেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্যাসসিলিন্ডার আমদানি, গাড়িতে সংযোজন, মান যাচাই সব ক্ষেত্রে বাড়াতে হবে নজরদারি। বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে গাড়ির রুট পারমিট ও ফিটনেসের ক্ষেত্রে গ্যাসসিলিন্ডারের রিটেস্টিং। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ছোট ছোট তথ্যচিত্র তৈরি করে তা ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগও থাকতে হবে। যতদিন পর্যন্ত তা না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারের বিষয়টি ‘বোমাতুল্য’ অতীব ঝুঁকিপূর্ণই থেকে যাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট