চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সম্পাদকীয়

হাসিনা-মোদি শীর্ষ বৈঠক

৭ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:২১ পূর্বাহ্ণ

শনিবার দুপুরে নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকটি নানা কারণেই গুরুত্ববহ। দুই নেতাই প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কের উচ্চতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন, একইসঙ্গে তিস্তার পানি বন্টনসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে একমত হয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা বিশ্ববাসীর সামনে সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মূলমন্ত্র উভয় দেশের নাগরিক জীবনমানকে উন্নত করা। পরে দু’দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতেই সাত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই এবং চুক্তিপত্র বিনিময় হয়। এরপর দু’প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। যদিও তিস্তা ইস্যুতে কোনো সমঝোতা হয়নি, তবে যেসব বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে সেসব দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত সফরের তৃতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ ছিল সবার। বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ ঘোষণায় দেখা যায়, দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। তিস্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের কাছ থেকে একটি ইতিবাচক ঘোষণা আশা করেছিল বাংলাদেশের জনগণ। তবে তিস্তা ইস্যুতে বরাবরের মতো আশ^াস থাকলেও রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং এ ব্যাপারে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন। সইকৃত চুক্তি অনুযায়ী ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত। উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার (কোস্টাল সারভেইল্যান্স সিস্টেম-সিএসএস) বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দুই দেশ। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই হয়েছে। তবে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দেয়া যৌথ বিবৃতিতে বহুল আলোচিত আসামের নাগরিকপঞ্জির প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়নি। বাংলাদেশ এই প্রথমবারের মতো তাদের প্রাকৃতিক গ্যাস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রফতানি করবে বলে দুই দেশের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। এলপিজি রফতানির জন্য একটি প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পে বাংলাদেশ থেকে বুলেট ট্রাকে চাপিয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে যাওয়া হবে ত্রিপুরার বিশালগড় বটলিং প্ল্যান্টে, তারপর তা সরবরাহ করা হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানে। দুই নেতা যে তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন সেগুলো হলো- খুলনায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে বাংলাদেশ-ভারত প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট, ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে বিবেকানন্দ ভবন এবং বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি আমদানি প্রকল্প। প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের পর বাংলাদেশের মুুক্তিযুদ্ধকালে ভারত সরকার ও জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা পরম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি চিরিদিনের জন্য একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। প্রসঙ্গত, বিগত এক দশকে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রথাগত সহযোগিতা প্রভূত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন ও অপ্রচলিত খাত, যেমন- সুনীল অর্থনীতি ও মেরিটাইম, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রফতানি ও সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি খাতে উভয় দেশ সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করেছে। এসব বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সহযোগিতার ফলে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশ্ববাসীর সামনে সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাশা পূরণ না হলেও দু’দেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা, বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি, লাইন অব ক্রেডিটের অর্থ ব্যবহার এবং দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সভায় প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ ও ওই ভাষণে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বহুত্ববাদের প্রসঙ্গ উপস্থাপন খুবই ইতিবাচক বলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য অত্যন্ত সময়োপযোগী ছিল। তাঁর উচ্চারণ সময়ের বিবেচনায় সাহসীও। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। সব বিবেচনায় বলা যায় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফল ফলপ্রসূ হয়েছে। সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রস্তাবিত তিস্তাচুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বিবৃতি অনুযায়ী, দুই প্রধানমন্ত্রী যুগপৎভাবে আরও ছয়টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনেও দ্রুততার সঙ্গে সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত বিনিময় এবং ফ্রেমওয়ার্ক অব ইন্টেরিম অ্যাগ্রিমেন্টের খসড়া প্রস্তুত করার জন্য যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি পর্যায়ের কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করতে চাই, বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত এসব বিষয়ে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। একইসঙ্গে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি দেখতে চাই আমরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট