চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঝরে পড়ছে বিপুলসংখ্যক শিশুশিক্ষার্থী সমাধানে চাই সমন্বিত পদক্ষেপ

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষার মান্নেœায়ন, সবার জন্যে শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং পিছিয়ে থাকা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ঝরেপড়া রোধ করতে সরকার নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। এতে সাফল্যও আসছে। তবে, এখনো এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত ফল আসেনি। বিনে পয়সায় বই, বিনা বেতনে শিক্ষালাভ, বৃত্তিপ্রাপ্তি, টিফিন ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ অবারিত করে দেয়ার পরও এখনো দারিদ্র্য, সচেতনতার অভাব, বখাটেদের অপতৎপরতাসহ নানা কারণে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের অনেকেই শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঝরেপড়ার চিত্রও খুবই বেদনাদায়ক। পিএসসি, জেএসসি, এইচএসসি সব ক্ষেত্রে ঝরেপড়ার হার অস্বাভাবিক।

দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক খবরে দেখা যাচ্ছে, গত তিন বছরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় চট্টগ্রামে ২৪ হাজার ১৯৮ জন শিক্ষার্থী কমেছে। ২০১৬-২০১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় মোট ১৪.৯৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী হ্্রাস পেয়েছে। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকেও ঝরেপড়ার এমন চিত্র লক্ষণীয়। আর শুধু চট্টগ্রামে নয়, সারাদেশেই নানা কারণে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। সরকারের নানামাত্রিক পদক্ষেপের পরও ঝরেপড়ার এই চিত্র খুবই উদ্বেগকর। সরকারের নানা তৎপরতার পরও কেনো শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়ার চিত্র এখনও উদ্বেগকর তা খতিয়ে দেখা জরুরি। প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার পেছনে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার অনেকে মনে করছেন, ফেলের ভয়েও অনেক শিক্ষার্থী সমাপনীতে অংশ নিতে চায় না। প্রথম দিকে পাসের ব্যাপারে সরকার উদার থাকলেও এখন কড়াকড়ি আরোপ করছে। ফলে শিশুদের এখন আর সমাপনী পরীক্ষার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। পড়াশোনর চেয়ে পরীক্ষা মূখ্য হয়ে উঠার কারণে সমাপনী পরীক্ষায় সব শিশু অংশ নিতে চায় না। এতে ঝরেপড়ার হার কমছে না। আবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাস করার পরও জেএসসিতে উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বিভিন্ন অনুসন্ধানী ও গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে অষ্টম শ্রেণির সমপনীর আগেই তারা ঝরে পড়েছে। নিবন্ধন করেও পরীক্ষাকেন্দ্রে না যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। বিভিন্ন জরিপ রিপোর্ট বলছে, যারা পরীক্ষায় অংশ নেয় না, তাদের ঝরেপড়ার আশঙ্কা থাকে প্রায় শতভাগ।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই অব্যাহত ঝরেপড়ার পরিস্থিতি সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার পথে বড় অন্তরায়। এই চিত্রের অবসানে সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, কেবল নকল কমালেই শিক্ষার লক্ষ্য পূরণ হবে না, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করে রোধ করতে হবে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়ার হারও। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, অসচেতনতা, বাল্যবিয়ে, দারিদ্র্য, নদীভাঙ্গন, পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা, বখাটেদের উৎপাত এবং মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক না করা সহ নানা কারণেই ঝরেপড়ার হার আশানুরূপ কমছে না। এসব বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। স্মরণে রাখা দরকার, ঝরেপড়া রোধ করার কাজটি নানা কারণে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বার্থে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে; নিতে হবে যুৎসই কর্মসূচি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট