চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এ্যালুমিনিয়াম, ধূমপান ও কীটনাশক : প্রসঙ্গ পরিবেশ

১২ জুন, ২০১৯ | ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ

হাড়ি-পাতিল-সানকি থেকে এ্যালুমিনিয়াম ……
গ্রামে-গঞ্জে হাড়ি-পাতিলের ব্যবহার এখনো আছে, তবে দিনে দিনে সে জায়গা দখল করে নিয়েছে এ্যালুমিনিয়াম এবং প্লাষ্টিকের জিনিসপত্র। বিশেষ করে রান্নার দ্রব্যসামগ্রী ও বাসনপত্র। গ্রামে এখন এ্যালুমিনিয়ামের বাসনের প্রচলন বেশি। টেকসই-এর কারণে এবং দামও কম বলে। সহজেই পাওয়া যায়। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না যে, এ্যালুমিনিয়াম বিষাক্ত ধাতু। এ ধাতু মারাত্মক ক্ষতিকর মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য। তারপরও আমরা ব্যবহার করি অনেকে না জেনে, অনেকে আবার অর্থনৈতিক কারণে।
সাধারণত শরীরে এ্যালুমিনিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে হাড়, মস্তিষ্ক ও ¯œায়ুুতন্ত্রে গোলযোগ দেখা দেয়। শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়, তার মধ্যে যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের কিডনিজনিত সমস্যা আরো বেড়ে যায়। মানুষের শরীরের নানাভাবে এ্যালুমিনিয়াম প্রবেশ করে, এর মধ্যে বিপজ্জনক দুটি উপায় হলো এ্যালুমিনিয়াম বাসনপত্র ব্যবহারে ও ওষুধের মাধ্যমে। আমাদের দেশে শহরে ও গ্রামে এ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার বেশি বলে অসুখের ঝুঁকি বেশি।
এক গবেষণায় থেকে জানা যায়, এ দেশের মানুষ সপ্তাহে ১০ মিলিগ্রাম এ্যালুমিনিয়াম গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু বিশ্ব সংস্থার মতে, এর গ্রহণযোগ্যতা পরিমাণ সর্বোচ্চ ৭ মিলিগ্রাম এবং শিশুদের বেলায় মাত্র ২ মিলিগ্রাম। তার বেশি কখনো না। তাই, আমাদের দেশে শুধু এ্যালুমিনিয়াম নয়, সকল ধরনের ধাতব ও জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। তাহলেই আমরা নানা ধরনের নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি।
তবে, আমাদের দেশে যে এ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার বেড়ে তার প্রকৃত উদাহরণ এই ছবি। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে এখন একেবারে গরিব মানুষও এ্যালুমিনিয়াম দিয়ে রান্না করে। হাড়ি-পাতিল নির্দিষ্ট কিছু রান্না বা পিঠা বানানোর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হাড়ি বা পাতিলের রান্না পিঠার সাধই আলাদা তা আমরা সকলেই জানি। এসব বিবেচনায় এখনো মাটির হাড়ি-সানকি-পাতিল-মটকার কদর রয়েছে।
ডিসকোভারী কুকুর ও বিষ ………….
সিগারেটের বিজ্ঞাপন বন্ধের জন্য সারাদেশে মানববন্ধন করা হয়। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আধুনিক-এর মতো সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও আমরা কি বন্ধ করতে পারবো মানুষের ধূমপানের নেশা। আমরা কথায় কথায় বলি ধুমপান মানেই বিষ পান। যে সিগারেটের প্যাকেট আমরা হাতে নিই, তার উপরও লেখা থাকে ‘সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক’। এরপরও আমরা কিনি এবং যথারীতি পান করি। বিজ্ঞাপনের নীচেও এ ধরনের সতর্কবাণী লেখা থাকে। নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ সবসময় বেশি, এর কারণ হয়তো মনস্তাত্বিকরা ভালো একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারবেন।
কুকুরের সিগারেটের নেশা নিয়ে তারা কি ব্যাখ্যা করবেন জানি না। বেশ কিছুদিন আগে জানা যায়, আমেরিকার একটি কুকুরের নেশাই হচ্ছে সিগারেট খাওয়া। সিগারেট খেতে না পারলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই কুকুরটির নাম ‘মেজর’। এই কুকুরটি সত্যিকার চেইন স্মোকার। একটি পর একটি সিগারেট টানতে থাকে। শুধু ‘মেজর’ নয়, তার বাচ্চারাও ইতিমধ্যে সিগারেট খাওয়া শুরু করেছে এবং নিয়মিত খায় মায়ের মতো। কুকুরের মালিক প্রতিদিন কুকুর ও তার বাচ্চাদের জন্য চার প্যাকেটে করে সিগারেট দিয়ে থাকেন। কখনো সিগারেট না পেলে কুকুরগুলো ভীষণ রেগে যায় এবং বাড়ীর জিনিস ভেঙে নষ্ট করে নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে দেয়। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সিগারেটের যে ক্ষতিকারক নিকোটিন বা বিষ আছে, তা একসময় এই কুকুরগুলোকে আক্রমণ করে বসে। আমরা জানি নিকোটিন শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। নিকোটিনের আক্রমণে এক সময় মেজরের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। কাশিও দিন দিন বাড়তে থাকে। ডাক্তার মতামত দেয়, অতিসত্বর যদি ‘মেজর’ ও তার বাচ্চাদের সিগারেট খাওয়া বন্ধ করা না হয়, তাহলে তাদের মৃত্যু অনিবার্য। মানুষের মতো কুকুরগুলোর হতে পারে ক্যান্সার কিংবা অন্যকোনো রোগ। আসুন, আমরা যারা ধূমপায়ী নিজেদেরকে ধূমপান থেকে বিরত রাখি, অন্তত নিজের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে কিংবা পরিবারের কথা ভেবে।
ধানে বিষ এবং চড়–ই পাখির মৃত্যু …….
এক খবরে জানা যায়, চড়–ই পাখি কেবল ধান ক্ষেতের ক্ষতিই করে না উপকারও করে। জনগণের ধারণা চড়–ই পাখি ধান বা সবজি খায়, কিন্তু না সে ফসল নষ্ট করে না। ধান খেয়ে উৎপাদন কমায় না। চড়–ই খায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
পোকা আর ঘাসের বিচি। তাই, দেখা যায় চড়–ই পখি যে সব ধানী জমিতে কম যায়, সে সব ধানী জমিতে পোকা-মাকড় বেড়ে যায়। ফলে ধান কম উৎপাদিত হয়, সে সব জমিতে। কয়দিন আগে দেখলাম পত্রিকায় ধানের জমির জালে জড়িয়ে তোতা পাখির মৃত্যুর খবর।
এ সত্য জানা যায় কয়েক দশক আগের চীনের এক ঘটনা থেকে, চীনের একটি এলাকায় চড়–ই পাখির ফসল নষ্ট করে এ কথা ভেবে লক্ষ লক্ষ চড়–ই নিধন করা হয়। নিধন করার পর দেখা যায় ধানের উৎপাদন করা কমে যায়। পরে চীনের এক গবেষণা থেকে এ সত্য প্রমাণিত হয় চড়–ই পাখি ফসলের ক্ষতি করে না বরং ধান উৎপাদনে সহযোগিতা করে। কয়েক বছর আগে যশোরের একটি গ্রামে সব্জি ক্ষেতে বিষ দেয়ার পর ক্ষেতের পোকা-মাকড় মরে যায়। সে মরা পোকা-মাকড় খেয়ে শত শত চড়–ই মারা যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একটি পাক্ষিকের সাথে দেয়া সাক্ষাৎকারে উপরোক্ত তথ্য জানিয়ে পক্ষী বিশারদ ড. কাজী জাকের হোসেন জানান, আমাদের দেশের বিষ উৎপাদনকারী কোম্পানী, বিষ ব্যবসায়ী এবং বিষ আমাদানীর পরামর্শ দেন তারা উদ্ভিদ বৈচিত্র্য, প্রাণীকূল, প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন না। তাদের দরকার মুনাফা, তাই তারা করছে। ফসলে কোন পোকা-মাকড় দেখলেই এরা ঢালাও ভাবে কোনো না কোনো বিষ দেয়ার পরামর্শ দেন। ড. জাকির হোসেন সেই সময় চড়–ই হত্যার মামালার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
জমিতে সার ব্যবহার ও বিষ প্রয়োগ নিয়ে এখন নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ জন্য আমাদের দেশে জমিতে ব্যবহৃত সার ও বিষ প্রয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। যত্রতত্র, যখন-তখন প্রয়োগ সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। না হয় শধু চড়–ই কেন জমির উপকারী পোকা-মাকড়, কেঁচো কিছুই থাকবে না। এমনিতে জমির মাছ তো এখন নেই বললেই চলে।
পুনশ্চ : জমিতে বিষ …………..
অতীতে পরিবেশের কথা চিন্তা না করেই অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো হয়। যেমন উন্নত কৃষির জন্য এক সময় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিষ দিতে কৃষককে উৎসাহিত করা হয়। একে কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব বলে মনে করা হতো। কিন্তু, কিছুদিনের মধ্যেই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিষের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। রাসায়নিক সার জমির জীবনীশক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট করে।
দীর্ঘদিন যাবৎ রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে থাকলে এক সময় জমি আর ফসল ফলানোর উপযোগী থাকে না। কীটনাশক ছিটানোর ফলে ফসলের জন্য উপকারী অনেক জীব মারা যায়। অন্য দিকে কীটনাশক দেয়া জমির খাদ্যশস্য ও সাকসবজি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। যেমন – একটি বেগুন গাছে কীটনাশক বিষ দেয়া হলে ঐ বিষ বেগুনেও লেগে যায়। এই বেগুন যত ধোয়াই হোক না কেন তা কীটনাশক-বিষমুক্ত হয় না। এই বেগুন খেয়ে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক সবার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
সকলের অজান্তেই এই ক্ষতি হচ্ছে। কৃষির উন্নয়ন বিষয়ে যারা কাজ করেন তারা কৃষককে এ ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারেন। আর কীটনাশক বিষের ভয়াবহতা সম্পর্কে কৃষকে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট