চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জনসংখ্যা বাড়ছে ঃ বিষয়টা নিয়ে কী ভাবছি

প্রশান্ত বড়ুয়া

১ জুন, ২০১৯ | ১:৫০ পূর্বাহ্ণ

সম্পদ, আয়তন আর জনসংখ্যা এ তিন শব্দের কোনটাই কমতি নেই। সমুদ্রসীমা অর্জনে পর দেশের আয়তন আরো বেড়ে গেলো। বাংলাদেশে যে পরিমান প্রাকৃতিক সম্পদ আছে সরকার সঠিক পরিকল্পনা নিলে প্রচুর আয় করা সম্ভব। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও দরকার সঠিক পরিকল্পনা। বিশেষ করে প্রতিটি জেলায় যে পরিমান প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তা হয়তো আজো অজানা দেশের মানুষের কাছে। বিশেষ করে গ্যাস তেলসহ আরো কতো প্রাকৃতিক সম্পদ যে মাটির ভেতরে আছে তা বলা সম্ভব নয়। বিশ্বের মানুষ ভ্রমণ প্রিয়। বাংলাদেশ পছন্দের তালিকায় আছে বিশ্বের পর্যটকের। আয়তনের দিক থেকে একমাত্র দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আছে বাংলাদেশে। তিন পার্বত্য জেলায় যেসব পাহাড়, দেশের ভেতরের যে সব জেলা-উপজেলায় দর্শনীয় স্থান- এগুলোকে যদি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করা যেত, তাহলে দেশ আর্থিক ভাবে যেমন এগিয়ে যেতো, তেমনি বেকার কিছু মানুষের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হতো। বাংলাদেশে আয়তনের দিক থেকে জনগণ বেশি। এদের একটি অংশের বেকারত্বের কারণে প্রতিনিয়ত অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এর জন্য কে দায়ী? সাধারণ মানুষ, সরকার না রাষ্ট্র। কাকে বেশি দোষী করা যায়।
রাষ্ট্রের কিছু সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান আছে যারা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। মানুষের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে যারা কাজ করে সত্যিকার ভাবে তৃণমূল পর্যায়ে তারা কি আদৌ যাচ্ছে, বা যে সব উপকরণ সরকার জন্ম নিয়ন্ত্রনের জন্য দিচ্ছে তা সাধারণ মানুষকে দিচ্ছে ? তৃণমূল পর্যায়ে না গিয়ে তারা যদি চেয়ারে বসেই কাজ সারেন এবং জন্ম নিয়ন্ত্রনের উপকরণ জনগণকে দিয়েছে বলে খাতাপত্রে লিপিবদ্ধ করেন তাহলে কাজের কাজ কিছুই হয় না – এমন অভিযোগ অনেক সময় গণমাধ্যমে আসে। বেসরকারি ঔষধ ব্যবসায়ীরা দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে।
যারা বস্তি এলাকায় বাসা বা ঝুপড়ি করে কোনরকম দিনে এনে দিনে খায়, তারা জন্ম নিয়ন্ত্রন নিয়ে কোন ভাবে সচেতন নয়। তাদের এক পরিবারে ৫ থেকে ৬ টা করে সন্তান। আর্থিক অভাবের কারণে টেলিভিশন না থাকায় সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে গণমাধ্যমে যে সব নাটিকা প্রচার করে তা দেখার যুযোগ হয়না। খেটে খাওয়া মানুষরা কর্মশেষ করে বাকী সময়টুকু সংসারধর্মে কাটায়। তাদের অসচেতনায় আজ দেশে বাড়ছে মানুষ।
কিছু কিছু উন্নত রাষ্ট্রে দেশের আয়তনের চেয়ে জনসংখ্যা কম। তারপরও তারা জনসংখ্যা নিয়ে ভাবে। জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধি পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখে। বাংলাদেশে অধিক জনসংখ্যার পরও প্রায় অনেক পরিবার পরিকল্পিতভাবে সংসার ধর্ম পালন করে না। উন্নত রাষ্ট্রে শিক্ষার হার অধিক হওয়ায় তারা ভবিষ্যত পরিকল্পনা অনুসারে অগ্রসর হয়। অতিরিক্ত জনসংখ্যা একটি পরিবার সমাজ, রাষ্ট্রে কীভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা তারা আগেই বুঝতে পারে। তাই, তারা অধিক সন্তান জন্মদানের বিপক্ষে। তাছাড়া আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় ধর্মীয় কুসংস্কার তাদের আবদ্ধ বা আচ্ছন্ন করতে পারে না।
আমাদের দেশে শিক্ষার অভাবে এখনো অনেক পরিবার রয়েছে যারা সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। একটি দেশের জনসংখ্যা যখন ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন সে দেশের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। সে সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে সরকারকেও হিমশিম খেতে হয়। অধিক জনসংখ্যার ফলে দেশের অর্থনীতির উপর চাপ পড়ে। বাসস্থান, চিকিৎসার অভাব, খাদ্য সমস্যা, অপুষ্টি, সুশিক্ষার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ছেলে-মেয়েদের প্রতিপালন করতে গিয়ে অভিভাবককে অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। সুশিক্ষায়-শিক্ষিত করে যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে পারে না। আবার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের অভাবে বাড়তি জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশ বেকার হয়ে পড়ে। বেকার যুবকদের মধ্যে জীবনে হতাশা নেমে আসলে তারা নানা ধরনের সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে।
স্বল্প আয়ের মানুষের পরিবারে যে ভাবে বছরে বছরে সন্তান জন্ম গ্রহণ করছে তাতে করে আগামীতে দেশে কতো জনসংখ্যা হতে পারে যারা এ বিষয়ে গবেষণা করছে তারাই ভালো বলতে পারবে। যে পদ্ধতি অনুসরনে সন্তান বেশি জন্ম নেবে না সে উপকরণগুলো গ্রামীণ জনপদে বা বস্তি এলাকার মানুষদের কাছে পৌঁছে দেওয়া দরকার।
স্বাধীনতার পরে এ পর্যন্ত দ্বি-গুণের বেশী মানুষ বেড়ে গেছে। গ্রামীণ পর্যায়েও এখন মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে। তার পরেও মানুষ বাড়ছে। দেশে এখন শিশু মৃত্যুর হার কমে গেছে এবং মানুষের আযু বাড়ছে। সরকার শিশু মৃত্যুর হার কমাতে পেরেছে, কিন্তু শিশু জন্মহার কমাতে পারেনি।
জনসংখ্যার আধিক্য কমাতে ও জনগণের সচেতনা বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারী গণমাধ্যমে নানা রকম নাটিকা প্রচার বাড়িযে দেয়াসহ সরকারকে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে জন্মহার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়ে উঠতে হবে।

লেখক : বার্তা সম্পাদক, দৈনিক পূর্বতারা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট