চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ট্রান্সশিপমেন্ট থেকে আমরা কি পাচ্ছি

আমিরুল ইসলাম চৌধুরী (মিজান) সিনিয়র সভাপতি, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশন (বাফা)

১৮ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:০১ পূর্বাহ্ণ

ট্রান্সশিপমেন্টে ভারত থেকে কন্টেইনারবাহী জাহাজ আসার সম্ভাবনা বেশি। বাল্ক শিপ নাও আসতে পারে। তাই জাহাজ জট হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। প্রশ্ন আসতে পারে জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে কন্টেইনার নামানোর পর সেটি কোন পথে ভারতের অন্য জায়গায় যাবে। এক্ষেত্রে নদী পথে যেতে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বাংলাদেশের নদী পথের নাব্যতা তুলনামূলক ভাল হলেও ভারতের নদীর নাব্যতা কম। তাই ভারত ৬৭ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ দিয়েছে ড্রেজিং করে তাদের নদীর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য। সেই কাজ শেষ করতে আরো দুই তিন বছর লাগবে। সুতরাং বোঝা যায় বন্দর থেকে কন্টেইনার সড়ক পথেই ভারতে যাবে। কিন্তু ভারতের তুলনায় আমাদের দেশের সড়কের অবস্থা এখনো পণ্য পরিবহনের জন্য উপযোগী নয়। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত সড়ক ভাল হলেও তারপর আখাউড়া, তামাবিল কিংবা রামগড় এর দিকের সড়ক ভাল অবস্থায় নেই।

এখন চিন্তার বিষয় হলো ভারত-বাংলাদেশ ট্রান্সশিপমেন্ট থেকে আমরা কি পাচ্ছি। সারা পৃথিবীতে ট্রান্সশিপমেন্ট এর মতো বৈদেশিক বাণিজ্য শুরু করার আগে স্টাডি করা হয়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। আমাদের ক্ষেত্রে দুই সরকারের উপরের পর্যায়ের আলোচনার ভিত্তিতে এই কাজ শুরু হতে চলেছে। একেবারে মাঠ পর্যায়ের কোন স্টাডি বিশেষ করে সড়ক পথের পণ্য পরিবহনের জন্য কোন স্টাডি করা হয়নি।
সুতরাং এই মুহূর্তে আমাদের ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য পরিবহন করতে হলে আমাদের রোডের সংস্কার করা প্রয়োজন। আর সেজন্য ইনভেস্টমেন্ট করাও প্রয়োজন। কিন্তু আলোচনায় উঠে এসেছে ভারত লোন দেবে। কিন্তু সেই হলো হার্ড লোন। সফট লোন নয়। এই ধরনের কাজের জন্য উচ্চ সুদের লোন নিয়ে কাজ করাটা সমীচিন হবে না।

আমরা লোন করে রাস্তার উন্নয়ন করে, রেলের উন্নয়ন করে এবং নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে আমরা কি পাচ্ছি? সেটা কিন্তু কোন আলোচনায় নেই।
ভারতের কোলকাতা থেকে গোহাটিতে পণ্য পরিবহনে এখন যত টাকা খরচ হয়, আমাদের দেশ দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে সেই পণ্য গেলে খরচ হবে মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ ভারতের সময় এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। আর পৃথিবীময় এই ধরনের সুবিধা প্রদানকারী দেশকে তিন ভাগের একভাগ রয়ালিটি দেওয়ার নিয়ম চালু থাকলেও আমাদের ক্ষেত্রে এসওএ-তে (স্ট্যান্ডিং অফার এগ্রিমেন্টে) সেই বিধান রাখা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

আমদানির পাশাপাশি রপ্তানির কি সুযোগ পাচ্ছি সেটাও দেখার বিষয়। কারণ প্রতিটি দেশ তার নিজের স্বার্থ দেখবে। ভারত তার নিজের দেশের স্বার্থ দেখছে, কিন্তু আমার জানা মতে আমাদের স্বার্থ দেখার মত কেউ নেই। তাই এখন এসব বিষয় আলোচনা দাবি রাখে। বন্দরের চার্জ একই রাখলেও ভারতের পণ্য পরিবহনে যে বিপুল অর্থ সঞ্চয় হবে তার একটি অংশ কিন্তু বাংলাদেশ যোক্তিকভাবে পাওয়ার দাবি রাখে। কিন্তু এই ব্যাপারে আমাদের আলোচনা হয়নি। সরকারের উচিত হবে ট্রান্সশিপমেন্ট চালু করার আগে এটি বিবেচনা করা। আমাদের চিন্তা করা উচিত আমদানির জন্য কি যাবে আর রপ্তানি কি হবে। উদাহরণস্বরূপ আমাদের লোহজাত পণ্য যেমন রড এবং সিমেন্ট ভারতে রপ্তানি হতে পারে। সেই সুযোগ কিন্তু আছে। তবে এজন্য আলোচনা করতে হবে। সেই আলোচনায় বসে আমাদের নিজেদের স্বার্থ দেখে যৌক্তিক দাবি জানাবে এমন উদ্যোগ আমি দেখিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট