চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

দু’বছরেও হদিস নেই জিহাদের

ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যা

নাজিম মুহাম্মদ

১৫ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ

দুই বছরের বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে রয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু জিহাদ ছিদ্দিকী। নগর ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যার কয়েকজন পরিকল্পনাকারীর মধ্যে জিহাদ ছিল অন্যতম। সুদীপ্ত হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তেরো জন গ্রেপ্তার হলেও ঘটনার পর থেকে আতœগোপন করেছে আবু জাহেদ ছিদ্দিকী। দুই বছরেও তার খোঁজ পায়নি পুলিশ। জিহাদকে পাওয়া গেলে সুদীপ্ত হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসাবে আরো একজন আওয়ামী লীগ নেতার জড়িত থাকার রহস্য উন্মোচন হতো। ধারণা করা হচ্ছে উক্ত নেতা নিজেকে নিরাপদে রাখতে জিহাদকে সরিয়ে রেখেছে। তবে জিহাদকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সদরঘাটের নালাপাড়ার বাসা থেকে ঘুম থেকে ডেকে বের করে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। জানা যায়, লালখান বাজার এলাকার যেসব যুবক হত্যার ঘটনায় অংশ নিয়েছিলো তারা সদরঘাটের নালাপাড়ার সুদীপ্তর বাসা চিনতো না। ঐ বাসায় যাবার ম্যাপ তৈরি করেছিলো আবু জিহাদ। সুদীপ্ত হত্যায় অংশ নেয়া লালখান বাজারের শামীম আহসানের মুঠোফোনের ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়েছিলো জিহাদ। শামীম পরবর্তীতে হত্যার ঘটনায় অংশ নেয়া মোক্তার হোসেনসহ সবার কাছে ম্যাপটি দেয় ম্যাসেঞ্জারে।

সুদীপ্ত হত্যার চার পাঁচদিন আগে আবু জিহাদ দুইজন আওয়ামীলীগ নেতার সাথে বৈঠক করে। ঘটনার চার-পাঁচদিন আগে থেকে লালখান বাজারে জনৈক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় ছিলো আবু জিহাদ। সেখানে সুদীপ্ত হত্যায় যারা অংশ নেবে তাদের সাথে পরিচয় করে দেয়া হয়। জিহাদকে ওই আওয়ামী লীগ নেতা নতুন জামা কাপড়ও কিনে দিয়েছিলো। ঘটনার দিন আগেভাগে গিয়ে সদরঘাট ডিলাইট হোটেলের সামনে অবস্থান নিয়েছিলো জিহাদ। হত্যাকারীদের বাসাটি চিনিয়েও দিয়েছিলো।
সুদীপ্তকে পিটানোর সময় প্রতিবেশী লোকজন এগিয়ে আসতে চাইলে জিহাদ তার কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে পর পর পাঁচরাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছিলো। ঘটনার পর থেকে আতœগোপনে থাকা জিহাদ নগরীর আন্দরকিল্লা ঘাটফরহাদবেগ এলাকার জনৈক বখতিয়ার উদ্দন মজনুর ছেলে। সরকারি সিটি কলেজে ¯œাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলো সে। সে বাকলিয়া এলাকার পরিচিত একজন আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি কলেজভিত্তিক একজন ছাত্রলীগ নেতা জানান, জিহাদ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। নগর ছাত্রলীগের কমিটিতেও ছিলো। দলীয় একটি দিবসকে কেন্দ্র করে সিটি কলেজে নগর আওয়ামী লীগের একজন নেতার পক্ষে কেক কাটতে চেয়েছিলো। আইনুল কাদের নীপু কেক এবং আওয়ামী লীগের উক্ত নেতার ছবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে কলেজে গিয়েছিলো। কিন্তু প্রতিপক্ষের নেতারা কলেজে তাদের কেক কাটতে দেয়নি। ওই ঘটনা নিয়ে সুদীপ্ত বিশ্বাস তার ফেসবুকের ওয়ালে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমকে উদ্দেশ্যে করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলো। বিয়ষটি আবু জিহাদ স্বাভাবিকভাবে নেয়নি।
সুদীপ্ত হত্যায় জড়িত খাইরুল নুর ইসলাম খায়ের ঘটনার পরদিন তার এক বন্ধুর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে বলে, সিটি কলেজের রাজনীতির বিষয় নিয়ে সুদীপ্তর সাথে প্রথমে জিহাদের ঝামেলা বাধে। সুদীপ্ত হত্যায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম চেয়েছিলো সুদীপ্ত হত্যার ঘটনা জিহাদের কাঁধে তুলে দিতে।

সুদীপ্তকে পিটিয়ে আসার পর পর জিহাদ তার ফেসবুকে বাকলিয়া এলাকার উক্ত আওয়ামীলীগ নেতাকে সাথে নিয়ে ‘আলামত’ ক্যাপশন দিয়ে একটি ছবিও পোস্ট করেছিলো। পরে সুদীপ্ত মারা যাবার ঘটনা জানাজানি হবার পর ফেসবুক থেকে সেই ছবি মুছে দেয়। ঘটনার পর থেকে জিহাদ আত্মগোপন করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, সুদীপ্ত হত্যার কয়েকজন পরিকল্পনাকারীর মধ্যে জিহাদও ছিলো। হত্যাকা-ের সময়ও উপস্থিত ছিলো। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছে। তাকে পাওয়া গেলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ে আরো একজন ব্যক্তির জড়িত থাকার বিষয় উঠে আসতো। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া বেশ কয়েকজন আসামির জবানবন্দিতে জিহাদের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। জিহাদকে গ্রেপ্তার করতে আমরা চেষ্টা করছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট