চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

চন্দনাইশ থেকে অপহরণ

সাতকানিয়ার ব্যবসায়ীকে বান্দরবান থেকে উদ্ধার

সুকান্ত বিকাশ ধর হ সাতকানিয়া

১৮ মে, ২০১৯ | ৩:০৪ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় ব্যবসায়ী ও তাঁর পুত্র এবং দেড় বছরের শিশু অপহরণের পর উদ্ধারের ঘটনার ১০ দিন অতিবাহিত না হতেই আবারও সাতকানিয়ার এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে চন্দনাইশ থেকে অপহরণের ৩ দিনের মধ্যে বান্দরবান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার ব্যক্তি হলেন সরওয়ার জামাল (৪৭)। তিনি উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের উত্তর ঢেমশা কমান্ডার বাড়ির মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। ঢেমশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র সংলগ্ন তার একটি মুদি দোকান রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে বান্দরবান

জেলার বালাঘাটা এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় এবং মঙ্গলবার থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
উদ্ধার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সরওয়ার জামাল তার ছেলেকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। ছেলেকে কেরানীহাট আশ-শেফা স্কুলে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে চন্দনাইশের বাগিচার হাট এলাকায় তার ছেলের জন্য এক হোমিও চিকিৎসক থেকে ওষুধ নিয়ে দোকানের মাল ক্রয়ের জন্য হানিফ পরিবহনের একটি বাসযোগে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। সরওয়ার ওই দিন রাতের অনেক সময় অতিবাহিত হলেও তিনি বাড়ি ফিরে না আসায় তার পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি। বুধবার সকালে ছোট ভাই রায়হানুল আজাদ বাদি হয়ে সাতকানিয়া থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
ছোট ভাই রায়হানুল আজাদ বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে আমার ভাই (সরওয়ার) তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বার থেকে আমার মোবাইল নম্বারে ফোন দেন। তখন তিনি আমাকে বলেন, আমি এখন রাঙ্গামাটি। তুই যে করে হোক ৩০ হাজার টাকা পাঠা। এই বলে মোবাইলের সংযোগ তিনি বিছিন্ন করে দেন। পরে আমি বিষয়টি সাতকানিয়া থানা পুলিশকে জানাই। পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী অপহরণকারীদের টাকা ক্যাশে দিব, না বিকাশে দিব। এই নিয়ে তাদের (অপহরণকারী) সাথে অনেক কথা হয়। সম্ভবত তারা এ ঘটনায় প্রশাসন মাথা ঘামাচ্ছে মনে করে মোবাইল নম্বারটি বন্ধ রাখে। পরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বান্দরবানের বালাঘাটা এলাকায় এক আত্মীয় তাকে ঘুরাফেরা করতে দেখে তার দোকানে নিয়ে বসিয়ে রাখে। খবর পেয়ে আমরা বালাঘাটা গিয়ে ভাইকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসি’।
এ ব্যাপারে উদ্ধার সরওয়ার জামাল বলেন, ‘বাসে করে চট্টগ্রাম শহরে যাওয়ার সময় নতুন ব্রিজের আগ পর্যন্ত আমার হুঁশ ছিল। এরপর আমি কিছুই জানিনা। বৃহস্পতিবার আনুমানিক সকাল ১১ টার দিকে আমার হুঁশ হলে আমি দেখি, ভাঙ্গা একটি বেড়ার ঘরে বসে আছি। তবে আমার হাত ও পায়ে কোন বাঁধন ছিল না। পরে ৪ জন চাকমার ছেলে ও ২ জন বাঙালি চেহারার মত ৬ যুবককে দেখতে পাই। পরে তারা আমার মোবাইল নিয়ে বলে, তোর আত্মীয়দের বল ৩০ হাজার টাকা দিতে। তখন আমি আমার ভাই রায়হানকে ফোন করে বলি, টাকা দিতে। এই কথা শেষ হলে তারা আমার কাছ থেকে মোবাইলটি কেড়ে নিয়ে সুইসটি বন্ধ করে দেয়’। তিনি আরও বলেন, ‘তখন তাদের আমি বলি, আমার একটি ঠেলা গাড়ি আছে। আমি ঠেলা গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাই। এটি বিক্রি করলেও ৩০ হাজার টাকা পাবে না। আর আমার ভভবাভাইয়ের এমন সামর্থ নেই যে, হঠাৎ করে এত টাকা জোগাড় করবে। তোরা আমাকে মেরে ফেলে দিলেও কেউ আমার লাশও নিতে আসবে না। এ কথা বললে, তারা আমাকে কোন ধরণের নির্যাতন বা খারাপ কথা বলেনি। পরে তারা আমাকে একটি বাসে তুলে দিলে বাস আমাকে বান্দরবানের বালাঘাটা বাজারে নামিয়ে দেয়। পরে আমার ভায়েরা ভাই ডিশ ব্যবসায়ী আবুল কাসেম অসংলগ্নভাবে আমাকে বাজারে হাঁটতে দেখে তার দোকানে নিয়ে যায়’।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্যা বলেন, ঘর থেকে বের হয়ে চন্দনাইশে ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ আনতে গেলে সেখান থেকে মলম পার্টির সদস্যরা তাকে নিয়ে যায়। পরে বান্দরবানের বালাঘাটায় তাকে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে সাতকানিয়া থানায় জি ডি করা হয়েছিল। তবে কারা, কিভাবে তাকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরণের তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট