চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

১২ হাজার টাকা হাঁকিয়ে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি

শিশুদের পোশাকে ‘গলাকাটা’ দাম একদামের নামে চলছে প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ মে, ২০১৯ | ২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

মিমি সুপার মার্কেটে চার বছর বয়সী বাচ্চার একটি পোশাকের দাম হাঁকানো হলো আট হাজার টাকা। একদামের দোকান। দাম শুনে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেন ক্রেতা। বাচ্চাও বায়না ধরেছে সেই পোশাকটি নিবে। বিধি বাম, বিক্রেতা কি আর দাম কমায়! যাক শেষমেষ ক্রেতা তিন হাজার টাকায় কিনলেন সেই পোশাকটি। চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে একইভাবে বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন একই ক্রেতা। আট বছর বয়সী শিশুর একটি জামার দাম হাঁকানো হলো ১২ হাজার টাকা। একদামের নামে এভাবে গলাকাটা দাম দিয়ে বোকা বানানো হচ্ছে ক্রেতাদের। গত মঙ্গলবার রাতে দুটি মার্কেট ঘুরে এমন বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় বোয়ালখালীর এক গৃহবধূর। ওই মহিলা জানান, নগরীর নামীদামি মার্কেটে একদামের নামে আকাশচুম্বি দাম হাঁকিয়ে ক্রেতাদের রীতিমতো বোকা বানানো হচ্ছে। দু’তিনগুণ দাম হাঁকানো হচ্ছে। এক দামের দোকান বলে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মিমি সুপার মার্কেটের মতো অভিজাত মার্কেটে একদাম লিখে ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাত ও গতকাল বুধবার নগরীর মিমি সুপার মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স, রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শিশুদের পোশাকের দোকানগুলো জমজমাট হয়ে ওঠেছে। নারী-তরুণ-তরুণীদের চেয়ে বাচ্চাদের পোশাক কেনা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন ক্রেতারা। সন্ধ্যার পর থেকে বাচ্চাদের পোশাকের দোকান একেবারে জমজমাট। নগরীর দুটি মার্কেট কমিটির সভাপতি জানান, নয়টি রোজা শেষ। শাড়ির দোকানগুলো জমে ওঠেনি। শিশুদের কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন ক্রেতারা। তবে আজকাল থেকে মহিলা ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। তবে শাড়ির দোকানের চেয়ে বেশি ভিড় রয়েছে থ্রি-পিসের দোকানে। সেলাইয়ের ঝামেলা থাকায় থ্রি-পিসও আগেভাগে কিনতে হয়। তবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা একসঙ্গেই সব কেনাকাটা সারতে চান। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত বছর বাজার মনিটরিং টিম ভোগ্যপণ্য ছাড়াও বিভিন্ন বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালানো

হয়। এসব অভিযানে ওঠে এসেছিল, একটি লেহেঙ্গার ক্রয়মূল্য ছিল ১৫ হাজার নয়শ টাকা। সেই পোশাকের দাম হাঁকানো হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। আরেকটি লেহেঙ্গার ক্রয়মূল্য ছিল ৭ হাজার ৫শ টাকা। তার দাম লিখা ছিল ২৪ হাজার টাকা। শিশুদের একটি পোশাকের ক্রয়মূল্য ছিল নয় হাজার ৯৯৫ টাকা। সেই পোশাকের দাম লিখা ছিল ১৯ হাজার ৫শ টাকা। একটি থ্রিপিসের ক্রয়মূল্য ছিল ৫ হাজার একশ টাকা। তার দাম লিখা ছিল ১২ হাজার ৫শ টাকা। আরেকটি থ্রি-পিসের ক্রয়মূল্য ছিল ৫ হাজার ৩৭০ টাকা। কিন্তু দাম লিখা ছিল ১১ হাজার ৮৬০ টাকা। নগরীর টেরিবাজার, মিমি সুপার মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স, আফমি প্লাজায় অভিযান চালিয়ে ক্রয়মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ-তিন দামে পোশাক বিক্রির চিত্র পেয়েছিল জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গলাকাটা দামে পোশাক বিক্রির জন্য বিভিন্ন দোকানদারকে জরিমানাও গুণতে হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরও একইভাবে গলাকাটা দামে পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি বছরও জেলা প্রশাসনের ৭ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সাতটি টিম গঠন করেছেন। এসব টিম প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছেন। ইতিমধ্যেই নামকরা কয়েকটি রেস্তোরাঁয়-হোটেলে অভিযান চালিয়ে পঁচাবাসি ও ভেজাল পণ্য জব্দ করেছেন। পোশাকের দোকানে অভিযান চালানো হবে বলে একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট পূর্বকোণকে জানিয়েছেন।
ক্রেতাদের অভিযোগ, ঈদ উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে বাচ্চা, তরুণী ও নারীদের পোশাক ছাড়াও প্যান্ট-শার্টসহ অন্যান্য পোশাক ক্রয়মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট