চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

পরিকল্পিত বনায়নে গ্রিন সিটিতে রূপান্তর সম্ভব স্থপতি

আশিক ইমরান সদস্য সিডিএ

১৫ মে, ২০১৯ | ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সরকারি পাহাড়গুলি অন্যায়ভাবে বেশি কাটা হচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়গুলি কিছুটা ভাল। সরকারি পাহাড়ে অবৈধ বসবাস বেশি। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় এই দৃশ্যমান অন্যায়টা দিনের পর দিন ঘটে গেলেও তা বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। আর দুঃখজনক বিষয় হল ওয়াসা, পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাস এসব পাহাড়ে সংযোগ দিচ্ছে। তারা অবাধে এসব সংযোগ পেলেও বৈধগ্রাহকদের তা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অপরদিকে অবৈধ বসবাসকারিরা সহজে সংযোগ পেয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে বসবাসের একটা নৈতিক অধিকার তারা পাচ্ছে। অবৈধ উচ্ছেদ করতে গেলেই আইনগত বাধা আসে।
ঘেরা দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। প্লট তৈরি করা হচ্ছে। নির্বিচারে সবুজ প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। পাহাড় কাটার কারণে তা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে খালে নামছে। জলাবদ্ধতার জন্য এই মাটি অনেকখানি দায়ী। জলাবদ্ধতা নিয়ে বিশাল বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ খাল ভরাটের মাটির উৎস বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। একারণে এই প্রকল্প খুব একটা সফল হবে বলে মনে হচ্ছে না। পৃথিবীর যেসব শহরে পাহাড় আছে তার সবগুলিই সমৃদ্ধ ও দৃষ্টিনন্দন শহর। তারা পাহাড়কে ব্যবহার করে শহরের সৌন্দর্যবর্ধন করেছে। আমরা ঠিক তার বিপরীত কাজটি করে যাচ্ছি। পাহাড় ধ্বংস করে দিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে যাচ্ছি। একটি শহরের শতকরা ২৫ ভাগ সবুজ থাকা দরকার। তাহলেই ওই শহরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকবে। পাহাড়ে পরিকল্পিতভাবে বনায়ন এবং বাগান করে শহরের অক্সিজেনের অভাব পূরণ করার পাশাপাশি গ্রিন সিটিতে রূপান্তর করা সম্ভব। সিটি কর্পোরেশন এবং অন্যান্য সংস্থা সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে পারে। ফলের গাছ লাগানো যেতে পারে। ইকো-টুরিজম করা যেতে পারে। পাহাড়ের পাদদেশে পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে পাহাড় সংরক্ষণ করা যায়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। এরূপ জলাশয় থাকলে ভূগর্ভস্থ পানি রিচার্জ হওয়ার সুযোগ পায়। সেখানে মাছের চাষ করা যায়। এ পানি পরিশোধনের মাধ্যমে নগরবাসীর পানির চাহিদা মেটানোও সম্ভব। এটা পৃথিবীতে নতুন কিছু না।
আমরা যে বিশ^মানের চট্টগ্রামকে নিয়ে ভাবছি তা বাস্তবায়ন করতে গেলে পাহাড়গুলি ধ্বংস না করে যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। সবুজায়ন, পানি সংরক্ষণ, বাগান এবং অন্যান্য যেকোনো উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। পৃথিবীর প্রায় সব শহরগুলিতে এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাদের অনুসরণ করে আমরা কাজগুলি করতে পারি। এর কোনো বিকল্প নেই।
ছিন্নমূল মানুষের জীবনের বিনিময়ে প্রভাবশালী লোকের আর্থিক লোভের কারণে অবৈধ বসবাস অব্যাহত রয়েছে। এই শহরে যারা বসবাস করেন, সবাইকেই এই শহরকে আপন ভাবতে হবে। ব্লেম গেম না খেলে সম্ভাব্য সমাধানের বিষয়ে আন্তরিক হতে হবে সংস্থাগুলিকে। প্রকৃতি নিজেই নিজেকে গড়ে তুলে। কিন্তু সেই সুযোগটা দিতে হবে। আমাদের মাটির যে উর্বরতা তাতে অত্যন্ত কম খরচে পাহাড়ের পাদদেশের সৌন্দর্যবর্ধন করতে পারি। প্রবর্তক পাহাড়ে যেটা ঘটেছে তা একটি ক্রাইম।
সিডিএ’র মাস্টারপ্ল্যানে পাহাড়ের ব্যবহার সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। সিডিএ’র ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় শহরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নির্দেশনা রয়েছে। পাহাড় কিভাবে ব্যবহার করতে হবে তার নির্দেশনা রয়েছে। তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করলে পাহাড় নষ্ট হবে না। বরং সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করতে পারে।
সাধারণত আমাদের মানসিকতা হল, আমার বাড়ির সীমানা দেয়াল বা গেটের বাইরের যা কিছু আছে তা আমার নয়। তাই আমরা অবাধে বাইরের পরিবেশ নষ্ট করি। পাহাড় কাটি। কিন্তু নির্মল পরিবেশে বাঁচার জন্য বাড়ির বাইরের অংশটুকুকেও নিজের মনে করতে হবে। এই শহরের প্রতিটি ইঞ্চি আমার। দেয়াল না দিয়ে বাগান করলাম। তাতে মানুষ একটু গিয়ে বসতে পারে। তাহলে বেদখল হওয়ার ঝুঁকিও থাকে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট