চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মুক্তিযোদ্ধা এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী

কৈয়াছড়া চা বাগানের যুদ্ধে পাকবাহিনী বিপুল অস্ত্র-রসদ ফেলে পালিয়ে যায়

বিশ্বজিৎ রাহা হ ফটিকছড়ি

৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ফটিকছড়ির কৈয়াছড়া ও আছিয়া চা বাগানের মধ্যস্থলে হালদা নদীতে পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধ ছিল আমাদের প্রথম সফল অপারেশন। সে যুদ্ধে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে টিকতে না পেরে রণে ভঙ্গ দিয়ে পলায়ন করে। সেখান থেকে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, রসদ, কম্বল এবং বিপুল পরিমাণ চা ভর্তি পেটি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। ফটিকছড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ২৬মার্চ যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তখন তিনি নাজিরহাট কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। সে সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া চৌধুরী গ্রুপ) এর নাজিরহাট কলেজ শাখার ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তিনি শহীদ জহুরুল হক, আলমগীর চৌধুরী, তাঁর চাচাতো ভাই মাহাবুল আলম চৌধুরী, খায়রুল বশর চৌধুরী (নেভাল) প্রমুখ সহ ১২/১৪জনের একটি দল ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তারা প্রথমে কর্ণফুলী চা বাগানের ভেতর দিয়ে লক্ষ্মীছড়ি-মানিকছড়ি হয়ে তিনদিন হাঁটার পর ভারতের পূর্ব ত্রিপুরার গান্ধীনগর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে তারা ত্রিপুরার হরিনা ট্রেনিং ক্যাম্পে চলে আসেন। সেখানে ১২/১৪দিন থাকার পর তাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রথমে আগরতলা, সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের কল্যানী ট্রেনিং ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মেরিন কমান্ডো ট্রেনিংএর জন্য তাদের ১০/১২জনকে পলাশীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভগীরতী নদীতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ভারতীয় কমান্ডো কর্নেল মাটিস, লে.দাশ বাবু, এবং পাকিস্তান নৌবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা বাঙালি অফিসার এন ডব্লিউ চৌধুরীসহ ১০/১২জন অফিসার তাদের ট্রেনিং দিতেন। মাসখানেক ট্রেনিং দেয়ার পর সেখান থেকে তাঁকে, মাহাবুল আলম চৌধুরী, আলমগীর চৌধুরী, আমান উল্লাহ্ চৌধুরী, মো.মুছাসহ বেশ কয়েকজনকে গেরিলা ট্রেনিংএর জন্য কোচবিহার জেলার চাকুলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেড়মাস গেরিলা ট্রেনিংএর পর তাদের পূনরায় সাব্রুম লিচু বাগান এলাকায় আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। অতপর হরিনা ক্যাম্পে নাম ঠিকানা এন্ট্রি করে জুলাই মাসের শেষ দিকে (সঠিক তারিখ মনে নেই) তাদের ৩০/৩৫জনের একটি দলকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ফেনী সীমান্ত দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ফেনী থেকে তারা প্রথমে মিরসরাই এবং অতপর তারা পাহাড়ি পথে ফটিকছড়ি প্রবেশ করেন।

ফটিকছড়িতে তারা হালদা নদীর পাড়ে কৈয়াছড়া চা বাগান এলাকায় অবস্থানকালীন খবর আসে যে হালদা নদী দিয়ে হালদা ভ্যালি চা বাগানের চা পাতার পেটি ভর্তি তিন চারটি নৌকায় করে পাক বাহিনীর সদস্যরা ফটিকছড়ি সদরের দিকে আসছে। এ খবরের ভিত্তিতে গ্রুপ কমান্ডার আমান উল্লাহ্ চৌধুরী, ডেপুটি কমান্ডার আলমগীর চৌধুরী প্রমুখের নেতৃত্বে ৩০/৩৫জনের মুক্তিযোদ্ধা দলটি কৈয়াছড়া চা বাগান এবং আছিয়া চা বাগানের মধ্যবর্তী স্থানে হালদা নদীর পাড়ে এ্যাম্বুশ করেন। বেলা ২টা আড়াইটা নাগাদ পাক বাহিনীর নৌকাগুলো নিকট দুরত্বে এলে ফায়ার ওপেন করা হয়। উভয় পক্ষে তুমুল গোলাগুলি শুরু হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বন্দুক যুদ্ধের এক পর্যায়ে পাকবাহিনী নৌকাগুলো ফেলে যেতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ হতাহত হয়নি বলে তিনি জানান। অপর পক্ষে পাক বাহিনীর কেউ হতাহত হয়েছে কিনা জানা যায়নি। তবে পাকবাহিনীর ফেলে যাওয়া নৌকা থেকে বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, কম্বল, রসদপত্র, এবং বিপুল পরিমাণ চা পাতার পেটি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয় । এরপর বিভিন্ন স্থানে অভিযানের পর ১০ডিসেম্বর তারা ফটিকছড়ি থানা সদর বিবিরহাটে চলে আসেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্মুখী আক্রমণের কারণে এর মধ্যে পাক বাহিনী ফটিকছড়ি ছেড়ে হাটহাজারীর দিকে চলে যায়। স্বাধীন হয় ফটিকছড়ি। তিনি একাধিকবার ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট