চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে সিদ্ধান্ত

চবিতে ছাত্রলীগ একাংশের ডাকা অবরোধ শিথিল

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা বিলম্বিত করাই মূল কারণ বলে দাবি

নিজস্ব সংবাদদাতা হ চবি

৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের একাংশের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শিথিল করা হয়েছে। আগামী ৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবরোধের ডাক দেওয়া সিএফসি গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এর আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ সিএফসি ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস। তবে এর নেপথ্যের কারণ হিসেবে শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে বিলম্বিত করাই মূল বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের একাংশ।

অবরোধ শিথিল করার বিষয়ে গতকাল (সোমবার) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের নেতা রেজাউল হক রুবেল, রাষ্ট্রপতির সম্মানে অবরোধ শিথিল করা হলেও বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এছাড়া দুই নেতাকর্মীকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদেরর বহিষ্কার ও পদত্যাগের দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের বিচার প্রধান ইস্যু হলেও নেপথ্যের কারণ হিসেবে শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা বিলম্বিত করাই মূল বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের অপর একটি অংশ ভিএক্স। ভিএক্স গ্রুপের অভিযোগ, শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলম্বিত করতে পরিকল্পিতভাবে সংঘর্ষ বাঁধিয়েছে ছাত্রলীগ সভাপতি। অন্যদিকে সিএফসি গ্রুপের দাবি, কমিটি ভাঙতেই ভিএক্স এই সংঘর্ষ বাঁধিয়েছে। সংঘর্ষের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক ও ভিএক্স গ্রুপের নেতা মিজানুর রহমান বিপুল বলেন, ‘আমরা কিছু দিন আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার সদিচ্ছা সভাপতির নেই। কমিটি বিলম্বিত করতেই পরিকল্পিতভাবে তিনি এগুলো ঘটিয়েছেন’। তিনি বলেন, ‘একইসাথে সামনে সিন্ডিকেট নির্বাচনে বিভিন্ন ফায়দা হাসিল করতে উপাচার্যকে চাপে রাখতেও এই পরিকল্পনা তাদের’।
তবে এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের নেতা রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর শাখা ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি ভাঙতে বিপুল-দুর্জয় গ্যাং মরিয়া হয়ে উঠেছে’।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অবরোধের কারণে কয়েকটি বিভাগের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে সকাল থেকে নির্ধারিত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে শাটল ট্রেন চলাচল করেছে। এছাড়া শিক্ষক বাসগুলোও নির্ধারিত গন্তব্যে ছেড়ে গেছে।
ষোলশহর রেল স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার তন্ময় চৌধুরী জানান, রোববার রাতে নিরাপত্তাজনিত কারণে শাটল ট্রেন বন্ধ রাখা হলেও, সকাল থেকে নির্ধারিত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে ট্রেন চলাচল করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এসএম মনিরুল হাসান বলেন, চলমান শিক্ষার পরিবেশ শান্ত ও সুষ্ঠু রাখতে চবি প্রশাসন বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যেই অপরাধী শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে’।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ নভেম্বর রাতে শহীদ আব্দুর রব হলের টিভি রুমে সিএফসি ও ভিএক্স গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষ বাঁধে। সেদিন উভয় পক্ষের সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। কিন্তু পরদিনই সিএফসির কর্মীরা ওই হলে অবস্থানরত ভিএক্সের কর্মীদের মারধর করে বলে অভিযোগ ভিএক্স পক্ষের। এ সময় পাঁচ কর্মী আহত হলে দুইজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় সিএফসি গ্রুপের সিনিয়র নেতাসহ ১৫ জনকে বাদি করে হাটহাজারী থানায় একটি মামলা করে ভিএক্স গ্রুপ। এরমধ্যে গত রোববার সন্ধ্যায় হাটহাজারী উপজেলার এগারো মাইল এলাকায় সিএফসি গ্রুপের নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন সুমন ও ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান রাফিকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠে ভিক্সের কর্মীদের বিরুদ্ধে। এমন খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষ ফের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে থাকা পুলিশের পাঁচটি গাড়ি, প্রক্টরের গাড়ি ও ওয়াচ-টাওয়ারে ভাংচুর করা হয়। পরে দুই ছাত্রলীগ নেতার ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিতে অনির্দিষ্টকাল অবরোধের ডাক দেয় সিএফসি গ্রুপের নেতাকর্মীরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট