চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

সর্বশেষ:

উৎপাদন বাড়াতে সাগরে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা
প্রতীকী ছবি

বাস্তবায়নে কঠোর কার্যক্রম চালাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো

উৎপাদন বাড়াতে সাগরে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা

মোহাম্মদ আলী

১৪ এপ্রিল, ২০২৫ | ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

উৎপাদন বাড়াতে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ৫৮ দিনের জন্য বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে মৎস্য অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এ লক্ষ্যে তারা মোবাইল টিম পরিচালনাসহ কঠোর কার্যক্রম চালাবে।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের উপকূলীয় ১৪ জেলা, ৩৫ উপজেলা ও চট্টগ্রাম মহানগরে মৎস্য আহরণের এই নিষেধাজ্ঞা চলবে। বিশেষ করে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন চট্টগ্রামের পাঁচ উপকূলীয় উপজেলা সদ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার পতেঙ্গা, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকবে। এ সময়ে চট্টগ্রামের ৪০ হাজারের অধিক সামুদ্রিক জেলে মৎস্য আহরণ করতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে- সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন এবং সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ করা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে। এর আগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলোকে ২০১১ সাল থেকেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়, যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় মোট জেলে রয়েছে ৫৩ হাজার। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকার জেলেদের সহযোগিতা প্রদান করবে। প্রত্যেক জেলেকে ৭৭ কেজি করে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে চাল বরাদ্দ দেবে। ২০২৪ সালে ২৭ হাজার জেলেকে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ বছর ৪০ হাজার জেলেকে চাল প্রদানের জন্য সরকারের কাছে বরাদ্দ চেয়েছে জেলা মৎস্য অফিস। বরাদ্দ প্রাপ্তিসাপেক্ষে এসব চাল বিতরণ করা হবে।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, সারাদেশে মৎস্য উৎপাদন ৪৭ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ইলিশ উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। একক প্রজাতি হিসেবে দেশে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় ইলিশ। যা মোট মৎস্য উৎপাদনের ১১ শতাংশেরও বেশি। দেশে চাহিদার তুলনায় মৎস্য উৎপাদন হয় বেশি। একজন মানুষের দৈনিক ৬২ গ্রাম মাছের চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে দেশের মানুষ খেতে পারে ৬৭ দশমিক ২৫ গ্রাম মাছ।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ পূর্বকোণকে বলেন, মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় ৫৮ দিন সকল প্রকার মৎস্য নৌযান কর্তৃক যেকোন প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। আগামীকাল ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা চলবে। নিষেধাজ্ঞা সফল করার লক্ষ্যে জনসচেতনতা ও ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। তাছাড়া নিষেধাজ্ঞা শুরুর পূর্বে নৌযানসমূহের তীরে ফিরে আসা নিশ্চিত, মেরিন ফিশারিজ সার্ভেলেন্স চেকপোস্টে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার, সমুদ্র তীরবর্তী বরফকলসমূহের বরফ উৎপাদন সীমিত করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাগরে মাছের নিষেধাজ্ঞা ছিল ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন। কিন্তু চলতি ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এটি পরিবর্তন করে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন মেয়াদে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট