চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহার চলছেই

হ দ্রুত নষ্ট হচ্ছে সড়কের কার্পেটিং ও সিলকোটিং হ নিষেধ মানছে না কিছু অসাধু আমদানিকারক হ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে বিএসটিআই

নওশের আলী খান

১৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:০১ পূর্বাহ্ণ

নি¤œমানের বিটুমিনের ব্যবহার এখনো কমেনি। মন্ত্রণালয়ের বিধিনিষেধ থাকার পরও কিছু অসাধু আমদানিকারক এই বিটুমিন আমদানি করে অবাধে বিক্রি করছে। ফলে কার্পেটিং ও সিলকোটিং বিনষ্ট হয়ে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে সড়ক। তবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও সড়ক বিভাগ নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহার করছে না বলে জানিয়েছে।

দেশের সড়কগুলোর কার্পেটিং দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিটুমিন ব্যবহারের উপর কড়াকড়ি আরোপ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে সবক্ষেত্রে সড়কের কার্পেটিংয়ের জন্য উন্নতমানের ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।

২০১৫ সালে মন্ত্রণালয় থেকে এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারির চার বছর পরও তা কার্যকর হয়নি। যেনতেন প্রকারের বিটুমিন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা ফিরেনি। উল্টো ইরান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ হয়ে আনা নি¤œমানের ইরানি বিটুমিনের ব্যবহার বেড়ে গেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। ড্রামে করে এসব বিটুমিন দেশে এনে গলিয়ে বাল্কে বিক্রি করা হচ্ছে। আগে চট্টগ্রাম বন্দরের আশেপাশে এ ধরনের বিটুমিন গলানো হতো। এখন খোদ থানার আশেপাশেই রীতিমতো চুল্লি বসিয়ে নি¤œমানের ড্রামজাত বিটুমিন গলানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, নি¤œমানের ইরানি পাতলা বিটুমিন অনেকটা নামমাত্র মূল্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা হয়। দামে সস্তা হওয়ায় অনেক ঠিকাদার এই বিটুমিন ব্যবহার করেন। নি¤œমানের বিটুমিন ধুসর রংয়ের হয়। এর সাথে গিলসোনাইড নামের কেমিক্যাল মিশানোর ফলে এসব বিটুমিন অতি কালো দেখায়। ফলে আপাতদৃষ্টিতে কার্পেটিংয়ের পরে দেখতে অনেক ভালো মনে হয়। শুকনো মৌসুমের কিছুদিন সড়ক ভালোও থাকে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই তা দ্রুত গাড়ির চাকার সঙ্গে উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। আবার অতিরিক্ত গরমে গলে গিয়েও সড়কের উপরের কার্পেটিং এবড়ো থেবড়ো হয়ে যায়। জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে দুই জায়গায় এবং নোয়াখালীতে প্রকাশ্যে সড়কের কাছে ইরান থেকে ড্রামে করে আমদানি করা নি¤œমানের বিটুমিন গলানো হচ্ছে। এরমধ্যে সীতাকু-ের ছোট কুমিরা, বার আউলিয়া এলাকায় ড্রামের বিটুমিন বাল্কে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। এর বাইরে নোয়াখালী পৌরসভা এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানও একই কাজ করছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ড্রাম বিটুমিন আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু নজরদারির অভাবে এসব বাধ্যবাধকতা মানছেন না কতিপয় আমদানিকারক। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেখান থেকে সরাসরি বিটুমিন বাংলাদেশে আমদানি করা যায় না। এ জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন বন্দর ব্যবহার করে এ দেশে নিম্নমানের এসব বিটুমিন আমদানি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে বছরে বিটুমিনের চাহিদা সাড়ে চার লাখ টন। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি (ইআরএল) উৎপাদন করে ৭০ হাজার টনের মতো। বে টারমিনাল লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে বিদেশ থেকে বাল্কে বিটুমিন আমদানি করে থাকে। ইস্টার্ন রিফাইনারী লিমিটেড (ইঅরএল) ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বে টারমিনাল লিমিটেডের বিটুমিনের গুণগত মান ঠিক রেখেই তা বাজারজাত করে। নি¤œমানের বিটুমিনের ড্রামের দাম ইআরএল থেকে ২ হাজার টাকা কম।
ইস্টার্ন রিফাইনারীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আক্তারুল হক বলেন, ইআরএল দুই ধরণের বিটুমিন প্রস্তুত করে। ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন এবং ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন। উন্নত মানের ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিনের দাম প্রতি ড্রাম ৯ হাজার চারশ টাকা। ৮০ গ্রেডের দাম ৯ হাজার টাকা। তিনি বলেন সড়কের কার্পেটিং অনেক কারণে নষ্ট হতে পারে। তবে মানসম্পন্ন বিটুমিন ব্যবহার হলো প্রধান শর্ত। আমরা শুনেছি কিছু আমদানিকারক উল্টা পাল্টা বিটুমিন দেশে আমদানি করে গলায়। তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এ ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ২০১৮ সালের ১০ মার্চ সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব এসফল্ট প্ল্যান্ট চালু হয়েছে। এরপর থেকে নগরীর সড়ক সংস্কার ও সড়ক নির্মাণে ইস্টার্ন রিফাইনারীর ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদারগণের উপর এসফল্ট প্ল্যান্টের বিটুমিন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমদের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, সড়ক বিভাগ ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করে। ইরানে শুধু নি¤œমানের বিটুমিন প্রস্তুত হয় তা নয়। ভাল মানের বিটুমিনও তৈরি হয়। তিনি আরো বলেন, বন্দরে বিটুমিন আসার পর বিএসটিআই পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে। প্রয়োজনে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট