চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অধ্যাপক চিত্তপ্রসাদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে আবুল মোমেন

সামগ্রিক শিক্ষায় বড় অবক্ষয় হয়েছে

১২ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বড়ো ধরনের অবক্ষয় ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবী আবুল মোমেন। গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক চিত্তপ্রসাদ তালুকদারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। বক্তব্যে আবুল মোমেন বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘দেশে এখন শিক্ষায় ব্যাপকতা এসেছে। সকলেই শিক্ষা গ্রহণ করছে। কিন্তু শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাক্ষেত্রে বড় রকমের একটা অবক্ষয় হয়েছে, যার চরম দৃষ্টান্ত আমরা দিন দুয়েক আগে পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষকতা কেবলমাত্র পেশা হতে পারে না। এটা জীবিকা বটে, কিন্তু এই পেশা জীবনের জন্য। ফলে একজন শিক্ষক যখন শ্রেণিকক্ষে পড়ান তখনও তিনি শিক্ষক, আবার এর বাইরে যখন তিনি কথা বলেন, অন্যের সঙ্গে পরিচিত হন তখনও তিনি শিক্ষক। তিনি শুধু বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নন, তিনি জীবনভিত্তিক শিক্ষক। ছাত্রের জীবন গঠনের প্রক্রিয়ায় শিক্ষককে অনেক শিক্ষা দিতে হয়। জীবন তো কেবল যাপন বা পরকালের জন্য নয়, এই জীবনকে উপভোগ করা, এটা মানুষকে শেখাতে হয় শিক্ষকদের।’

‘একটা সময় ছিল, আমাদের শিক্ষকরা কি পাননি, কি কমতি হলো- এটা নিয়ে তাদের মধ্যে আফসোস ছিল না। ছাত্রের সাফল্যে-প্রাপ্তিতে আনন্দিত হওয়া, জীবনমুখী একটা অনুভূতি অর্জন করা এটা তাদের মধ্যে ছিল। মানুষে-মানুষে মৈত্রী-ভালোবাসা ছড়াতেন শিক্ষকরাই। এর বিনিময়ে তারা কিছু চাননি। এখন মানুষে-মানুষে প্রতিযোগিতা, বিবাদ, সহিংসতা হচ্ছে। আজকের সমাজে তার অভাব কারণ চিত্তপ্রসাদ তালুকদারদের মতো শিক্ষকদের সংখ্যা সমাজে কমে গেছে। তিনি শিক্ষক ছিলেন, তিনি কখনো বিত্তের সাধনা করেননি, তিনি চিত্তের সাধনা করেছেন।’ বলেন আবুল মোমেন সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় গলদের প্রসঙ্গ টেনেছেন আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকও। তিনি বলেন, ‘ যে শিক্ষা অপরকে ভালোবাসতে শেখায় না, সে শিক্ষা শিক্ষাই নয়। আমাদের সমাজ কোথায় চলে গেছে, গত দুই-তিনদিন ধরে তার একটা চিত্র আমরা দেখছি। বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমাদের সামাজিক শিক্ষার চিত্র এখন এটাই। পরমতসহিষ্ণুতা বলে যে একটা বিষয় আছে, আমাদের সমাজ থেকে সেটা হারিয়ে যাচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে- আমি যেটা বলছি সেটাই তোমাকে শুনতে হবে, না হলে তোমাকে দুনিয়া থেকে সরে যেতে হবে। এই যে গলদ, এটা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ।’সম্মাননা গ্রহণের পর প্রতিক্রিয়ায় চিত্তপ্রসাদ তালুকদার বলেন, ‘শেষ বয়সে এসে এত সম্মান পাব ভাবিনি। আমি অভিভূত। সারাজীবন আমি শিক্ষকতা করেছি। আমার বাবাও ছিলেন একজন শিক্ষক। শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আমি ছিলাম, এটা আমার গর্ব।’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইস্ট- ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর মু. সিকান্দার খান। ১৯২৬ সালে হাটহাজারী উপজেলায় জন্ম নেওয়া চিত্তপ্রসাদ তালুকদার ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করেন। তবে বিএ পাশ করার পরেই তিনি স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিয়েছিলেন। পরে তিনি বিভিন্ন কলেজে বাংলা বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন।-বিজ্ঞপ্তি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট