চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

পদ পেতে আগ্রহী যুবলীগ সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাও

নগর আ. লীগের সম্মেলন

ইফতেখারুল ইসলাম

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

হ স্থান খালি না হলে নতুন
নেতৃত্ব সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ
থাকে না। ত্যাগী ও পরীক্ষিত
নেতাদের দায়িত্ব দেয়া উচিত

নগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকরা তাকিয়ে আছেন নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিকে। তাদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটিতে স্থান পেতে চান। কিন্তু আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন-তারিখ ঠিক না হওয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার ঘোষণা দিতেও দ্বিধা করছেন তারা। তবে যুবলীগের সম্মেলনের তোড়জোড় শুরু হওয়ার পর থেকে যুবলীগ নেতা এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

তৃণমূলের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে তাঁরা জানান, যারা দীর্ঘ দিন ধরে যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তাদের আওয়ামী লীগে যাওয়া উচিত। কারণ স্থান খালি না হলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ থাকে না। ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দায়িত্ব দেয়া উচিত। তবে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে সাবেক ছাত্রলীগ এবং বর্তমান যুবলীগ নেতাদের অনেকেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাতে বর্তমান কমিটির আহবায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম দিদার, মাহাবুবুল হক সুমনও রয়েছেন। এছাড়া সাবেক কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আবদুল মান্নান ফেরদৌস, নগর যুবলীগের সদস্য হাসান মুরাদ বিপ্লব, ছাত্রলীগের সাবেক স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য দিদারুল আলম দিদার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য দেবাশীষ পাল দেবু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম, যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আনোয়ারসহ অনেকেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর অন্তর সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা। ১৯৮৯-৯০ সালে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ৬৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছিল, ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন নোমান আল-মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শফিকুল হাসান। এরপর ২০০৩ সালের জুলাই মাসে মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। কিন্তু কমিটি ঘোষণা নিয়ে সংঘর্ষের জেরে তা প- হয়ে যায়। এর দেড় বছর পর চন্দন ধরকে আহ্বায়ক ও মশিউর রহমানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের জুলাইয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক ও ফরিদ মাহমুদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে আবারও ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। সেই আহ্বায়ক কমিটিও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। দীর্ঘদিন পার হয়ে যাওয়ায় এখন ওই কমিটিও অনেকটাই নামসর্বস্ব। কমিটির সদস্যসহ নগর যুবলীগের অনেক নেতাই আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন।

নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি চলছে উল্লেখ করে বলেন, সংগঠনের চেয়ারম্যান যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবে কাজ করবো। তবে আসন্ন কমিটিতে কোন পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
যুগ্ম আহবায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, আসন্ন সম্মেলনে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়কদের মধ্য থেকে কেউ প্রার্থী হবেন কিনা তা চূড়ান্ত হয়নি। মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এটা চূড়ান্ত করা হবে। তবে সম্মেলনের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি চলছে।

যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মান্নান ফেরদৌস পূর্বকোণকে বলেন, নিয়মিত সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি না হলে নতুন নেতৃত্ব উঠার সুযোগ হয় না। ২০১৩ সালে যে কমিটি গঠিত হয়েছিল নিয়মানুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে আরেকটি কমিটি যদি দিত, তাহলে চট্টগ্রাম শহরে আরেক ঝাঁক নতুন নেতা-কর্মী পেত যুবলীগ। যার মাধ্যমে দল সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হত। তিনি নিজেও নগর যুবলীগের সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদকের যেকোন একটি পদ পেতে আগ্রহী বলে জানান।
নগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ সদস্য ওয়ার্ড কাউন্সিরর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ার কারণে অনেক কর্মী পদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। নিয়মিত সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হলে নেতৃত্ব সৃষ্টি হত। একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে তিনি নগর যুবলীগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে যেকোন একটি পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন উল্লেখ করে বলেন, যদি তাকে মূল্যায়ন করা হয় তাহলে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে ঝিমিয়ে পড়া যুবলীগকে ওয়ার্ড পর্যায়ে চাঙ্গা করবেন।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে নিষ্ঠার সাথে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। দলের দুঃসময়ে রাজপথে ছিলাম। অনেকেই যারা দলের দুঃসময়ে নিজেকে দলীয় পরিচয় দিতে লজ্জা পেয়েছে তাদের অনেকেই দেখি এখন বড় পদ পাওয়ার জন্য তদবির করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যদি ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে তিনি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য দেবাশীষ পাল দেবু বলেন, ওমর ফারুক চৌধুরীর নেতৃত্বে কাজ করার সুযোগ হয়েছে তার। তিনি আশা প্রকাশ করেন যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে আছেন, দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারাই দায়িত্ব পাবেন। নগর যুবলীগের দায়িত্ব পেলে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করার কথাও উল্লেখ করে তিনি।

সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা নূরুল আনোয়ার বলেন, ছাত্রলীগের তৃণমূল রাজনীতি থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার আদায়ে রাজপথে সবসময় সরব ছিলাম। প্রয়াত চট্টলবীর আলহাজ এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগ থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যুবলীগের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। শ্রম, মেধা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে আগামীতে যুবলীগকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়ার একটি শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আসন্ন কমিটিতে তাকে মূল্যায়নের ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নগর যুবলীগের পদ প্রত্যাশী সাহেদ হোসেন টিটু দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের রাজনীতি করছেন উল্লেখ করে বলেন, সম্মেলনের খবর শুনে তৃণমূলের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন ত্যাগী নেতারাই কমিটিতে স্থান পাবেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট