চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই এসব রেস্তোরাঁর ক্রেতা

‘ডার্ক’ রেস্টুরেন্টে এসব কী হচ্ছে?

ইমরান বিন ছবুর # ছবি : সংগৃহীত

৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ৩:০৬ অপরাহ্ণ

নগরীর চকবাজারের ফুলকলির উপরে দ্বিতীয় তলায় সিটি হার্ট রেস্টুরেন্ট। দরজার সামনে সাইনবোর্ডে লেখা ‘ক্যাপলদের জন্য সুব্যবস্থা আছে’। দরজা ঠেলে প্রবেশ করতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। চোখে অনেকটা ঘোর লেগে যায়। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে চোখের ঘোর কাটিয়ে ম্যানেজারের ঝাপসা চেহারা দেখা গেলেও ভিতরের কি চলছে তা বুঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু পাশ থেকে কয়েকজন ছেলে-মেয়ের শব্দ কানে আসছে। কয়েক পা এগোতেই দেখা গেল বেড়া দেয়ার মত অনেকটা চেয়ার।

আঁটোসাঁটো চেয়ারের সামনে ছোট একটি টেবিল। টেবিলের এক পাশে বসানো চেয়ারের লম্বাটে সিটে অনেকটা ঠাসাঠাসি করে দু’ জনকে বসতে হয়। কিন্তু তাদের চেহারা ভালভাবে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু বুঝা যাচ্ছে এরা স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী। আরেকটু সামনে এগোনোর চেষ্টা করলেই রেস্টেুরেন্টের ম্যানেজার তার পাশের চেয়ারে বসার অনুরোধ জানান। অন্ধকার রেস্টুরেন্টগুলো নগরীতে ‘ডার্ক রেস্টুরেন্ট’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, চকবাজারের শাহেন শাহ্ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ক্যাফে আইল্যান্ড, চকবাজার মোড়ে এপেক্স এর উপরে লগঅন, মতি কমপ্লেক্সের বিপরীতে ফুলকলির উপরে দ্বিতীয় তলায় সিটি হার্ট এবং তৃতীয় তলায় ওয়েল ক্যাফে । অনৈতিক কাজের উদ্দেশ্যে চকবাজারের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর এখানে আসে। এগুলোর বাইরেও চকবাজারে আরো অসংখ্য ডার্ক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে রেস্টুরেন্ট মালিকরা এ অনৈতিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

নগরীর ‘শিক্ষাপাড়া’ খ্যাত চকবাজার এলাকায় শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে অসংখ্য ডার্ক রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের অনৈতিক কাজের সুবিধা করে দেয়ায় হচ্ছে এসব ডার্ক রেস্টেুরেন্টের মূল কাজ। তাই নগরীর স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অনৈতিক কাজ করার উদ্দেশ্যে আসে এসব ডার্ক রেস্টেুরেন্টে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই এসব রেস্টুরেন্টের মূল টার্গেট। অনেক সময় রেস্টুরেন্ট মালিক বা কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা আদায় করে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অঞ্জন কুমার নন্দী বলেন, এসব রেস্টুরেন্ট নিয়ে আমরা খুবই বিব্রত। কিছু কিছু দোকানদার এটাকে ব্যবসায়ে পরিণত করেছে। আমরা পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে যেতে পারি না। যেসব মার্কেটে রেস্টুরেন্ট রয়েছে, সেসব মার্কেটেও যেতে পারি না। প্রশাসন কি এসব দেখে না? শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এসব রেস্টুরেন্ট নামের অনৈতিক কর্মকা-ের স্থানগুলো দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, আমরা গত বুধবার চকবাজারের কয়েকটি ডার্ক রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়েছি। রেস্টুরেন্টে অশ্লীল কর্মকা- করার সুযোগ দেয়ায় চকবাজার মোড়স্থ আড্ডা, ড্রিমস, প্যারাডাইজ ও ফেসবুক রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছি। এসময় কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে আটক করা হয়। কিন্ত তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করি। ভবিষ্যতে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, রেস্টুরেন্ট চলবে রেস্টুরেন্টের মত। এখানে আবার ‘ডার্ক রেস্টুরেন্ট’ কিসের? আমরা এসব রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে আগেও অভিযান চালিয়েছি এবং কয়েকটি রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছি। রেন্টুরেন্টে পর্দা ব্যবহার বা ছোট ছোট কক্ষ করা, এসব চলবে না। এসব রেস্টুরেন্ট যারা চালাবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদুল করিম জানান, চকবাজারে শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ‘ডার্ক’ রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলেছে। যেখানে অনেক অনৈতিক কাজ হয়ে থাকে। আবার ছাত্রলীগের নাম বিক্রি করে কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজ এসব রেস্টুরেন্ট মালিকদের থেকে চাঁদা নিয়ে প্রশাসন ম্যানেজ করে। কয়েকমাস আগে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসব ডার্ক রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার জন্য আমরা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করেছি। তখন কয়েকটি রেস্টুরেন্ট বন্ধও করে দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এসব আবার চালু হয়েছে।

মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মো. আনোয়ার হোসেন পলাশ জানান, চকবাজার এলাকায় যতগুলো ডার্ক রেস্টুরেন্ট রয়েছে সব বন্ধ করে দেয়া উচিত। প্রশাসনের এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। অন্যতায় শিক্ষার্থীরা বিপথে পা বাড়াবে। এই চকবাজারকে সবাই শিক্ষাপাড়া হিসেবে চিনে। এই এলাকায় যদি এসব হয় তাহলে চকবাজারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম থাকবে না। অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের চকবাজারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে জেলা প্রশাসনের অভিযানে কেয়ারি ইলিশিয়ামের বিপরীতে জিরো ফ্যাট চাইনিজ নামে একটি রেস্টুরেন্টকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে সিলগালা করে দেয়া হয়।

পূর্বকোণ/ আই- এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট