চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আ. লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ, চেষ্টা-তদবির

সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ১৪ অক্টোবর

সুকান্ত বিকাশ ধর হ সাতকানিয়া

৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল গত মঙ্গলবার ঘোষিত হয়েছে। সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ অক্টোবর শুধুমাত্র এ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ। কেন্দ্রে চলছে চেষ্টা-তদবির। তফসিল ঘোষণার পর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন ঢাকামুখী। মনোনয়ন লাভের আশায় তারা কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। যার যার সাধ্যমত দলের প্রভাবশালীদের অনুকম্পা নিয়ে মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে তৎপর রয়েছেন তাঁরা। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বড়-ছোট বিভিন্ন সাইজের পোস্টার,ব্যানার, ফেস্টুন ছাপিয়ে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব ফেসবুক একাউন্ট খুলে এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা নেতাদের পক্ষে নিজস্ব ফেসবুক একাউন্ট থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকা হচ্ছে সাতকানিয়া। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই তাদের সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। তবে তারা আদৌ উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন কিনা? অপরদিকে, বিএনপি-এলডিপি থেকে এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা অনেকটা ক্ষীণ বলে তাদের দলীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে। তাই নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার আগ্রহ নিয়ে অনেকেইে এখন অবস্থান করছেন ঢাকায়। তবে মনোনয়ন পেলেও জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটিতে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবেন কিনা, তা দেখার বিষয় বলে জনমত। জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৪ অক্টোবর সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অতীতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে এখানে ভোটগ্রহণ করা হলেও এবারই প্রথম সবকটি ভোট কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমেই উপজেলা নির্বাচন। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর। ১৫ সেপ্টেম্বর বাছাই ও ২২ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।

বর্তমানে আওয়ামীলীগ থেকে ৮ জন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে প্রাথমিকভাবে শুনা যাচ্ছে। তারা হলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এম.এ সাঈদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ফারুক ডলার, কার্যনির্বাহী সদস্য মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর, সাতকানিয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপি, সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি বশির আহমদ চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবু ছালেহ। এরমধ্যে নুরুল আবছার চৌধুরী, গোলাম ফারুক ডলার, কুতুব উদ্দিন চৌধুরী ও আবু ছালেহ মাঠে বেশ তৎপর। এছাড়াও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও নানা কর্মসূচি পালন করায় তিনিও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে ডা. মিনহাজুর রহমান বলেন, আমি দলের কাছে মনোনয়নের জন্য আবেদন করিনি। ছাত্র জীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে দলের যে কোন দুঃসময়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। যদি দল আমার কর্ম বিবেচনায় নিয়ে মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করব এবং বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও শতভাগ।
অপরদিকে, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সভা শেষে দলের পক্ষ থেকে সাতকানিয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপিকে এককপ্রার্থী করে কেন্দ্রে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে খবর বের হয়। পরে সর্বশেষ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা আসায় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া থমকে যায়। এরমধ্যে উল্লিখিত প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে মাঠ চষে বেড়ালেও দলীয় কর্মসূচির বাইরে তেমন প্রচারণা চালাননি এম.এ মোতালেব। তিনি দেশের বাইরে থাকায় নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য নেয়া যায়নি। তাঁর
উপজেলা আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক মো. সেলিম উদ্দীন বলেন, মোতালেব সাহেব স্ত্রী’র চিকিৎসার কারণে ভারতে রয়েছেন। ৮ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এম.এ সাঈদ বলেন, আমি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম। তাই মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আমি হোপপুল।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, বিগত উপজেলা নির্বাচনে আমার একই বাড়ি থেকে এডভোকেট আবদুর রকিব চৌধুরী প্রার্থী ছিলেন। তাই ষড়যন্ত্রের কারণে আমি হেরেছিলাম। তারপরও মাঠে ছিলাম বলে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি আশাবাদী।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক গোলাম ফারুক ডলার বলেন, তৃণমূলের অনুরোধে আমি আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। যারা আজ দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের কাছে তৃণমূল সবসময় অবহেলিত ছিল। দল মনোনয়ন দিলে দলকে সু-সংগঠিত ও তৃণমূলের মনের দুঃখ ঘুছানোর চেষ্টা করবো।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর বলেন, জীবনের পুরোটা সময় তৃণমূলের সাথে সম্পর্ক রেখে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেছি। তৃণমূলের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক। তাই মনোনয়ন পেলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার পর উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে দলের তৃণমূলদের সংগঠিত করেছি। ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছি এবং সফলও হয়েছি। সব বিবেচনা করলে আমি দলীয় মনোনয়ন পাব বলে আশা রাখি।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বশির আহমদ চৌধুরী বলেন, দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে নেত্রীর সাথে আমি মামলার আসামি হয়েছি। দলের বিপক্ষে কোনদিন এক মুহূর্তের জন্যও সরিনি। মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হব, তা শতভাগ।
দক্ষিণ জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু ছালেহ বলেন, আওয়ামীলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের হাতে ২ ভাইকে হারিয়েছি। শিকার হয়েছি নির্যাতনের। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে থাকায় প্রতিটি ইউনিয়নের আমার পরিচিতি রয়েছে। দলীয় মনোনয়ন পেলে দলের ভোটসহ সাধারণ মানুষের ভোট পেয়ে বিজয়ী হব।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়–যা বলেন, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই নির্ধারিত হবে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী কে? তিনি আরো বলেন, দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপারে তথ্য ও গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে। এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নেত্রীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য সুপারিশও করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট