চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

ভাঙনের মুখে জাতীয় পার্টি

পাল্টাপাল্টি সভা, ইসিতেও চিঠি

শিবুকান্তি দাশ , ঢাকা অফিস

৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:১২ পূর্বাহ্ণ

রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ঘোষণা
‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমিই চেয়ারম্যান’

শেষতক ভেঙ্গে যাচ্ছে এরশাদের জাপা। দলে দেবর-ভাবীর রশি টানাটানির মধ্যেই গতকাল পাল্টাপাল্টি সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করে এ ভাঙ্গনকে চূড়ান্ত রূপ দেয়া হয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার ছোটভাই জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণার দেড় মাস পর গতকাল বৃহস্পতিবার রওশন এরশাদকে তার বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দলের একাংশের উপস্থিতিতে পাল্টা চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। এরপর তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে জিএম কাদের ঘোষণা দিয়েছেন যারা রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দু’পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি চেয়ারম্যান ঘোষণায় দলের মাঝে ভাঙন স্পষ্ট হয়েছে। চেয়ারম্যান ঘোষণার আগে বিরোধীদলীয় উপনেতা জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতীয় পার্টি কি আবার ভাঙতে যাচ্ছে? অতীতে কিন্তু জাপা ভেঙেছে। আসুন সবাই মিলে পার্টিটাকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করি। এরশাদ সাহেব তিলতিল করে পার্টিটাকে কষ্ট করে গড়ে তুলেছেন। এখন সেই পার্টিটাকে ভালো করতে চাই।’ রওশন এরশাদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, গোলাম কিবরিয়া টিপু, মজিবুল হক চুন্নু, ফখরুল ইমাম, লিয়াকত হোসেন খোকা, নুরুল ইসলাম ওমর, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আবদুস সবুর
। ৯ম পৃষ্ঠার ২য় ক.­

আসুদ ও সফিকুল ইসলাম সেন্টু প্রমুখ। রওশনকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণার পর দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পাটির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের বলেছেন, বাহ্যিকভাবে কেউ এটা করতে পারে না। যে কেউ একজন ঘোষণা করলেই হয় না। এ ব্যাপারে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি প্রমুখ।
জিএম কাদের বলেন, যে কেউ ইচ্ছা করলেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করতে পারেন না। এর জন্য দলের গঠনতন্ত্র রয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমি পার্টির চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি দলের গঠনতন্ত্র পড়ে শোনান। বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মৃত্যুর আগে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে গেছেন। তার মৃত্যুর পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। পরে পার্টির প্রেসিডিয়াম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সেটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এরশাদ সাহেব জীবিত থাকাবস্থায় যেভাবে বোর্ড গঠন করেছিলেন, সেভাবেই করা হয়েছে। শুধু একজন সদস্য নিজে থেকে সরে যেতে চাইলে তার স্থানে কাজী ফিরোজ রশীদকে যুক্ত করেছি। জাতীয় নির্বাচন ও একটি উপনির্বাচনে একই বোর্ড নাও হতে পারে। পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই আমি দায়িত্ব পালন করছি।’

এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বে থাকাবস্থায় গত ১৪ জুলাই মারা যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। চারদিনের মাথায় ১৮ জুলাই দুপুরে বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা জানান, এরশাদ অসুস্থাবস্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসা জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
পরে রওশনের বাসায় গিয়ে তার ‘দোয়া’ নিয়ে আসেন কাদের। যদিও কয়েক দিনের মাথায় রওশন এরশাদের প্যাডে হাতে লেখা এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের মারফত আমরা জানতে পেরেছি জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান

জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা আদৌ কোনো যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।’

২৩ জুলাই এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জিএম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভেদ নেই। জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করছে। নেতৃত্বের প্রশ্নে জাতীয় পার্টিতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ গঠনতন্ত্র অনুসরণ করেই চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। কোনো সমস্যা থাকলে আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করবো।’
এরপর দীর্ঘদিন এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্চ্য না হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেই পার্টির চেয়ারম্যান পদে রওশনের নাম ঘোষণা করলো দলের নেতৃত্বের একাংশ।
এদিকে মঙ্গলবার বিরোধী দলীয় নেতা করার দলীয় সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে স্পিকারকে চিঠি দেন জি এম কাদের এমপি। দলীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদসহ ৫ জন সংসদ সদস্য ওই চিঠি স্পিকারের দপ্তরে পৌঁছে দেন। ওই চিঠি গ্রহণ না করার অনুরোধ জানিয়ে স্পিকারকে পাল্টা চিঠি লিখেছেন রওশন এরশাদ। এরপর রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে চিঠি দেয়া হয়। পরে বুধবার বিকেলে রওশন এরশাদের চিঠিটি স্পিকারের হাতে পৌঁছে দেন দলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।
স্পিকারকে দেয়া চিঠির বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেও বলেন, পার্লামেন্টারি বোর্ডের অধিকাংশের মতামত নিয়ে আমাকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে এ চিঠি দেয়া হয়েছে। অন্তত ১৫ জন সংসদ সদস্য আমাকে বিরোধীদলীয় নেতা হতে অনুরোধ করেছেন। তাদের অনুরোধের ভিত্তিতে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এই চিঠি স্পিকারকে পৌঁছে দিয়েছেন।
দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি চিঠি দিলেও বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পাটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর বিরোধীদলীয় নেতা নির্ধারণ নিয়ে বিবাদ দেখা দেয় জাতীয় পার্টিতে। পার্টির অধিকাংশ সংসদ সদস্য মঙ্গলবার বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠি দেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট