নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজার আমতল এলাকায় দিনেদুপুরে ব্যবসায়ীর দশ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। ছিনতাইয়ে জড়িতরা ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে একটি সংগঠনের ব্যানারে আমতল সিডিএ মার্কেট এলাকাতেই আড্ডা দেয় দিনভর। ওই সংগঠনের নামে সিডিএ মার্কেটের উপরে অফিসও নিয়েছে। তবে কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছে ছিনতাইয়ে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে ছিনতাইয়ের নেপথ্যে নেতৃস্থানীয় লোকজন জড়িত রয়েছে।
ঘটনাস্থলের আশেপাশের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি ক্যামেরা) ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ছিনতাইয়ের ঘটনার পর উঠতি বয়সী সাত আটজন যুবক আমতল সিডিএ মার্কেটের গলি দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। যাদের প্রত্যেকের বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে সাদা শার্ট পরিহিত এক যুবকের হাতে ছিনতাই করা টাকার ব্যাগ দেখা যায়।
জানা যায়, ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে কোতোয়ালি থানা পুলিশ একরাম নামে এক যুবকসহ আরো বেশ কয়েকজন যুবককে গতকাল (সোমবার) দুপুরে আটক করেছে। একরাম সিডিএ মার্কেটের ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দেয় সবার কাছে। এছাড়া ছিনতাইয়ের ঘটনায় ইকবাল, মনাসহ যেসব যুবক জড়িত ছিল তারা সবাই সিডিএ মার্কেটের ওই সংগঠনের সাথে জড়িত। মনা একসময় স্টেশন রোডে হকার ছিল। পরে একরামের গ্রুপে যোগ দেয়। ‘ছিনতাই হওয়া টাকার একটি অংশও’ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে গতকাল (সোমবার ) রাতে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের আমরা চিহ্নিত করেছি। একরামসহ বেশ কয়েকজন যুবককে আটক করা প্রসঙ্গে ওসি জাহিদুল জানান, ছিনতাইয়ে জড়িতদের ধরতে আমরা জাল ফেলেছিলাম। ইতিমধ্যে জাল গুটানো হয়েছে। আশা করছি আজ (মঙ্গলবার) ঘটনার বিস্তারিত জানাতে পারব।
গত রবিবার দুপুরে নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজারের নুর এন্টারপ্রাইজ নামে একটি মুঠোফোন দোকানের দুই কর্মচারী মোহাম্মদ রাশেদ ও ত্রিদীপ বড়–য়া ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যাগে নিয়ে ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। টাকার ব্যাগটি ত্রিদীপের হাতে ছিল। দু’জনে আমতল এলাকায় পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সাত আটজন যুবক দুই কর্মচারীকে জটলায় ফেলে টাকার ব্যাগটি কাড়াকাড়ি করে। কর্মচারী ত্রিদীপ ব্যাগ আঁকড়ে ধরে সড়কে লুটিয়ে পড়লে ছিনতাইকারীদের একজন তাকে ছুরিকাঘাত করে ব্যাগটি কেড়ে নেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দশ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত যুবকরা একটি সংগঠনের ব্যানারে সিডিএ মার্কেটে অফিস নিয়েছে। সেখানে তারা দিনভর আড্ডা দেয়। তাদের দৃশ্যমান কোন ব্যবসা নেই। রিয়াজ উদ্দিন বাজার ভিত্তিক দখল-বেদখল, চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ে জড়িত এসব যুবকরা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস করে না। রিয়াজ উদ্দিন বাজার প্যারামাউন্ড মার্কেটে দখল-বেদখল নিয়ে সংঘটিত ঘটনার সাথে এ যুবকরা জড়িত। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে ‘আ’ অদ্যাক্ষরের জনৈক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় তারা নানা অপকর্ম করে বেড়ায় এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা নতুনভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে রিয়াজ উদ্দিন বাজারে। অপরাধীরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে বাজারে ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট করছে। বাজারে মাদকসহ নানা অপকর্ম বেড়ে চলছে। এমতাবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে পদেক্ষেপ না নিলে রেয়াজ উদ্দিন বাজারের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, রবিবার দুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনার পর পর সিডিএ মার্কেটের ওই সংগঠনের সাথে জড়িতদের মার্কেটের গলি দিয়ে দৌড়ে যেতে দেখা যায়। ওই সময় দুই একজনের মুখে মাস্ক পরা ছিল। মুখে মাস্ক ও সাদা শার্ট পরা এক যুবকের হাতে টাকা ভর্তি থলেটি ছিল।
পূর্বকোণ/মাহমুদ