চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

মিতু হত্যা: বাবুলের ‘বিদেশি বান্ধবীর ২৯ এসএমএস’ নিয়ে আসামিপক্ষের জেরা

অনলাইন ডেস্ক

২৩ মে, ২০২৩ | ১১:৪৬ অপরাহ্ণ

মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে ষষ্ঠ দিনে এসে; এদিন আলামত হিসেবে জমা দেওয়া দুটি বই ও ২৯টি এসএমএস নিয়ে দিনভর জেরা চলে।

মঙ্গলবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের পুনঃতলব আবেদনে মোশাররফকে হাজির করা হয়। জেরা শেষে আগামী ১১ জুন মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে দেয় আদালত।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার কক্সবাজারে কর্মরত অবস্থায় বিদেশি এক এনজিওকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে সাত বছর আগে স্ত্রী মিতুকে খুন করেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

বিদেশি ওই নারীর উপহার দেওয়া দুটি বই এবং বাবুলের ‘মোবাইল ফোনে পাঠানো ওই নারীর পাঠানো ২৯টি এসএমএস’ বিষয়ে এদিন মিতুর বাবা মোশারফকে জেরা করে বাবুলের আইনজীবী কফিল উদ্দিন।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন জানান, ২০২১ সালের ১২ মে রাত আনুমানিক ৭টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী পিবিআই অফিসে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সন্তোষ কুমার চাকমার কাছে ‘তালিবান’ ও ‘বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট’ নামে দুটি বই এবং চারটি কাগজের পাতায় মিতুর নিজ হাতের লেখা ২৯টি এসএমএস জমা দেন। এরপর পিপি আবদুর রশিদ ২০২১ সালে মোশাররফ হোসেনের করা মামলার এজাহারটি (যে মামলাটি আর সচল নয়) আদালতে উপস্থাপন করে সেটি তার করা কি না, জানতে চান। তখন মোশাররফ নিশ্চিত করেন এটি তারই করা এজাহার।

এরপর বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন জেরায় বলেন, “যাদের আসামি করেছেন তাদের সবার নাম, বাবার নাম ও ঠিকানা বলেন।”

জবাবে মোশাররফ বলেন, “বাবুল আক্তারসহ অন্য আসামিদের নাম বলতে পারব। তবে বাবুল আক্তার ছাড়া অন্য আসামিদের বাবার নাম ও ঠিকানা এই মুহূর্তে বলতে পারব না।”

আইনজীবী কফিল উদ্দিন তখন জানতে চান, “মামলায় আসামিদের কার কী ভূমিকা লিখেছেন?”

উত্তরে মোশাররফ বলেন, “বাবুল আক্তার ও মুছার (আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা) কথা লেখা হয়েছে।”

তখন কফিল উদ্দিন বলেন, “এই এজাহার যিনি বা যারা বাবুলের শত্রু তারাই বাবুল আক্তারকে টার্গেট করে লিখেছেন, এটি আপনার এজাহার নয়!” জবাবে মোশাররফ বলেন, “ইহা সত্য নয়।”

এরপর বিরতির পর বেলা সোয়া ৩টা আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আলামত হিসেবে জব্দ বই দুটি নিয়ে তাকে জেরা করা হয়।

কফিল উদ্দিন বই দেখিয়ে ‘তালিবান’ নামের বইটির প্রথম পাতায় (মলাটের ভেতর সাদা পাতা) কী লেখা আছে তা মোশাররফকে পড়ে শোনাতে বলেন। জবাবে মোশাররফ বলেন, “আংশিক পড়তে পেরেছি। এটা বাবুলের বিদেশি বান্ধবীর হাতে লেখা।”

কফিল উদ্দিন প্রশ্ন করেন, “এখানে কার জন্মদিন ও কোন তারিখ লেখা আছে?” উত্তরে মোশাররফ বলেন, “জন্মদিন লেখা আছে।”

এরপর আইনজীবী জানতে চান, “আপনি ওই বান্ধবীর হাতের লেখা কোথায় এবং কখন দেখেছেন? বইয়ের তৃতীয় পৃষ্ঠায় কিছু লেখা আছে। ওগুলো কার হাতের লেখা?”

জবাবে মোশাররফ বলেন, “হ্যাঁ। বইতেই দেখেছি। তৃতীয় পৃষ্ঠার লেখা ওই বান্ধবীর।”

তখন আইনজীবী বলেন, “বইয়ের প্রথম ও তৃতীয় পৃষ্ঠার লেখার মধ্যে কোনো মিল নেই।” উত্তরে মোশাররফ বলেন, “আমার দৃষ্টিতে মিল আছে।”এরপর আইনজীবী কফিল উদ্দিন জেরায় বলেন, “আপনার উপস্থাপিত ২৯টি এসএমএস এর কোনোটিরই তারিখ উল্লেখ নেই।”

এতে একমত হন মোশাররফ; এরপর বাবুলের আইনজীবী বলেন, “কাগজের পৃষ্ঠার উপরে যে তারিখ- ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত লেখা আছে, এটা আপনার হাতের লেখা? কোন তারিখে আপনি এগুলো লিখেছেন? মিতু কোন তারিখে আপনাকে এসব এসএমএস বিষয়ে বলেছিল, সেটা কোথাও লেখা আছে?”

জবাবে মোশাররফ বলেন, “তারিখ দিয়ে সময়কাল আমার হাতের লেখা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মিতু আমাদের এ দুটি বই, বাবুলের বিদেশি বান্ধবীর পাঠানো ২৯টি এসএসএম দিয়ে সেগুলো কখন কোনটি পাঠানো সব বলেছিল। সে অনুযায়ী এসএমএস পাঠানোর সময়কাল হিসেবে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত লিখে রেখেছি।”

কফিল ‍উদ্দিন বলেন, “আপনি সাক্ষ্যে বলেছেন বড় দুটি পাতা ও ছোট দুটি পাতা কোনো খাতা বা ডায়েরি থেকে ছেঁড়া হয়নি। কিন্তু এগুলো কোনো বড় ডায়েরি থেকে ছিঁড়ে নেওয়া।” তখন মোশাররফ বলেন, “আমার জানা নেই।”

আইনজীবী কফিল উদ্দিন এসএমএস লিখে রাখা ওই চারটি পৃষ্ঠা ইংরেজি মাধ্যমের কোনো শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার শিট এবং তাতে শিক্ষকের দেওয়া কারেকশন, উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ লেখা আছে বলে দাবি করেন। এর জবাবে মোশাররফ বলেন, ‘তা সত্য নয়’।

উল্লেখ্য, এসপি বাবুল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বদলি হওয়ার পরপরই ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রকাশ্য সড়কে খুন হন মিতু। তারপর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে ছয় বছর পর পিবিআইর তদন্তে বেরিয়ে আসে, বাবুলের পরিকল্পনায়ই খুন হন তার স্ত্রী। এর আগে নানা নাটকীয়তার পর পুলিশের চাকরি ছাড়তে হয় বাবুলকে। বাবুলকে খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে পিবিআই চিহ্নিত করার পর মিতুর বাবা মোশাররফ একটি মামলা করেন। তবে আইনি জটিলতার কারণে এখন বাবুলের করা মামলায়ই তিনিসহ সাত আসামির বিচার চলছে। তথ্যসূত্র : বিডিনিউজ

 

পূর্বকোণ/রাজীব/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট