সমাজের মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ৩৮ বছর অতিক্রম করেছে স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসা। এ উপলক্ষে শনিবার (২১ মে) বেলা ১০টায় নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইপসার প্রধান কার্যালয়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ইপসার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী সকালে সংগঠনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের উপস্থিতিতে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের কার্যক্রম শুরু হয়।
ইপসার সহকারী পরিচালক (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন বিভাগ) গাজী মো. মাইনুদ্দিনের সঞ্চালনায় প্রধান কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় ইপসার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান বলেন, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমাদের প্রাণের সংগঠন ইপসা তার ৩৮ বছর অতিক্রম করেছে। এ দীর্ঘ যাত্রায় আমাদের একটিই প্রচেষ্টা ছিল। তা হলো সকল প্রতিবন্ধকতা পার করে সততা, নিষ্ঠা ও মূল্যবোধ এই তিনকে ধারণ করে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ব বর্তমানে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দাভাব ইত্যাদি প্রকট আকার ধারণ করছে। এই নতুন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সকলকে সর্তক পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সমাজের প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন ধারনা সৃষ্টি ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ইপসা সাধারণ পরিষদের সদস্য ড. শামসুন্নাহার চৌধুরী লোপা। অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (অর্থ) পলাশ চৌধুরী, পরিচালক (সামাজিক উন্নয়ন) মোর্শেদ চৌধুরী, পরিচালক (সামাজিক উন্নয়ন) নাছিম বানুসহ ইপসার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
৩৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার (২০ মে) সীতাকুন্ডে অবস্থিত ইপসার কোর অফিসেও আয়োজন করা হয় নানা বণাঢ্য কর্মসূচি। এতে ইপসার প্রধান নির্বাহীসহ ইপসা সাধারণ পরিষদ, কার্যকরী পরিষদ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ১৬ মে হতে ৩১ মে পর্যন্ত ইপসা’র প্রতিটি কর্ম এলাকার কার্যালয়, ফিল্ড অফিস, প্রকল্প অফিস, ব্রাঞ্চ, লিংক প্রতিষ্ঠান সমূহে স্ব-স্ব উদ্যোগে সংগঠনের সাধারণ সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মরত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি কার্যালয়কে বর্ণিল সাজে সাজানো, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল, দোয়ার আয়োজনসহ বিভিন্ন জনসম্পৃক্ত সৃজনশীল কর্মসূচি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক যুব বর্ষ উদযাপনে ১৯৮৫ সালের ২০ শে মে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কিছু উদ্যোমী যুবসংগঠক সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য ‘ইয়ং পাওয়ার’ নামে একটি যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯১ সালের ২৯ শে এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস পরবর্তিতে ইয়ং পাওয়ার এর যুব সংগঠকবৃন্দ জরুরি ত্রাণ সরবরাহ ও পুনর্বাসন কাজে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয়।
পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে ‘ইয়ং পাওয়ার’ যুব সংগঠনটিই ইপসা (ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন) নামে রূপান্তরিত হয়ে একটি বেসরকারি, অরাজনৈতিক, অলাভজনক সমাজ উন্নয়ন সংগঠন হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। ইতিমধ্যে ইপসা চট্টগ্রাম বিভাগসহ সারাদেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর উন্নয়ন কার্যক্রম ও নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে কর্ম বিস্তৃতি ঘটিয়েছে এবং সুনাম অর্জন করেছে।
যুব ও উন্নয়ন বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখায় ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব ইয়ুথ ফোরাম ও ফেস্টিভেল পর্তুগালে অংশগ্রহণ ও ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক যুব শান্তি পুরস্কার অর্জন করে। বর্তমানে ইপসা জাতিসংঘ ইকোনমিক ও সোশ্যাল কাউন্সিল (ইকোসক) কর্তৃক বিশেষ পরামর্শক পদমর্যাদা প্রাপ্ত সংগঠন হিসেবে সুনামের সাথে কাজ করছে।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ