চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

আমনে ‘শূন্য’, বোরোতেও সংশয়

১৮ মে, ২০২৩ | ১২:০৮ অপরাহ্ণ

আমন মৌসুমে চট্টগ্রামে সরকারি সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ছিল নয় হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে এক ছটাক ধানও কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। এখন বোরো সংগ্রহ নিয়ে সংশয়ে আছেন খাদ্য কর্মকর্তারা।

 

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল কাদের গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে ধান সংগ্রহের মিটিং করে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্ধারণ করা হবে। তাদের কাছ থেকে আমরা ধান কিনব। সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা কম হওয়ায় সব কৃষককে আমরা সুযোগ দিতে পারবো না’। গত আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহ করা যায়নি-এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের বলেন, ‘দেখা যাক এবার কী হয় ?’ দীর্ঘদিনের অভিযোগ, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। গুদামে ‘বকশিস’ না দিলে ধানে চিটা বেশি বলে ফেরত দেওয়া। এতে ধান আনা-নেওয়ায় পরিবহন ও শ্রমিক খরচ গুনতে হয়। এতে লাভের চেয়ে উল্টো লোকসানে পড়েন তারা। তার চেয়ে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে ধান বিক্রিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন চাষিরা।

 

খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে পাঁচ হাজার ৩৫ টন ধান ও ৮০৬ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিকেজি ধান ৩০ টাকা ও মিলারদের কাছ থেকে প্রতিকেজি চাল ৪৪ টাকা দরে কিনবে সরকার। জেলার সীতাকু-, ফটিকছড়ি ও পটিয়া উপজেলার মিলারদের কাছ থেকে সিদ্ধ চাল কেনা হবে। অন্যান্য উপজেলা সিদ্ধ চালের মিল না থাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। মে মাস থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে।

 

খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে আতপ অধ্যুষিত অঞ্চল। তবে এখনো আতপ চাল কেনার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

 

বোয়ালখালী উপজেলার আমুচিয়া গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম বলেন, ‘সরকারি খাদ্য বিভাগে ধান বিক্রিতে গুদাম কর্মকর্তাকে টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। অনেক সময় ধান নিয়ে ফেরত আসতে হয়। লাভের চেয়ে লোকসান গুনতে হয়। তারচেয়ে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা পাড়া-গাঁ থেকে আরও বেশি দামে কিনে নেয়। কোন দুঃখে চাষিরা খাদ্য বিভাগে ধান বিক্রি করবে।’

 

একই কথা বললেন কড়লডেঙ্গার এলাকার কৃষক সাবেক মেম্বার কুমকুম দাশ। তিনি বলেন, ‘ধানের উৎপাদন খরচ এখন অনেক বেশি। সেই তুলনায় সরকারি দর অনেক কম। তাই চাষিরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি না করে মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।’

 

চলতি মৌসুমে খরা, ব্লাস্ট ও লবণাক্ততার কারণে বোরো ধানের বড় ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণের পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ উপজেলায় বোরো ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। এসব কারণে চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহ নিয়ে সন্দেহ-সংশয়ে রয়েছেন খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

 

তবে খাদ্য কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষক যেন ধানে ন্যায্যমূল্য পায়। সরকারের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। কৃষক ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট