চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ত্রিমুখী সমস্যায় ওষ্ঠাগত নাগরিক জীবন

মোহাম্মদ আলী

৬ মে, ২০২৩ | ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ

ত্রিমুখী সমস্যায় ওষ্ঠাগত নাগরিক জীবন। কোথাও নেই একটুখানি স্বস্তি। একদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে অসহ্য গরম। তার উপর ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা- সবমিলিয়ে স্বস্তি নেই নাগরিক জীবনে। সাধারণত মার্চ থেকে বৃষ্টির দেখা মেলে। এপ্রিল-মে মাসে নিয়মিত বৃষ্টি হয়ে তাকে। কিন্তু এবার এপ্রিল-মে মাসেও বৃষ্টির দেখা নেই। তাতে গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ। বাইরের অত্যধিক গরমে তাদের জীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘এ বছর খরা চলছে। গত বছরও এ সময় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছিল। গত ত্রিশ বছরে এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে গড়ে বৃষ্টি হয়েছে ১৪৭ মিলিমিটার। একই সময়ে মে মাসে ২৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে চলতি বছর এপ্রিল মাসে মাত্র চার দিন বৃষ্টি হয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এক এপ্রিল ২৮ মিলিমিটার, দুই এপ্রিল ৭ মিলিমিটার, তিন এপ্রিল ৩৫ মিলিমিটার এবং সর্বশেষ ঈদের দ্বিতীয় দিন ২২ এপ্রিল ৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তৃতীয় দিনও সামান্য পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি পরিমাপ করা যায়নি।’
চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়। তাতে দিশেহারা হয়ে পড়েন নগরবাসী। দিন যতই গড়াচ্ছে ওয়াসার পানিতে লবণের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। ওয়াসার দাবি- কাপ্তাইলেক থেকে পানি ছাড়া বন্ধ থাকায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। অপরদিকে পিডিবি’র দাবি- যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় লেকে পর্যান্ত পানি নেই। এজন্য লেক থেকে কম পানি ছাড়া হচ্ছে। এদিকে লবণ পানি পানের অনুপযুক্ত হওয়ায় বিকল্প হিসেবে অনেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে গভীর নলকূপের পানি এবং জার কিংবা মিনারেল ওয়াটার ব্যবহার করে আসছেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর পানিতে লবণের এ মাত্রা কম থাকলেও এবার হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি ছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে গেছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি এসে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। পানির পরিমাণ কম হওয়ায় জোয়ারের সময় সাগরের লবণাক্ত পানি নদীর অনেক ভেতরে প্রবেশ করছে। এমন কি হালদা নদীর মোহরা ও মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার থেকে ওয়াসা পরিশোধনের জন্য যে পানি সংগ্রহ করে সেখানে দ্রুত লবণ পানি চলে আসে। তাই নগরীর ওয়াসার পানিতে লবণ পাওয়া যাচ্ছে।’
লবণ পানি ও তীব্র গরমে মানুষের জীবন যখন নাভিশ্বাস, ঠিক তখনি গোদের উপর বিষপোড়া হয়ে এসে এসেছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বাজারে মাছ-মাংস ও শাক-সবজির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য তেল, চিনি, ডিমসহ অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রির। বাজারে শাক-সবজির দামে আগুন ঝড়ছে, হাত দেওয়া যাচ্ছে না। প্রতি কেজি ৬০-৭০ টাকার নিচে কোন সবজিও পাওয়া যাচ্ছে না। ১০ দিন আগেও পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ টাকা। সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। রসুন ১২৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা, আদা (দেশি) ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা, আদা (চায়না) ২৩০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, আলু প্রতিকেজি ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯৯ টাকা। চিনি প্রতিকেজি ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্যের ক্রমবৃদ্ধির ফলে শুধু খেটে খাওয়া মানুষ নয়, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের দাবি- বাজারে যেভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সেভাবে বাড়েনি মানুষের আয়। তাই জীবন চালাতে অনেকটা হিমশিমে পড়েছেন মানুষ।

পূর্বকোণ/এ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট