চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জব্দ না করায় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ বিক্রি

দুদকের ‘গাফিলতিতে’ ফায়দা লুটলো জয়নাল!

ইমাম হোসাইন রাজু 

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আলোচিত কর্মচারী জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনও (চার্জশিট) দাখিল করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। অথচ মামলা দায়েরের তিন বছর পার হলেও এসব অবৈধ সম্পদ জব্দ করার কোন উদ্যোগই নেয়নি সংস্থাটি। ফলে সুযোগ বুঝেই কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন দুদকের আসামি জায়নাল আবেদীন। যার বিষয়ে স্বীকারও করেছেন জয়নাল। শুধু তাই নয়, একই কর্মচারীর বিরুদ্ধে একই দিনে অর্থ পাচারের অভিযোগে পৃথক আরেকটি মামলা করেন সংস্থাটির আলোচিত সাবেক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। সেই মামলায় বাঁশখালীর প্রাইম ব্যাংকের একাউন্টে স্থিতি থাকা জয়নালের লেনদেন সাময়িক স্থগিতের জন্য চিঠি দেয়া হলেও জব্দের নির্দেশ না থাকায় সেই অর্থও তুলে নেন তিনি।

 

এদিকে, অবৈধ সম্পদ পেয়েও দুদক কেন তা জব্দ করেনি এমন প্রশ্ন তুলেছেন দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করা ব্যক্তিরা। তাদের মতে ‘অবৈধ সুবিধা নিয়ে’ সংশ্লিষ্টরা জয়নালকে তার সম্পদ বিক্রি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। দুদকের গাফেলতির কারণেই এমন সুযোগ গ্রহণ করেছেন আসামি। যার দায় এড়ানোর সুযোগই নেই কমিশনের।

 

দুদকের মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাইয়ে তার জয়নাল আবেদীন নিজ গ্রাম বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদী মৌজায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৫ শতাংশ নাল জমি ক্রয় করেন (দলিল নং-৪২২৯৫)। যাতে তিনি ইতোমধ্যে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন নিয়ে তৃতীয় তলা পর্যন্ত ভবন তৈরির কাজ শেষ করেছেন। এসব কাজে তার ব্যয় হয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। এর মাত্র একদিন আগেই একই মৌজায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে নিজ নামে ক্রয় করেন আরেকটি জমি। সবমিলিয়ে তার বিরুদ্ধে ওই সময়ে ৬৯ লাখ ৭ হাজার ৪৪২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা দায়ের করা হয়।

 

এদিকে, মামলা দায়েরের সময় জয়নাল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকলেও বের হয়েই এসব সম্পদ বিক্রি করেন বলে স্বীকার করেন তিনি। এরমধ্যে বর্তমানে চার তলা বাড়িটি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তার বাবা আব্দুল মোনাফের কাছে বিক্রি করা হয়। আর জমির অংশটিও পাশ^বর্তী অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন বলে জানান তিনি। বাড়ি ও জমিটি এখন তার নামে নেই। যাদের বিক্রি করেছেন, তাদের নামে নামজারিও হয়ে গেছে বলে স্বীকার করে নেন জয়নাল।

 

সম্পদ বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে ইসি কর্মচারী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমার মালিকানায় স্থাবর সম্পদ যা ছিল, জেল থেকে বের হওয়ার পরপরই সব বিক্রি করে দিয়েছি। কারণ আমার মালিকানার সম্পদের উপর আদালত কিংবা যারা মামলা দায়ের করেছেন (দুদক), তাদের কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না। আদ্যাবদি পর্যন্তও নিষেধাজ্ঞা নেই। যার কারণে মালিকানা বদলি করতে আমার কোন বাধা হয়নি।’

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ইসি কর্মচারী জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হলেও মাত্র একটি মামলার চার্জশিট দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলা দায়েরের তিন বছর পর হলেও বাকি দুটি মামলার চার্জশিট এখন পর্যন্ত আদালতে দাখিল করা হয়নি। যদিও দুদক আইন ২০০৪ সালের (২০-ক) ধারায় তদন্তের সময়সীমা সর্বোচ্চ ১৮০ কার্যদিবসের কথা বলা হয়।

 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন আরও একটি তদন্ত প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য কমিশনে পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত কমিশনের অনুমোদন পাওয়া যায়নি।

 

অন্যদিকে অবৈধ সম্পদ বিক্রি করতে দুদকই সুযোগ করে দিয়েছে মন্তব্য করে টিআইবি-সনাকের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘দুদক যখন অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে মামলা ও চার্জশিট দাখিল করেছিল, উচিত ছিল তখনই এসব অবৈধ সম্পদ জব্দের উদ্যোগ নেয়ার। কিন্তু দুদক তা না করে বরং তদন্ত কাজেও গাফেলতি করেছেন। এতে স্পষ্ট বুঝা যায় দুদকের কর্মকর্তা আসামিকে সুযোগ করে দিয়েছেন। ফলে সুযোগ বুঝে আসামিও তার অবৈধ সম্পদ বিক্রি করেছেন। এ দায় এড়ানোর কোন সুযোগই নেই দুদকের।’

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট