বর্ণিল আয়োজনে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে আয়কর তথ্য-সেবা মাস-২০২২। গতকাল বেলা ১১টার দিকে নগরীর আগ্রাবাদের পেলিকন মাহজাবিন ভবনে আয়কর তথ্য-সেবা মাসের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম কর আপিল অঞ্চলের কর কমিশনার সফিনা জাহান। প্রথম দিন চট্টগ্রামের চারটি কর অঞ্চলের সেবা বুথে ২ হাজার ১১৩টি রিটার্ন জমা পড়েছে। আয়কর আদায় হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ৩৫ হাজার ২৭২ টাকা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম কর আপিল অঞ্চলের কর কমিশনার সফিনা জাহান বলেন, দেশ সচল রাখতে রাজস্ব আহরণের বিকল্প নেই। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠন করতে চাই- সবাইকে সঠিকভাবে কর দিতে হবে। আয়ের নির্দিষ্ট অংশ কর দেওয়া প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। সবাই মিলে কর দিলে দেশ স্বনির্ভর হবে। দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যাবে। সর্বোপরি দেশ এগিয়ে যাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর কর কমিশনার মো. ইকবাল বাহার, কর অঞ্চল-২ এর কর কমিশনার সামিয়া আখতার, কর অঞ্চল-৩ এর কর কমিশনার মো. শাহাদাৎ হোসেন শিকদার এবং
কর অঞ্চল-৪ এর কর কমিশনার ছাবিনা ইয়াসমিনসহ কর বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। পরে আয়কর তথ্য-সেবা মাস উপলক্ষে স্থাপন করা বিশেষ সেবা বুথ পরিদর্শন করে রিটার্ন জমা দিতে আসা করদাতাদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
সেবা মাস উপলক্ষে নগরীর কর অঞ্চলগুলোর কার্যালয় সংলগ্ন সেবা বুথে কর কর্মকর্তা ও করদাতাদের প্রাণের মেলা বসে। আয়কর রিটার্ন ফরম, চালান ও সিটিজেন চার্টার সংগ্রহে ভিড় করেন আয়কর দাতারা। নির্দিষ্ট স্টলে নবীন করদাতাদের নানা কৌতূহল, প্রশ্ন, দ্বিধা দূর করতে তথ্য সেবা দেন কর কর্মকর্তা ও কর আইনজীবীরা। মাসব্যাপী এ আয়োজনে চট্টগ্রামের চারটি কর অঞ্চলের অধীনে থাকা ৮৮টি সার্কেলে কর সেবা দেওয়া হবে।
করোনা মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই বড় অঙ্কের আয়কর আদায়ের টার্গেট নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আগামী নভেম্বরের মধ্যেই চট্টগ্রামের চার কর অঞ্চল থেকে ৬ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে টার্গেট অনুযায়ী কর আদায় করতে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান- চট্টগ্রামের চারটি কর অঞ্চলের অধীনে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬৩ জন। এরমধ্যে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চালু নথির সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ৮০২টি। এসব ই-টিআইএনধারীর কাছ থেকেই চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ৬ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
ই-টিআইএনধারীর মধ্যে সাধারণ করদাতা ক্যাটাগরিতে করযোগ্য আয় ৩ লাখ টাকার বেশি হলে কর দিতে হবে। তৃতীয় লিঙ্গ, নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী করদাতাদের করযোগ্য আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি হলে কর দিতে হবে। প্রতিবন্ধী করদাতাদের বার্ষিক আয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের আয় পৌনে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।
তবে ই-টিআইএনধারীর মধ্যে কারও করযোগ্য আয় না থাকলেও তাকে রিটার্ন জমা দিতে হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক ই-টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী রিটার্ন জমা দিয়ে নিজ কর অঞ্চল থেকে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র না নিলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইউটিলিটি সংযোগ, ক্রেডিট কার্ড পাওয়া থেকে শুরু করে ৩৯টি পরিষেবা মিলবে না।
৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জরিমানা ছাড়াই রিটার্ন দাখিল করতে পারেন করদাতারা। তবে যৌক্তিক কারণে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করতে পারলে সংশ্লিষ্ট উপ-কর কমিশনারের কাছে আবেদন করে সময় নিতে হয়। আবেদন না করলে তাকে প্রদেয় করের ১০% বা ১০০০ টাকার মধ্যে যা বেশি ওই পরিমাণ অর্থ এবং প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা করে জরিমানা দিতে হয়।