চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

সিত্রাং’র ‘শিকার’ ৫৮৫৭২ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ অক্টোবর, ২০২২ | ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’র আঘাতে চট্টগ্রাম জেলার ৭টি উপজেলার ৬৬টি ইউনিয়নের ৫৮ হাজার ৫৭২ জন মানুষ ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ায় পুরোপুরি ভেঙে গেছে ৯৪টি ঘর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৫ হাজার ৭৬০টি ঘর। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান- উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ, উত্তর চট্টগ্রামের রাউজান এবং নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’র আঘাতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। সাগরে জলোচ্ছ্বাসের কারণে এসব এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি সেখানে ঝড়ো হাওয়ায় গাছ-পালা ভেঙে পড়ে। তবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী পূর্বকোণকে জানান, প্রশাসনের বড় ধরনের প্রস্তুতি থাকায় সিত্রাং এর আঘাতে চট্টগ্রামে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। ঘূর্ণিঝড় আসার আগেই উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে পাশের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। তবে সিত্রাং’র আঘাতে চট্টগ্রামের ৫৮ হাজার ৫৭২ জন মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে ২১ মেট্রিক টন চাল, ৩ লাখ ৮০ হাজার নগদ টাকা, ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৩৭৫ কার্টন ড্রাই কেক, ৫২০ কার্টন বিস্কুট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে এই বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে। ডিসি স্যার নিজেই সিত্রাং’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সহায়তা প্রদান কার্যক্রম তদারকি করছেন।

 

এদিকে সিত্রাং’র প্রভাবে সাগরে সৃষ্টি হওয়া জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকার ৯০৩ হেক্টর কৃষিজমি আংশিক বা পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে। এরমধ্যে বাঁশখালীতে ৫৫০, আনোয়ারায় ৮৫, কর্ণফুলীতে ৭৮, সন্দ্বীপে ২৫ এবং সীতাকুণ্ডে ১৬৫ হেক্টর কৃষিজমি প্লাবিত হয় বলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা পূর্বকোণকে জানিয়েছেন।

ঝড়ো হাওয়া এবং বর্ষণে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওতাধীন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহেও বিঘ্ন ঘটে। গাছ পড়ে এবং বাতাসে সরবরাহ লাইন ছিঁড়ে এসব জেলার আওতাধীন প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। সরবরাহ লাইন ঠিক করতে মাঠে নামানো হয় পিডিবির ৪০টি মেকানিক্যাল টিমকে।

 

পিডিবি চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম পূর্বকোণকে জানান, সরবরাহ লাইন ছিঁড়ে বিদ্যুতের লোড ৯০০ থেকে ২০০ মেগাওয়াটে নেমে আসে। পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রচেষ্টায় সোমবার রাত ১০টার মধ্যে চট্টগ্রামের ৮০ শতাংশ এলাকা, মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে পুরো অঞ্চলের ৮০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়।

 

তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ২টার মধ্যে পিডিবি চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। তবে মঙ্গলবার বিকালের আগে সেখানেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। নিয়মিত লোডশেডিং এর বাইরে এখন কোথাও সমস্যা নেই।

 

সিত্রাং এবং অমাবস্যার প্রভাবে সাগরে সৃষ্ট অতিরিক্ত জলোচ্ছ্বাসে বাঁশখালী, আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ উপচে ভেতরে লোকালয়ে পানি ঢুকে। তবে এতে বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রমজান আলী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, বালির বস্তা এবং জিও ব্যাগ ফেলার কারণে চট্টগ্রামে বাঁধের কোনো ক্ষতি হয়নি।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট