চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

বিধ্বস্ত ব্যবসায়ীরা দিশেহারা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৬ অক্টোবর, ২০২২ | ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

খাতুনগঞ্জ পেরিয়ে চাক্তাই এলাকায় ঢুকতেই দীর্ঘ যানজট। ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, ঠেলা-ভ্যান গাড়ির জটলা টেলেটুলে এগোতেই সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে সড়কজুড়ে। গাড়ি থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর চেয়ে পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া দোকান-গুদাম পরিষ্কার ও মালামাল সরানোর কাজে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্য চাক্তাই-রাজাখালী খালের স্লুইস গেট নির্মাণের ধীরগতিকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা।

 

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আহসান খালেদ পারভেজ পূর্বকোণকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমদানি করা পণ্য গতকাল চাক্তাই এলাকায় ঢুকেনি। সিটি গেট এলাকায় ট্রাকগুলো দাঁড় করানো ছিল। সেজন্য ট্রাকপ্রতি অতিরিক্ত দুই-তিন হাজার টাকা বেশি গুনতে হয়েছে।

 

মধ্যম চাক্তাই এলাকার আহসান খালেদ বলেন, চাক্তাই এলাকার নতুন রাস্তা, সোবহান সওদাগর রোড, মকবুল সওদাগর রোড, মোশাররফ হোসেন রোড এলাকা এই অঞ্চলের নিচু এলাকা। এসব এলাকায় দোকান ও গুদাম মিলে তিন হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব এলাকার ৮০-৯০ শতাংশ দোকান ও গুদামে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে কাঁচাপণ্যের মধ্যে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দোকান, আড়ত ও গুদামে পানি ঢোকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত সোমবার রাতে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ঘিরে এ অঞ্চলে ছাড়াও আশপাশে প্রায় ১২ হাজারের বেশি দোকান, গুদাম ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৬০-৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

 

ব্যবসায়ীদের অবহেলা ও অসতর্কতার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে বলে জানান সভাপতি হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের রেড এলার্টের বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে কোনো মাইকিং বা সতর্ক করা হয়নি। এছাড়াও ধমকা হাওয়া না থাকায় জলোচ্ছ্বাসের বিষয় আমলে নেয়নি ব্যবসায়ীরা। এরফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’ এজন্য চাক্তাই-রাজাখালী খালে নির্মীয়মাণ স্লুইস গেটের কাজের ধীরগতির কারণে পানি ঢুকে সহজেই বের হতে পারেনি। পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাণিজ্যপাড়ার স্থানে স্থানে পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া মালামাল সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। তবে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও চালের দোকানে এখনো পুরোদমে ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্য সরানো যাচ্ছে না।

 

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘৯১ এর ঘূণিঝড়ের পর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবার। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আশপাশের প্রায় ৭০ শতাংশ দোকানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিজের মসলা পণ্যের গুদামে পানি ঢুকে ৪০-৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরো এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ অন্ততপক্ষে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

চাল, ডাল ও মসলাজাতীয় পণ্যের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানান আমদানিকারক ফয়েজ উল্লাহ চৌধুরী বাহার। মধ্যম চাক্তাই এলাকায় তার গুদামে পানি ঢুকে ৩২-৩৫ লাখ টাকার এলাচি ও কিসমিস নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

 

চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, প্রায় ৭০ শতাংশ দোকান ও গুদামে পানি ঢুকে হাজার হাজার বস্তা চাল নষ্ট হয়ে গেছে। এসব চাল এখন মাছ ও পশুর খাদ্য হিসেবে বস্তাপ্রতি এক-দেড়শ টাকা বিক্রি করতে হবে।
গতকাল দিনভর ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা ভিজে যাওয়া পণ্য সরানো, পানি সেচন ও দোকান ধোয়ার কাজে ব্যস্ত সময় কাটান। এতে বেচাকেনা হয়নি বলে জানান চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী ও আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন।

১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এরপরও বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট ঘূণিঝড়েও ক্ষতি হয়েছিল। এসব ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে প্রতিটি দোকান, গুদামে দু-তিন ফুট উচ্চতার দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। দেয়াল টপকিয়ে ও বিভিন্নভাবে উপচে পানি ঢুকে পড়ে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট