চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

পিস্তল থেকে ফাঁকাগুলি ছোড়া সেই জাহেদ আত্মগোপনে

ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা

নাজিম মুহাম্মদ

৭ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

নগর ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তেরো জন গ্রেপ্তার হলেও ঘটনার পর থেকে আত্মগোপন করেছেন আবু জাহেদ ছিদ্দিকী নামে এক যুবক। সুদীপ্তকে পিটানোর সময় প্রতিবেশী লোকজন এগিয়ে আসতে চাইলে জাহেদ তার কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে পর পর পাঁচরাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছিলেন। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে থাকা জাহেদ ঘাট ফরগাদবেগ এলাকার জনৈক বখতিয়ার উদ্দিন মজনুর ছেলে। তিনি বাকলিয়া এলাকার পরিচিত একজন আওয়ামীলীগ নেতার অনুসারী। সুদীপ্ত হত্যায় জড়িত খাইরুল নুর ইসলাম খায়ের ঘটনার পরদিন তার এক বন্ধুর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, সিটি কলেজের রাজনীতির বিষয় নিয়ে সুদীপ্ত’র সাথে প্রথমে জাহেদের ঝামেলা বাধে। সুদীপ্ত হত্যায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক

দিদারুল আলম মাসুম চেয়েছিলেন সুদীপ্ত হত্যার ঘটনা জাহেদের কাঁধে তুলে দিতে।
সুদীপ্তকে পিটিয়ে আসার পর পর জাহেদ তার ফেসবুকে বাকলিয়া এলাকার উক্ত আওয়ামীলীগ নেতাকে সাথে নিয়ে ‘আলামত’ ক্যাপশান দিয়ে একটি ছবিও পোস্ট করেছিলেন। পরে সুদীপ্ত মারা যাবার ঘটনা জানাজানি হবার পর ফেসবুক থেকে সেই ছবি মুছে দেন। ঘটনার পর থেকে জাহেদ আত্মগোপন করেছেন। জাহেদকে পাওয়া গেলে সুদীপ্ত হত্যার নেপথ্যে থাকা আরো একজন ব্যক্তির জড়িত থাকার বিষয় উঠে আসবে এমনটি ধারণা করছেন তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া দুইজন আসামির জবানবন্দিতে সুদীপ্ত হত্যায় জাহেদের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। ঘটনার পর থেকে জাহেদ আত্মগোপন করেছে। মামলাটি আমারা গুরুত্বসহকারে দেখছি। তদন্তে সুদীপ্ত হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী আইনের আওতায় আনা হবে।
জাহেদের জড়িত থাকার বিষয়ে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া মোক্তার আহমদ আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, সুদীপ্ত হত্যায় তিনটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছিলো। এরমধ্যে একটি মোটরসাইকেলে মোক্তার, ফয়সাল ও জাহেদ উঠেছিলো। ওয়াসার মোড় পার হবার পর জাহেদ নিপুকে ফোন করে বলে তাদেরকে রিসিভ করবে। তখন আইনুল কাদের নিপু জাহেদের মুঠোফোনে একটি এসএমএস করে। পরে জাহেদ ঐ নম্বরে ফোন করে তার কাছ থেকে ঘটনাস্থলের (সুদীপ্তের বাসা) ঠিকানা জেনে নেয়। তারা ডিলাইট হোটেলের সামনে মোটর সাইকেলের গতি কমায়। সেখানে আগে থেকে দুই ব্যক্তি অপেক্ষা করছিলো। ছাই রংয়ের গেঞ্জি পরা একটি ছেলে গলির ভেতরে সুদীপ্তের বাসা দেখিয়ে দেয়। গলির মুখে আগে থেকে দুটি সিএনজি ট্যাক্সি দাাঁড়ানো ছিল।
মোক্তার তার জবানবন্দিতে বলেন, গলির ভেতর থাকা সিএনজি ট্যাক্সি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহেদ বললো সমস্যা নেই, গাড়ি গুলোতে আমাদের লোক আছে। ইতিমধ্যে চশমা রুবেল, তার বন্ধু, মুরাদসহ আরো ২/৩ জন সুদীপ্তকে টেনে হেঁচড়ে ঘর থেকে বের করে গেটের বাইরে নিয়ে আসে। গলির গেটের বাইরে এনে জাহেদের দুইজন অনুসারী, চশমা রুবেলসহ ৬/৭ জন মিলে সুদীপ্তকে লোহার পাইপ ও কাঠের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। এ সময় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে জাহেদ তার কাছে থাকা পিস্তল থেকে পর পর দুই রাউন্ড গুলি করে। ঘটনার পর ফিরে আসার সময় ডিলাইট হোটেলের সামনে আরো এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে জাহেদ।
সুদীপ্ত হত্যায় অংশ নেয়া গ্রেপ্তার ফয়সাল আহমেদ পাপ্পু তার ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর বিজ্ঞ আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, সুদীপ্তকে ঘর থেকে বের করে পেটানোর সময় জাহেদ উপস্থিত ছিল। তার কাছে একটি পিস্তল ছিল। সুদীপ্তকে পিটিয়ে চলে আসার সময় জাহেদ তার পিস্তল থেকে পর পর পাঁচটি ফাঁকা ফায়ার করে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর ভোরে নগরীর নালাপাড়া নিজ ভাড়া বাসা থেকে ডেকে বের করে বাসার সামনেই নির্মমভাবে পিটিয়ে খুন করা হয় নগর ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাসকে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট