চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৪’শ পরিবারের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, বাতিল সমিতির রেজিস্ট্রেশন

সৌমিত্র চক্রবর্তী

৯ আগস্ট, ২০২২ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের আলীনগরে আবারো অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। সোমবার (গতকাল) বিকালে এই অভিযানকালে জঙ্গল সলিমপুরের পুরো আলীনগরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে সেখানে শত শত পরিবার এখন সম্পূর্ণ অন্ধকারে নিমজ্জিত। এছাড়া আলীনগরের প্রবেশমুখে একটি নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। চিহ্নিত করা হচ্ছে সব খাস জমি।

 

এদিকে আলীনগরে প্রশাসনের এই তৎপরতা ঠেকাতে জেলে বসেই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে ঐ এলাকার ‘অঘোষিত রাজা’ ইয়াছিন মিয়া। তার নির্দেশে ইতিমধ্যে আলীনগরে প্রবেশের ৫টি রাস্তার প্রত্যেকটিতে ৬ ফুট গভীর করে গর্ত করে দেয়া হয়েছে। যেন সেখানে প্রশাসনের কোন গাড়ি প্রবেশ করতে না পারে। তবে প্রশাসনও থেমে নেই। এরই মধ্যে তার আবারো ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিজ্ঞ আদালত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের টানা অভিযান ঠেকাতে জেলে বসেই সেখানে নানান অপতৎ পরতা চালাচ্ছে আলীনগরের অঘোষিত রাজা ইয়াছিন মিয়া। তার নির্দেশ সেখানে কোনভাবেই প্রশাসনের লোকজনের আনাগোনা চলবে না। এ নির্দেশ পেয়ে গত কয়েকদিন আলীনগরে প্রবেশের অন্তত ৫টি রাস্তা অন্তত ৬ ফুট গভীর করে খনন করে ফেলেছে তার লোকজন। তাদের উদ্দেশ্যে এ গর্তের উপর দিয়ে কোন গাড়ি আলীনগরের ভেতরে যেতে না পেরে ফিরে যাবে। এছাড়াও তারা নিরীহ সহায় সম্বলহীন মানুষকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চলছে বলে প্রচারণা চালিয়ে প্রশাসনকে ঠেকাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম অবরোধসহ নানামুখী তৎপরতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সম্প্রতি আলীনগরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে স্থাপন করা সরকারের নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্পের সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলে আরো নতুন নতুন স্থাপনা তৈরির কাজও চলছে।

 

তবে ইয়াছিনের এসব অপতৎপরতার কোনটিই অজানা নেই প্রশাসনের। ফলে প্রশাসনও ইয়াছিনের বিরুদ্ধে একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করেই সেখানে অবৈধ বসতি উচ্ছেদে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল (সোমবার) বিকাল ৩টায় সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত, সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল করিম, ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ, ওসি (তদন্ত) সুমন বণিকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু সড়কে ইয়াছিন বাহিনী গর্ত করে রাখায় তারা গাড়ি নিয়ে একেবারে ভেতরে যেতে পারেননি। পরে গাড়ি রেখে তারা হেঁটে এলাকাটি পরিদর্শন করেন এবং নানান পদক্ষেপ নেন।

 

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম জানান, আমরা যেন আলীনগরের ভেতরে যেতে না পারি এ জন্য ইয়াছিন বাহিনী সেখানে প্রতিটি রাস্তায় ৬ ফুট গভীর করে গর্ত করে রেখেছে। ফলে আমরা ঐ গর্তের সামনে পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে যাই। পরে হেঁটে সেখানে পরিদর্শন করি। সেখানে গিয়ে আমরা কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ পুরো আলীনগরের অবৈধ আনুমানিক ৪’শ স্থাপনার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিই। এছাড়া সেখানে আলীনগর ও ছিন্নমূল এলাকার সংযোগ স্থলে দুটি স্থান নির্ধারণ করি প্রশাসনের নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের লক্ষ্যে। শীঘ্রই সেখানে চৌকি স্থাপন হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষী কোন একটি বাহিনীর দ্বারা চৌকিটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এই চৌকি থেকে সেখানে সরকারি খাস জায়গা দখলসহ অন্যান্য অপরাধ ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আলীনগরে এদিন আমরা ৪’শ একরের মতো খাস পাহাড়ি ভূমি চিহ্নিত করে সেখানে লাল পতাকা টাঙিয়েছি।

 

তিনি বলেন, এই আলীনগরে অন্তত ১৭’শ একর খাস পাহাড়ি জায়গা ইয়াছিন বাহিনী দখল করে প্লট তৈরি করে বিক্রি করছে বলে আমরা জেনেছি। সেসব জায়গা চিহ্নিত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। পাশাপাশি তাদের কেটে ফেলা পাহাড়গুলোকে সংরক্ষণ করতে একটি নাইট সাফারি পার্কের জন্য ৫৭.৫০ একর জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরে অবৈধ বসবাসকারীদের নিয়ে গঠন করা সবকটি সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশনও বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে এসবের মধ্যেই গতকাল (সোমবার) আলীনগরের রাজা ইয়াছিন মিয়ার (৫২) আরো ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ খান। এদিন বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ ইয়াছিনের সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট