চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

বন্দরের কাছাকাছি ৩০টি সিএফএস করার প্রস্তাব

সারোয়ার আহমদ

৩১ জুলাই, ২০২২ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি ৩০টি রপ্তানি- কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন (সিএফএস) করার জন্য ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার, শিপিং কোম্পানি, ওয়্যারহাউস ব্যবসায়ীদের বা কোন ব্যবসায়ী গ্রুপকে সহজ শর্তে অনুমতি দেয়ার প্রস্তাব করেছে আইসিডি/রপ্তানি-সিএফএস নীতিমালা সংশোধনে গঠিত কমিটি। ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কনফারেন্স হলে আইসিডি নীতিমালার বিষয়ে গঠিত কমিটির সভায় এসব প্রস্তাবনা উঠে আসে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. আবু নুর রাশেদ আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম, বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস এসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার, এফবিসিসিআই’র প্রতিনিধি এম এ মাহবুব চৌধুরী, বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের পরিচালক এসএম এনামুল হক, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. আবুল কালাম আজাদ ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রতিনিধি।

সভায় উল্লেখ করা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর প্রণীত নীতিমালায় আইসিডি, অফডক ও সিএফএসকে একত্রিত করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তিনটি পৃথক জিনিস। আর বর্তমান প্রনীত নীতিমালায় এতো কঠিন সব শর্ত রাখা হয়েছে যার কারণে দেশে ১৮টির পর আর নতুন কোন আইসিডি স্থাপন হয়নি। এতে দিন দিন রপ্তানি বাড়লেও আইসিডি না বাড়ায় দেশের রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উহরণ দিয়ে বলেন, ভারতে পোশাক রপ্তানি ১২ বিলিয়ন ডলারের এবং ভারতে অনুমোদিত প্রায় ৪শ সিএফএস আছে। এর বাইরে নন বন্ডেড আরও ১ হাজারের অধিক সিএফএস রপ্তানি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে রপ্তানিকারকগণ সিএসএফ থেকে প্রতিযোগিতামুলক দর ও সেবা পায়। অথচ বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখানে রপ্তানি জন্য ১টি সিএফএসও নেই। যখন চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ৬ লাখ একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতো, তখন যে ১৮টি আইসিডি হয়েছিল, এখন চট্টগ্রাম বন্দর ৩১ লাখ একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে, কিন্তু সেই ১৮টি আইসিডির উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। কারণ এই ১৮টি আইসিডি হওয়ার পর আইসিডি স্থাপনে এমন কঠিন শর্ত দেওয়া হয়েছে, যার ফলে গত ১০ বছরে একটি নতুন আইসিডিও হয়নি।

 

এছাড়া বিদ্যমান আইসিডিগুলোর ৩টি ছাড়া প্রায় সবগুলোই বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটাইরের মধ্যে। ফলে বন্দর থেকে কনটেইনার আনা-নেওয়াতে তাদের খরচ কম। তাই নুতন আইসিডি ২০ কিলোমিটারের বাহিরে হলে, খরচ বৃদ্ধি পাবে। তাই সমাধান হতে পারে বন্দরের আইসিডিগুলিকে ঘোষণা দিয়ে তাদের শুধু রপ্তানি স্টাফিং কাজে নিয়োজিত করা, অথবা সিএফএস বা আইসিডি স্থাপনে প্রতিবেশী দেশের ন্যায় শর্ত রাখা।

নীতিমালা সংশোধন প্রসঙ্গে বিষয়ে এফবিসিসিআই’র প্রতিনিধি এম এ মাহবুব চৌধুরী বলেন, বিশ্বের কোন দেশে বন্দর থেকে পণ্য খালাস হয় না। এটি হয় বাংলাদেশে। পৃথিবীর সব দেশে ছোট ছোট শত শত ওয়্যারহাউস রয়েছে। যেখান থেকে সহজে রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দর দিয়ে জাহাজীকরণ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেই ওয়্যারহাউস বা সিএফএস স্থাপনের আলাদা নীতিমালা নেই। আইসিডি, অফডক ও সিএফএস নিয়ে একটি নীতিমালা করে বিষয়টি তিনটি বিষয়ে এক করে ফেলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিকডা মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, আইসিডির জন্য এনবিআর প্রনীত নীতিমালাটি যথোপুযোগী। তবে সরকার চাইলে রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে আলাদা সিএফএস স্থাপনের অনুমোতি দিতেই পারে। এতে বিদ্যমান আইসিডিগুলোর সাথে কোন সমস্যা হবে না। তবে আলাদা সিএফএস যেহেতু দেশে আগে স্থাপন হয়নি। তাই কনটেইনার বুকিং, খালি কনটেইনার সময়মতো পাওয়া ইত্যাদি কয়েকটি বিষয় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আইসিডিগুলো যেহেতেু আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি খালি কনটেইনার সংরক্ষণ করে তাই এতে সুযোগ সুবিধা বেশি পায়। যেটি সিএফএস এর ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, আইসিডি নীতিমালা প্রণয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ইতোপূর্বে চট্টগ্রাম কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিকডা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই এর সাথে আলোচনা ও মতামত গ্রহণ করে আইসিডি নীতিমালা ২০২১ প্রণয়ন করে। তবে সম্প্রতি বিএম কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণের পর নীতিমালাকে আরো যুগোপুযোগী ও মানসম্মত করার লক্ষে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন কর হয়। ওই কমিটির সভায় সিএফএস এর বিষয়ে আলোচনা হয়, যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রস্তাবনা আকারে পাঠানো হয়।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট