চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

জালিয়াতির তথ্যদাতা কাস্টমস কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ জুলাই, ২০২২ | ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিদেশি সিগারেটের চালান খালাস হয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা থেকে সিগারেটের বদলে দুই কনটেইনার বিদেশি মদ জব্দ করেছিল র‌্যাব ও কাস্টমস কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সেই গোপন তথ্যদাতা সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা রাশেদুর রহমানকে বিদেশ থেকে হোয়্যাটসঅ্যাপে কল করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে এক ব্যক্তি। ২২ জুলাই মদ জব্দের ঘটনার পরদিন ২৩ জুলাই তাকে ফোনে এই হুমকি দেওয়া হয়। পরদিন ২৪ জুলাই কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে রাশেদুর রহমান নগরীর ইপিজেড থানায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। ইপিজেড থানা পুলিশ আদালতের কাছে ওই জিডি তদন্তের অনুমতি চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন এবং ইপিজেড থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রানা প্রতাপ জিডির তদন্ত শুরু করেন।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২৪ জুলাই একজন কাস্টমস কর্মকর্তা নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছিলেন। আদালতকে জানিয়ে আমরা তার তদন্ত করছি। ঘটনাটি তদন্ত করে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারব আসলে কী ঘটেছে এবং কারা করেছে।’ এদিকে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিপিইজেড) কাস্টমস শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) রাশেদুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, আমাকে এক বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছিল বন্দর থেকে জালিয়াতি করে দুই কনটেইনার বিদেশি সিগারেট খালাস হচ্ছে। ওই তথ্য আমি কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাই। কাস্টমস ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পারেন চালানটি বন্দর থেকে খালাস হয়ে নারায়নগঞ্জের পথে রয়েছে। পরে সেটি জব্দ করতে র‌্যাবের সহায়তা চাওয়া হয়। ওইদিন ২২ জুলাই দিবাগত রাতে ভুয়া আইপি (ইমপোর্ট পারমিশন) ব্যবহার করে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৪০ ফুটের দুই কনটেইনার খালাস হওয়া বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের মদ সোনারগাঁ যাওয়ার পথে র‌্যাব-১১ আটক করে।

 

তার পরদিন ২৩ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এআরও রাশেদকে একটি বিদেশি নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে গালাগালি এবং হুমকি দেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। রাশেদ আরো বলেন, ‘যে নম্বরটি থেকে কল করা হয়েছিল সেটি সম্ভবত ইউএসএ’র নম্বর এবং কলটি রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে গালিগালাজ শুরু করে নিজেকে রায়হান বলে পরিচয় দেওয়া এক ব্যাক্তি। সে ব্যাক্তি জানতে চান কেন আমি র‌্যাবের কাছে মদের চালান আটক করে দিলাম। পরে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে কলটি কেটে দেয়’।

 

উল্লেখ্য, জিডি করার দিন ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে বিপুল পরিমাণ মদ বহনকারী আরও একটি কনটেইনার পাওয়া যায় এবং তার পরের দিন ২৫ জুলাইও বন্দরে আরো ২ কনটেইনার ভর্তি মদ পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে মোট ৫টি মদের কনটেইনার পাওয়ায় গেছে। মদের এসব চালানের নেপথ্যে কারা আছেন, তা জানতে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীরা।

 

বন্দর থেকে মদ পাচারের অভিযোগে ইতোমধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। র‌্যাব জানায়, এই জালিয়াতি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ২ ব্যক্তি পিতা ও পুত্র শনিবারই দুবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

 

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ৫টি কনটেইনারের সব মদই ইপিজেডের আমদানি অনুমতি (আইপি) জালিয়াতি করে মিথ্যা ঘোষণায় বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়েছে। কাস্টমস নথি অনুযায়ী, জব্দকৃত চালানগুলো নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে অবস্থিত ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি ও মংলা ইপিজেডে অবস্থিত ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ লিমিটেড, হ্যাশি টাইগার কোং লিমিটেড নামে চীন থেকে পলিয়েস্টার সুতা হিসেবে আমদানি করা হয়েছিল। এছাড়া ঈশ্বরদী ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান বিএইচকে টেক্সটাইল লিমিটেড এর নামও ব্যবহার করেছিল জালিয়াত চক্র।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট