চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

সেঁজুতি সাহা শোনালেন বিজ্ঞানী হয়ে উঠার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ মে, ২০২২ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বিজ্ঞানে এখনো নারীরা পিছিয়ে। আমি চাই দেশে ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিসিএস ক্যাডার, আইনজীবী কিংবা সাংবাদিকের মত ‘আমি বিজ্ঞানী হব’ এমন স্বপ্ন দেখুক নারীরা। নারীদের নিয়ে এখন কাজ করছি। কারণ, আগে সমাজে সমতা তৈরি করতে হবে। সমতা আসলে নারী-পুরুষ- দুই শ্রেণীকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশের তরুণ অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা। গতকাল বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটরিয়াম হলে দৃষ্টি চট্টগ্রামের আয়োজনে ধারাবাহিক আড্ডা ১২তম পর্বে ড. সেঁজুতি সাহার বিজ্ঞানী হওয়ার গল্প নিয়ে আড্ডার আয়োজন করে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণের উপস্থিতিতে আয়োজিত আড্ডায় ড. সেঁজুতি সাহা বলেন, জীবাণুগুলোকে আমি চোর ভাবি, আর বিজ্ঞান চিন্তা দিয়ে তাদের খুঁজে বের করি। এভাবেই হয়ে উঠি অণুজীববিজ্ঞানী প্লাস গোয়েন্দা। বর্তমানে আণবিক জিনতত্ত¡ নিয়ে শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনে (সিএইচআরএফ) কাজ করছি। বাংলাদেশে প্রথম নতুন করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাসও উন্মোচন করছি। আলাপনে তিনি বলেন, কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনবিক জিনতত্ত্বে পিএইচডি করি। উচ্চশিক্ষা শেষে মাটির টানে দেশে ফিরে আসি। কারণ আমার মা-বাবা শিখিয়েছেন এবং দেশের প্রতি আমার দায়িত্ব আছে। তাই পড়াশোনা শেষ করে সে দেশে পড়ে না থেকে দেশেই চলে আসি। মেয়েদের নিয়ে কাজ করার কারণ বর্ণনা করে ড. সেঁজুতি বলেন, মেয়েরা এখনো অনেক পিছিয়ে। নারীরা একটু এগিয়ে এলেই আগামীতে পুরুষদের নিয়েও কাজ করবো। এছাড়া দেশের যেকোনো জায়গা থেকে আমাদের সিএইচআরএফ’এ কেউ ইন্টার্নশিপ করতে এপ্লাই করলে আমরা তাদের সেই সুযোগ দিচ্ছি। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা আমি বিজ্ঞানী হব এ কথাটাই বলুক। তার উপর এ পেশায় নারীদের অবস্থান একেবারে নেই বললেই চলে। তাই আমি চাই আগামীতে এ পেশায় হাজারো নারী আসুক। এখন শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে কাজ করছি। 
আড্ডার মাঝখানে যুক্ত হন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. অলক পাল, সানশাইন গ্রামার স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সাফিয়া গাজী রহমান ও ইপসার সমন্বয়ক মো. আলী শাহিন। আগত অতিথিগণ বলেন, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের জন্য প্রয়োজন সেঁজুতি সাহার মত গুণী মানুষদের। তাদের থেকে শেখার আছে, জানার আছে। বর্তমান প্রজন্ম মানসিকভাবে বিপদগ্রস্ত। তারা কিছু হলেই আত্মহত্যার মত ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করেন না। প্রতিটি সন্তানের জীবনে বাবা-মায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কিশোর বয়সে বাবা-মায়ের অনেক কথাই সন্তানের পছন্দ হয় না। তাই অনেকে রাগ করে ভুল পথে চলে যায়। এটি কখনোই কাম্য নয়। শিক্ষার্থীদের এক প্রশ্নের জবাবে সেঁজুতি সাহা বলেন, আমার এ জায়গায় আসাটা মোটেও সহজ ছিল না। আমি প্রথম যখন গবেষণাপত্র জমা দিই, বাংলাদেশি বলে আমিও অবহেলার শিকার হই। তবে একটা সময় এটি প্রকাশ হয়। এভাবে জীবনে চলার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আসবে। সেই প্রতিবন্ধকতা দেখে থেমে থাকলে হবে না। এগিয়ে যেতে হবে। আর একদিন সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারবে। ড. সেঁজুতি সাহা আর শিক্ষার্থীদের প্রায় তিন ঘণ্টার আড্ডা শেষ হয় রাত আটটায়।
আড্ডায় সভাপতিত্ব করেন দৃষ্টি চট্টগ্রামের সভাপতি মাসুদ বকুল। যুগ্ম সম্পাদক সাইফদ্দিন মুন্নার সঞ্চালনায় ড. সেঁজুতি বলেন, ছোটবেলায় গোয়েন্দা হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। আবার বাবা-মা দুইজনই অণুজীববিজ্ঞানী ছিলেন। তাদেরকে দেখে বিজ্ঞানী হওয়ার ইচ্ছেও জন্মায়।

পূর্বকোণ/এস 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট