চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রামুতে ১০ এলাকায় ২০টি পাহাড় সাবাড়

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

২৮ জুলাই, ২০১৯ | ১:২৬ পূর্বাহ্ণ

প্রশাসনের অভিযান, জরিমানা, মামলার পরও রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ির পাহাড়গুলো রক্ষা হচ্ছে না। প্রশাসনকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে একে একে সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে সব পাহাড়। ইতিমধ্যে ১০টি পাহাড় সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। দক্ষিণ মিঠাছড়ির চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টো বাহিনীই এই পাহাড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। চেয়ারম্যান ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন বাহিনী পুরো ইউনিয়নজুড়ে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। একই সাথে দখল করছে জায়গাগুলো। প্রশাসন, স্থানীয় সূত্র এবং সরেজমিন পরিদর্শনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইতিমধ্যে ইউনিয়নের পানেরছড়া, বনতলা, নিজেরপাড়া, বলীপাড়া, বসুন্ধরা ও চেইন্দাসহ অন্তত ১০টি এলাকার ২০টির বেশি পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে চেয়ারম্যান ভুট্টো বাহিনী। বর্তমানেও ওইসব এলাকায় সমানতালে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে এই বাহিনী।

এ ব্যাপারে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন, ‘দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ব্যাপকহারে পাহাড় কাটার বিষয়টি আমি ইতিমধ্যে অবগত হয়েছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এসব পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে জেনেছি। তবে আমি বলতে চাই তাদের দিন শেষ। এখন থেকে শুধু সেখানেই নয়; রামুর কোথাও পাহাড় কাটতে দেবো না। পাহাড়খেকোরা যত বড় প্রভাবশালীই হোক, প্রশাসন তাদের কাছে হার মানবে না।
মিঠাছড়ির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘মিঠাছড়িতে পাহাড় কাটা রোধে পাহারা বসানো হবে। যখনই যেখানে পাহাড় কাটা হয়, সেখানে সাথে সাথে অভিযান চালানো হবে। পাহাড় যারা কাটবে, তাদের বিরুদ্ধে স্পটেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টোর নেতৃত্বে দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ব্যাপকহারে পাহাড় কাটা হয়েছে। এই পাহাড়কাটার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন অনেকবার অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে পাহাড় কাটার দায়ে চেয়ারম্যান ভুট্টো ও তার বাহিনীর লোকজনকে মামলা এবং জরিমানা করা হয়েছে। একাধিকবার জব্দ করা হয় পাহাড়কাটার সরঞ্জাম। তারপরও ‘ক্ষমতাধর’ পাহাড়খেকো চেয়ারম্যান ভুট্টোকে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।
তথ্য মতে, পাহাড় কাটার দায়ে চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টো ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। অন্যদিকে একমাস আগে বনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পাহাড় কাটার দায়ে জেলা প্রশাসন অভিযান চালায়। কিন্তু এরপর এক মাসের ব্যবধানে সেখানে কয়েকটি পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান ভুট্টো বাহিনীর এই ভয়ংকর পাহাড় কাটার সংবাদ তুলে আনতে গিয়ে একাধিক সাংবাদিক তার বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে আবদুল মালেক সিকদার নামে এক স্থানীয় সাংবাদিককে কুপিয়ে গুরুতর জখমও করা হয়েছিল। এছাড়া আরো কয়েকজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ভুট্টো বাহিনীর সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। কিন্তু বারবার পার পেয়ে যায় ইউনুছ ভুট্টো। সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই ভুট্টো বাহিনীর সন্ত্রাসীদের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন খোদ রামু উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার শহীদুল হাসান।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রামুর মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টো বলেন, পাহাড় কাটায় আমি কখনো জড়িত ছিলাম না। আমি এসবের কোন নেতৃত্ব দিচ্ছি না। হয়ত কেউ রেহাই পেতে আমার নাম ব্যবহার করছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে ইউনুছ ভুট্টো বাহিনী অন্তত ১০টি পয়েন্টে ১৫টি পাহাড় কেটে নিয়েছে। পাহাড় কাটার ভয়াবহ চিত্র দেখতে গিয়ে সরকারি কর্মচারী, সাংবাদিক, স্থানীয় লোকজনসহ অনেকেই তার বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হয়েছেন।
এখনই যদি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে আরো ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। তাই পাহাড়খেকো ভুট্টো বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আমরা সব সময় কঠোর। আমাদের লোকজন এ ব্যাপারে কাজ করলেও আড়ালে-আবডালে প্রভাবশালীরা কাটছে হয়তো। আমি আজকালের মধ্যেই ব্যবস্থা নেবো।’
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরুল আমিন বলেন, ‘দক্ষিণ মিঠাছড়িতে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রামু উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে আমরা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। শিগগিরই সেটা দৃশ্যমান হবে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট