চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ওদের ভালোবাসায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ধর্ম

ফেসবুকে ‘আলবিদা’ বলার তিনদিন পর কাপ্তাই হ্রদে মিলল প্রেমিক যুগলের লাশ

পূর্বকোণ প্রতিনিধি হ রাঙামাটি অফিস

২৬ জুলাই, ২০১৯ | ২:৩১ পূর্বাহ্ণ

প্রায় দুই বছর পূর্বে পরিচয় হয় দুই তরুণ-তরুণীর। এরপর মাঝে মাঝে আলাপ। ধীরে ধীরে সেই সম্পর্ক রূপ নেয় ভালোবাসায়। কিন্তু সেই ভালোবাসায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের ধর্ম। ফেসবুকে তাই ‘আলবিদা’ লিখে জীবনের সমাধি রচনা করলো প্রেমিক যুগল।
ছেলেটি ছিল হিন্দু আর মেয়েটি মুসলিম পরিবারের। তাই তাদের সম্পর্ক পরিবার, সমাজ কেউই মেনে নিতে চায়নি। এ অবস্থায় দু’জনে একই সঙ্গে বিদায় জানিয়েছেন এই পৃথিবীকে। পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। ঘটনাটি ঘটেছে পার্বত্য জেলা সদর রাঙামাটিতে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ থেকে সেই তরুণ ও তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন, হিমেল দেওয়ানজী (১৮) ও তাহফিমা খানম তিন্নি (১৮)। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলার সদর উপজেলার মোরঘোনার বড়াদম স্মৃতি মন্দির সংলগ্ন এলাকা থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ দুটি আসামবস্তি কাপ্তাই সড়কের পাশে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ। লাশ দুটির পরিচয় নিশ্চিত করে পুলিশ জানায়, হিমেল দেওয়ানজী রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারের ১ নম্বর পাথরঘাটার বাসিন্দা ওষুধ ব্যবসায়ী ছোটন দেওয়ানজীর ছেলে। তিনি ঢাকার ক্যামব্রিয়ান কলেজে এইচএসসিতে (উচ্চ মাধ্যমিক) পড়াশুনা করতেন। আর তাহফিমা খানম তিন্নি চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনীয়া উপজেলার নটুয়ার টিলা এলাকার বাসিন্দা শহীদ তালুকদারের মেয়ে। তিনি রাঙামাটি শহরের কাঁঠালতলী এলাকায় এক মুক্তিযোদ্ধা আত্মীয় বাড়িতে থেকে শহরের রাঙামাটি লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। পুলিশের ধারণা, প্রেম ঘটিত কারণে আত্মহত্যা করতে পারেন ওই প্রেমিক যুগল।
নিহতদের পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৩ জুলাই প্রথম সকালে নিজের ফেসবুক আইডিতে ‘আলবিদা’ আপলোড দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি হিমেল। পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজার একপর্যায়ে পরদিন জানা গেল, শহরের কাঁঠালতলী এলাকা থেকে আরেকটি মেয়ে (তিন্নি) নিখোঁজ। সবশেষে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে ওই এলাকায় লাশ দুটি ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে প্রথমে ছেলে এবং পরে মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের উভয়ের ফেসবুক আইডি এবং স্থানীয় বন্ধু-বান্ধব থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নিহতরা প্রেমিক-প্রেমিকা ছিলেন। দুই জনেই দুই ধর্মের হওয়ায় উভয় পরিবারে অমতের আশঙ্কায় দু’জনেই এমন পরিণতি বেছে নিয়েছেন বলে ধারণা প্রতিবেশী ও স্বজনদের।
তাদের বন্ধুরা জানিয়েছে, তারা একে অন্যকে অনেক বেশি ভালবাসতো। কিন্তু তাদের সম্পর্ক সমাজ ও পরিবার মেনে নেবে না বলায় এমন হৃদয় বিদারক কাজ করেছে। বন্ধুরা তাদের বুঝানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা যে এমন কা- করবে বুঝতে পরেনি কেউ।
অন্যদিকে মেয়েটি রাঙামাটিতে তার যে স্বজনের বাসায় থেকে পড়াশুনা করতেন সেই নুরুল আলম মিয়া জানান, ‘আমরা আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না। সে আমার বাসায় থেকে পড়াশুনা করতো। কিন্তু কিসের মধ্যে কী হলো কিছুই বুঝতে পারছি না’।
হিমেলের বাবা ছোটন দেওয়াজী বলেন, ওইদিন সকাল সকাল বের হয়ে ছেলেটি আর ফেরেনি। আমরা খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। পরের দিন জানতে পারি শহরের কাঁঠালতলী থেকে আরেকটি মেয়ে নিখোঁজ। পরে আমরা উভয় পরিবার থেকে খোঁজাখুঁজির চেষ্টা চালাই। কিন্তু সর্বশেষ এমন পরিণতি দেখতে হল।
রাঙামাটি কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক রনি জানান, লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-১ তারিখ- ২৫/০৭/ ২০১৯।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট