চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গার্মেন্টস মন্ত্রণালয় সময়ের দাবি

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ২:০৭ অপরাহ্ণ

এস এম আবু তৈয়ব

 

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় গার্মেন্টস সেক্টরে। প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক এই সেক্টরে কাজ করেন। দেশের ৭৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় গার্মেন্টস সেক্টরের হাত ধরে। কিন্তু এই সেক্টরের প্রতি সরকার বিশেষ যত্নশীল নয়। গার্মেন্টস সেক্টরের প্রতি বিশেষ যত্নশীল না হলে, এই সেক্টরের সবকিছু অত্যাধুনিক করা না হলে- আমরা বেশি দিন অবস্থান ধরে রাখতে পারবো না। এ জন্য গার্মেন্টস নিয়ে আলাদা একটি মন্ত্রণালয় গঠন সময়ের দাবি।

শুধু রেলের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় আছে। পাট ব্যবসায়ী তেমন না থাকলেও পাটের জন্য মন্ত্রণালয় আছে। বিমানের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় আছে। কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেখানে হয়- সেই গার্মেন্টস নিয়ে কোনো মন্ত্রণালয় নেই। আলাদা কোনো কেয়ার নেই। এটা দুঃখজনক। গার্মেন্টস একটা ফ্যাশন বিজনেস। এর জন্য আলাদা যত্ন প্রয়োজন। প্রতিবন্ধকতা থাকলে ব্যবসা হবে না। আমাদের সম্ভাবনা থাকলেও প্রতিবন্ধকতার কারণে অন্য দেশ সেটা কাজে লাগাবে।

আমি মনে করি, গার্মেন্টস নিয়ে আলাদা একটি মন্ত্রণালয় হওয়া উচিত। আলাদা একটি মন্ত্রণালয় হলে আমরা এখন যে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছি- সেসব দ্রুত নিরসনে কিছুটা কাজ করা যাবে। গার্মেন্টস মন্ত্রণালয়ের অধীনে পোর্ট, শিপিং এর একটা অংশ দেওয়া যেতে পারে। গার্মেন্টস সংক্রান্ত যতকিছু আছে- যেমন বিদ্যুৎ সংযোগ, গ্যাস সংযোগ, পানি সংযোগ- সবকিছুর জন্য এই মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এরকম করা গেলে হয়রানি কমবে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো দেশ উপকৃত হবে।

এবার আসি চট্টগ্রামের গার্মেন্টস শিল্পে। রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের সূচনা হয়েছে চট্টগ্রামেই। বন্দরসহ সব ধরণের অবকাঠোমো থাকার কারণে গার্মেন্টস শিল্পের সবচেয়ে বড় হাব হওয়ার কথা ছিলো চট্টগ্রাম। কিন্তু চট্টগ্রামে শিল্প প্লটের অভাবে অনেক কারখানা মালিক তাদের ক্যাপাসিটি বাড়াতে অথবা নতুন কারখানা করতে পারছেন না। এখানে জমির যে উচ্চ দাম তা কোনোভাবে কারখানা স্থাপনের জন্য ফিজিবল হচ্ছে না। ঢাকার আশুলিয়া, সাভার, ময়মনসিংহের ভালুকায় এক বিঘা জমির দাম হয়তো ২০-২৫ লাখ টাকা। কিন্তু চট্টগ্রামে এক বিঘা জমি কিনতে গেলে ২ কোটি টাকা লাগবে। এ কারণে চট্টগ্রামের পরিবর্তে ওই সব জায়গায় বড় বড় ফ্যাক্টরিগুলো হচ্ছে।

চট্টগ্রামে যে কারখানাগুলো চালু ছিলো, তাদের অনেকে কমপ্লায়েন্সের কারণে সঙ্কটে পড়ে গেছে। বাসা-বাড়িতে যেসব কারখানা গড়ে উঠেছিলো সেগুলো অনেকটা বাধ্য হয়ে বন্ধ করতে হয়েছে। তারা এখানে নতুন করে আর কারখানা স্থাপন করতে পারেনি। যে কারণে চট্টগ্রামে বন্ধ গার্মেন্টস এর সংখ্যা বেড়েছে। এতো কিছুর মধ্যেও যারা টিকে আছে- তাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। কারণ আমলাতন্ত্রিক জটিলতা বেড়ে গেছে। বন্দর, কাস্টমস, বন্ড- প্রত্যেক ক্ষেত্রে আইনের ফাঁক খুঁজে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে।

অফ ডকগুলো- বিনা কারণে চার্জ বাড়িয়ে গার্মেন্টস খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমাদের এখানে সিংহভাগ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ এর মাধ্যমে কাজ করে। তাদের প্রফিট মার্জিনের সঙ্গে যখন এ ধরণের এক্সট্রা খরচ এসে যোগ হয়- তখন তারা আর ফিজিবলভাবে কারখানা চালাতে পারছে না। যেহেতু চট্টগ্রাম একটি ছোট জায়গা, যেহেতু এখানে বন্দর আছে, আমদানি রপ্তানি এখানে হয়- তাই চট্টগ্রামেই ফিজিবলভাবে গার্মেন্টস চালানোর কথা। কিন্তু এখানকার ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার কারণে সেটি হচ্ছে না।

একসময় এখানে রমরমা ব্যবসা ছিলো। শ্রমিকরা কাজ পেত। এক কারখানায় না পেলে অন্যখানে। ওই জায়গাটুকু এখন একটু সংকীর্ণ হয়ে গেছে। যে কারণে ইদানিং আমাদের প্রচুর অর্ডার আসায় বন্ধ কিছু কিছু কারখানা চালু হলেও শ্রমিকরা ফিরে আসছে না। দক্ষ শ্রমিকের একটা সঙ্কট দেখা যাচ্ছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শ্রমিকরা আর এই খাতকে নিরাপদ মনে করছে না। তারা ভাবছে- আমার চাকরি চলে গেলে আমি কোথায় যাবো? প্রচুর শ্রমিক কিন্তু গ্রামে ফিরে গেছে। আসলে বহুমুখী সঙ্কটের কারণে চট্টগ্রামে পোশাক শিল্প ধুঁকছে।

আমরা যারা সাধারণ রপ্তানিকারক আছি, আমরা কিন্তু কোনো অন্যায় করতে চাই না। আমরা কেউ চুরিও করতে চাই না। কেউ অন্যায় বা চুরি করুক- সেটাতেও উৎসাহ দিই না। বিজিএমইএও সেটা কখনো করে না। তাই যারা সত্যিকার অর্থে ব্যবসা করে তারা যেন একটা কমফোর্টেবল জোন পায়- আর যারা চুরি করছে তাদের যেন শাস্তি হয়। কিন্তু দু’একজন চুরি করছে বলে বা- দু’একজনের ভুলভ্রান্তির জন্য সবাইকে ধরে, পুরো সেক্টরকে ধরে, হয়রানি করা- এটা শোভন নয়। এটা দেশের জন্যই খারাপ হচ্ছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্য আমরা বাজে অবস্থায় চলে যাচ্ছি। অযথা কিছু জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে।

করোনার পর আমরা দেখছি- বাংলাদেশ অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। সুবিধা কাজে লাগাতে গিয়ে আমাদের যে ক্যাপাসিটি আছে সেটা পূর্ণ হয়ে গেছে। ক্যাপাসিটি যতটুকু আছে ততটুকু অর্ডার আমরা পেয়ে গেছি। কিন্তু এটা বাড়ানোর কোনো সুযোগ আমরা দেখছি না। এই সুযোগটা বাড়াতে হবে। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে অনেকে প্লট নিয়েছে। এটা ডেফিনিটলি একটা সুসংবাদ আমাদের জন্য। কিন্তু এটা কার্যকর করতে মনে হয় আরো সময় লাগবে। এখানে এখনো পানির সমস্যা আছে। অবকাঠামোগত সমস্যা আছে। এটা আগামী ১০ বছরেও পুরোপুরি চালু হয় কিনা সন্দেহ আছে। এখন এটাকে দ্রুত গতিতে কারখানা স্থাপনের উপযোগী করতে হবে। সহসা এটাকে চালু করতে হবে। তাহলে শিল্প প্লটের সঙ্কট কিছুটা কমবে। নতুন কারখানা স্থাপন করা যাবে। গার্মেন্টস শিল্পে চট্টগ্রামের অবস্থান ফের সুদৃঢ় হবে।

লেখক:  সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি, বিজিএমইএ

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট