চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

বছরে ৫০ হাজার গাড়ি উৎপাদনের উদ্যোগ প্রগতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ৪:০২ অপরাহ্ণ

ইংল্যান্ডের জেনারেল মোটরসের কারিগরি সহযোগিতায় ১৯৬৬ সালে বন্দর নগরীর ব্যক্তি মালিকানায় গাড়ি সংযোজন কারখানা হিসেবে গান্ধারা ইন্ডাস্ট্রিজ লি. প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অকৃত্রিম স্পর্শে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (পিআইএল) নামে জাতীয়করণ করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রনাধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এটি বাংলাদেশে গাড়ি সংযোজনকারী একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতা উত্তরকালে ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড কোম্পানির বাস ও ট্রাক সংযোজন করার মাধ্যমে পিআইএল আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের বিপর্যস্ত পরিবহণ সেক্টরে প্রতিষ্ঠানটি ইংল্যান্ড থেকে কমপ্লিটল নকড ডাউন (সিকেডি) অবস্থায় সুপিরিয়র বাস ও বেডফোর্ড ট্রাক আমদানি করে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এককভাবে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে জাপানের মিৎসুবিসি, নিশান ও ইসুজুসহ ভারত, চীন, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের গাড়ির সিকেডি যন্ত্রাংশ আমদানিপূর্বক সংযোজন ও বাজারজাত করে। বর্তমানে জাপানের মিৎসুবিসি মোটরস কর্পোরেশনের পাজেরো স্পোর্ট (কিউএক্স) জিপ, মিৎসুবিসিএল-২০০ ডাবল কেবিন পিক আপ, চীনের ফোর্ডে অটোমোবাইলস কোং লিঃ এর ল্যান্ডফোর্ট এসইউভি জিপ, লায়ন এফ-২২ ডাবল কেবিন পিকআপের সিকেডি আমদানি ও সংযোজনপূর্বক স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করছে। এছাড়াও টয়োটা এম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ইত্যাদি সিবিইউ (কমপ্লিটলি বিল্ড আপ) অবস্থায় আমদানি করে বাজারজাত করছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ স্বল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের গাড়ির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন মডেলের প্রায় ৬০ হাজার গাড়ি সংযোজনপূর্বক স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছে। গত এক দশকে প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে মুনাফা করছে।

প্রতিষ্ঠানের অবস্থান সীতাকুণ্ডের বাড়বকুন্ডের কারখানা রয়েছে। আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় প্রধান অফিস এবং ঢাকা, যশোর, কুমিল্লা, বগুড়া ও খুলনায় আঞ্চলিক অফিস রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ের প্রধান অর্জনসমূহ : পাজেরো স্পোর্ট সিআর-৪৫ এর সাকসেসর মডেল পাজেরো স্পোর্ট (কিউএক্স) মডেলের গাড়ি সংযোজন ও বাজারজাতকরণ করা হচ্ছে। এছাড়া, পিআইএল’র কারখানায় জাপানের মিতসুবিশি মোটর কর্পোরেশনের কারিগরি সহযোগিতায় মিতসুবিশি এল ২০০ ডাবল কেবিন পিকআপ গাড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে।   বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং উৎকর্ষতা অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রগতি’র “ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি এন্ড কোয়ালিটি একসিলেন্স এওয়ার্ড ২০১৮” এর প্রথম পুরস্কার অর্জন।

ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিজস্ব অর্থায়নে দুই বেজমেন্ট এবং সার্ভিস সেন্টারসহ ১৪তলা বাণিজ্যিক ভবন প্রগতি টাওয়ারের নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২৫৭ কোটি টাকা।

বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা : দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় জাপানের মিৎসুবিশি মোটরস করপোরেশনের (এমএমসি) উৎপাদিত পাজেরো স্পোর্ট (কিউএক্স) জিপ আমদানি করে সংযোজনপূর্বক বাজারজাত করা হচ্ছে। এটিই প্রগতির প্রধান সংযোজিত পণ্য। পরবর্তীতে ২০২১ সাল হতে মিৎসুবিসি এল-২০০ ডাবল কেবিন পিক-আপের সিকেডি আমদানি করে সংযোজনপূর্বক বাজারজাত করা হচ্ছে। তাছাড়া, অত্যন্ত সীমিত পরিসরে চীনের ফোডে কোম্পানির এসইউভি জিপ ও ডাবল কেবিন পিকআপের সিকেডি সংযোজনপূর্বক বাজারজাত করা হচ্ছে। অন্যদিকে জাপানের মিৎসুবিসি মটরস কর্পোরেশনের মিৎসুবিসি অঝঢঝটঠ জিপ সিবিইউ অবস্থায় আমদানি এবং টয়োটা, নিশান ইত্যাদি ব্র্যান্ডের কার, পিকআপ, ডাবল কেবিন পিকআপ, মাইক্রোবাস, এম্বুলেন্স ইত্যাদি স্থানীয় বাজার হতে ক্রয় করে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহের চাহিদামত সরবরাহ করছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সংযোজন সক্ষমতা ১৩০০ ইউনিট গাড়ি। তবে প্রতিবছর প্রায় ১০০০ গাড়ি স্থানীয়ভাবে সংযোজন করে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে সরবরাহ করছে। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা সরকারকে রাজস্ব দেয় প্রগতি।

নতুন ও সময়োপযোগী মডেলের ডাবল কেবিন পিকআপ সংযোজন ও বাজারজাতকরণ : দেশে ডাবল কেবিন পিকআপের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। বর্তমানে সিবিইউ অবস্থায় আমদানিকৃত প্রতি ইউনিট ডাবল কেবিন পিকআপের বাজারমূল্য ৫০ থেকে ৫৫ লক্ষ টাকা। প্রতিবছর এখাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয়। ডাবল কেবিন পিকআপের সিকেডি যন্ত্রাংশ আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক-কর সুবিধা সংযোজনের জন্য মোটামুটি অনুকূলে থাকায় জাপানের মিৎসুবিশিএল-২০০ ডাবল কেবিন পিকআপ-এর সিকেডি সংযোজন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সিকেডি যন্ত্রাংশ আমদানি করে স্থানীয় পর্যায়ে সংযোজন করা হলে প্রতিটি ডাবল কেবিন পিকআপের বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৪২ লক্ষ টাকার মধ্যে রাখা সম্ভব। এবিবেচনায় মিৎসুবিসি মোটরস করপোরেশন, জাপানের সাথে প্রগতির সিকেডি কম্পোনেন্ট সাপ্লাই এগ্রিমেন্ট (সিএসএ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তিপত্রে পার্টস লোকালাইজেশনের ক্ষেত্রে মিৎসুবিসি মোটরস করপোরেশন, জাপানের কারিগরী সহযোগিতার শর্ত রয়েছে। সম্প্রতি প্রগতির কারখানায় জাপানের মিৎসুবিশিএল-২০০ ডাবল কেবিন পিকআপ-এর সিকেডি সংযোজন প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। জাপানী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে ট্রায়াল প্রোডাকশন পর্ব সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মিৎসুবিসি হতে বাণিজ্যিক সংযোজনের অনুমোদন পাওয়ায় বর্তমানে এই গাড়ির বাণিজ্যিক সংযোজন ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় কম মূল্যে ডাবল কেবিন পিকআপ বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে।

পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জীপের সাকসেসর মডেল পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স২০এমওয়াই এর বাণিজ্যিক সংযোজন ও বাজারজাতকরণ :

পিআইএল’র সাথে মিৎসুবিসি মোটরস কর্পোরেশনের সম্পাদিত মিৎসুবিসি পাজেরো স্পোর্ট (কিউএক্স) এর সিকেডি কম্পোনেন্ট সাপ্লাই চুক্তির মেয়াদ আগামী জুন’ ২০২২ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জীপের সাকসেসর মডেল পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স২০এমওয়াই এর বাণিজ্যিক সংযোজন ও বাজারজাতকরণ করার লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কারখানায় ওই মডেলের গাড়ির পিজে ট্রায়াল করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ ইউনিট

গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। ১০ ইউনিট গাড়ি আমদানি করার পর মিৎসুবিসি মোটরস কর্পোরেশনের কারিগরী বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানে কারখানায় পিজে ট্রায়াল কার্যক্রম চলছে। পিজে ট্রায়াল সম্পন্ন করার পর বাণিজ্যিক সংযোজনের লক্ষ্যে ট্রায়াল প্রোডাকসনের পরবর্তী ধাপসমূহ (পিএলটি, পিপি) সম্পন্ন করা হবে। ট্রায়াল প্রোডাকসনের সবগুলো ধাপ সম্পন্ন করার পর বাণিজ্যিক সংযোজন ও বাজারজাত করা শুরু করা যাবে বলে আশা করা যায়।

অত্যাধুনিক অটোমেশন পদ্ধতিতে গাড়ি সংযোজন :

৫৪ বছরের পুরাতন পিআইএল’র কারখানায় ম্যানুয়েল পদ্ধতির সংযোজন ক্ষমতা খুবই সীমিত। বার্ষিক সংযোজন ক্ষমতা মাত্র ১৩০০টি গাড়ি। একারণে জাপানের মিতসুবিসি মোটরস করপোরেশন ব্যতীত অন্যকোন খ্যাতনামা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পিআইএল’র কারখানায় সিকেডি সংযোজন প্রকল্প স্থাপনে অনাগ্রহী। এই সমস্যা সমাধানে প্রগ্রেসিভ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টের সুবিধা সম্বলিত বছরে দুই শিফটে ৫০ হাজার গাড়ি উৎপাদন/সংযোজন সক্ষমতাসম্পন্ন সম্পূর্ণ নতুন একটি অত্যাধুনিক অটোমেটিক গাড়ি সংযোজন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে।

এ প্ল্যান্টে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এসেম্বলি সপ ছাড়াও ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট উন্নতকরণের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রেস সপ, মেশিন সপ, বডি সপ, পেইন্ট সপ, আরএন্ডডি সেল, বাস ও ট্রাক সপ ইত্যাদি থাকবে। জিপ, পিক-আপ, সেডান কার এর জন্য একটি এবং বাস-ট্রাকের জন্য একটি লাইন/ইউনিট থাকবে। এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে অটোমেটিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন মডেলের গাড়ি সংযোজনসহ গাড়ির বডি, দরজা ও বিভিন্ন পার্টস তৈরি করা, গাড়ি রং করা, গবেষণা ও গাড়ির অন্যান্য আরও পার্টস ডিজাইন করার সক্ষমতা অর্জিত হবে। প্ল্যান্টের লে-আউট প্ল্যান, ডিটেইলস ড্রইং, ডিজাইন, ব্যয় প্রাক্কলন ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির তালিকা সমেত একটি পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির জন্য ২০১৯ সালের গত ১০ অক্টোবর Bokamoso Asset Management (Pty) Ltd T/A Automotive Investment Holdings (AIH), South Africa & Eusuf And Associates (Pvt.) Limited, Bangladesh -কে পরামর্শক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর কারণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।

ইতোমধ্যে তারা প্ল্যান্টের লে-আউট প্ল্যান, ডিটেইলস ড্রইং, ডিজাইন, ব্যয় প্রাক্কলন ইত্যাদিসহ খসড়া প্রতিবেদন (কমার্শিয়াল, টেকনিক্যাল এবং ফিনান্সিয়াল) দাখিল করেছে। প্রতিবেদনটি ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর বিএসইসিতে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রীর উপস্থিতিতে খসড়া প্রতিবেদন উপস্থাপনশেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এরপর ডিপিপি তৈরি করা হবে। নতুন প্ল্যান্ট চালু হলে বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের গুণগত মানসম্পন্ন গাড়ি সংযোজনের চাহিদা মোতাবেক আধুনিক বিভিন্ন মডেলের গাড়ি উৎপাদন ও সংযোজনের সক্ষমতা বহুগুণ বাড়বে। নিজেরা পর্যায়ক্রমিকভাবে গাড়ির কিছু যন্ত্রাংশ তৈরির সক্ষমতা অর্জন ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয়ভাবে ভেন্ডর ডেভেলপের মাধ্যমে যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে পর্যায়মে পার্টস ডিলিশন মেথড এপিআইএল সংযোজন প্ল্যান্ট হতে প্রগ্রেসিভ ম্যানুফেকচারিং প্ল্যান্টে রূপান্তরিত হবে বলে আশা করা যায়। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রগতিকে ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে উন্নীত করা সম্ভব হবে। তখন নিজস্ব ব্র্যান্ডের গাড়ি উৎপাদন করা সম্ভব হবে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে গাড়ি বিক্রয় করার সম্ভব হবে। এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে আধুনিক বিভিন্ন মডেলের সেডান কার, জিপ, পিক-আপ, বাস, ট্রাক ইত্যাদি উৎপাদন-সংযোজন করা যাবে। সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি পর্যায়ে গাড়ি বিক্রয় করা যাবে। এছাড়া ভেন্ডর ডেভেলপের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদন শিল্পের বিকাশসহ দেশে অটোমোবাইল শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার ও শো’রুম স্থাপন : পিআইএল’র ঢাকা ও চট্টগ্রামে ছোট আকারের সার্ভিসিং সেন্টার চালু আছে। যা দিয়ে সীমিত সংখ্যক গাড়ির বিক্রয়োত্তর সেবা দেয়া হচ্ছে। ক্রেতাদের দোরগোড়ায় বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভাগীয় সার্ভিসিং সেন্টার স্থাপন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গায় বিভাগীয় সার্ভিস সেন্টার এবং কুমিল্লা মহানগরীর কোট বাড়িতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বগুড়া শহরের ছয় পুকুরিয়ায় ৪ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে উত্তরাঞ্চলীয় সার্ভিস সেন্টার, অফিস ও শোরুম স্থাপন করা হবে। স্থাপিত সার্ভিস সেন্টারগুলোতে পেইড সার্ভিসসহ বিক্রয়োত্তর সেবা পূর্ণোদ্যোমে চালু করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়ের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে পূর্ণোদ্যোমে চালু করা সম্ভব হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিভাগীয়/জেলা শহরে সার্ভিস সেন্টার, শো-রুম ও আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

নাসিরাবাদে নিজস্ব অফিস ভবন, সার্ভিস সেন্টার ও শো’রুম স্থাপন : বন্দর নগরীতে প্রগতির নিজস্ব কোন অফিস ভবন না থাকায় আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার ফিনলে হাউজের তৃতীয় তলার একাংশ ভাড়া নিয়ে প্রধান কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু আছে। এতে প্রতি বছর ফ্লোর ভাড়া বাবদ বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হওয়ার কারণে প্রগতি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এজন্য নাসিরাবাদে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লি. কর্তৃক খরিদকৃত (বাংলাদেশ ক্যান কোম্পানি লি. এর জায়গা) ৪.৩১ একর জমির এক পাশে আনুমানিক ১.৩১ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অফিস, সার্ভিস সেন্টার ও শোরুম স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণপূর্বক সার্ভিস সেন্টার, শো’রুম স্থাপন এবং অফিস স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন করার সম্ভাবনা রয়েছে।

পার্টস লোকালাইজেশন : স্থানীয়ভাবে গাড়ি উৎপাদনের নিমিত্তে যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য বিপুল সংখ্যক ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। যা এখনো দেশে গড়ে উঠেনি। ভেন্ডর ডেভেলোপ করার লক্ষ্যে জাপানের মিৎসুবিসি মোটরস কর্পোরেশনের কারিগরী সহযোগিতায় নাসিরাবাদে প্রগতির খরিদকৃত ৪.৩১ একর জায়গায় প্রগতির প্রধান কার্যালয় এবং ডাবল কেবিন পিকআপের যন্ত্রাংশ সীমিত আকারে উৎপাদন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কারখানা স্থাপিত হওয়ার পর আগামী ৩ বছরের মধ্যে পার্টস ডিলিশন মেথডে স্থানীয়ভাবে ডাবল কেবিন পিকআপ উৎপাদন করে প্রগ্রেসিভ ম্যানুফ্যাকচারিং পদ্ধতিতে আগামী ১০ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া, সরকারি উদ্যোগে যন্ত্রাংশ তৈরির ভেন্ডর সৃষ্টি করতে হবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবান হলে প্রগতির সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে এবং স্থানীয়ভাবে গাড়ি উৎপাদনের মাইল ফলক স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় আকাক্সক্ষা পূরণ হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট