চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মূল কারণ আমদানি নির্ভরশীলতা, টিকতে পারছেন না ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ২:০৮ অপরাহ্ণ

বাস-ট্রাকের বডি বাংলাদেশে নির্মাণ হলেও সিএনজি ট্যাক্সির বডি নির্মাণের সুযোগ নেই। কারণ ভারত থেকে পূর্ণাঙ্গ সিএনজি ট্যাক্সি আমদানি করা হয়। ফোর স্ট্রোকের এই গাড়িগুলো যখন আমদানি শুরু হয়, তখন দেশে এর বডি পার্টসের কিছু কারখানাও গড়ে উঠে। এসব কারখানায় প্রায় ৫০ রকমের পার্টস উৎপাদন হয়। তবে আমদানিকৃত পার্টসের সাথে প্রতিযোগিতায় খুব একটা পেরে উঠছে না তারাও। কিছু কারখানা কোনভাবে টিকে আছে। আর কিছু বন্ধ হয়ে গেছে।

স্টিলের দাম বাড়ায় বেড়েছে জালি-বাম্পারের দাম: সিএনজি ট্যাক্সিকে ঘিরে আরো একটি খাত গড়ে উঠেছে। তা হল ট্যাক্সির নিরাপত্তা জালি এবং বাম্পার নির্মাণ। সিএনজি ট্যাক্সির গ্যারেজে মূলত স্টেইলনেস স্টিল (এসএস) দিয়ে অতিরিক্ত এসব পার্টস তৈরি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে দুই পাশের নিরাপত্তা জালি এবং এসএস’র বাম্পার। এই খাতেও প্রতিযোগিতা আছে। স্টিলের রডগুলো আমদানি হয় ভারত থেকে। কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাম্পারের একটি পাইপের দাম ৬ মাস আগেও কেনা যেত ১৭০ টাকায়। এখন ২৬০ টাকা। একটি বাম্পারে দুইটি পাইপ লাগে। স্টিলের সিটের দামও একইহারে বেড়ে গেছে। ১৫০ টাকার স্টিল দাম বেড়ে কেজি ১৯০ টাকা হয়েছে। এসএস’র কাজ করে এমন গ্যারেজের সংখ্যা বাদুরতলাতেই আছে অন্তত ২০টি। এসব গ্যারেজে পুরনো সিএনজি ট্যাক্সির বডি মেরামত এবং নতুন বডি সংযোজন করা হয়।

বেড়েছে পার্টসের দাম: বডি পার্টস তৈরির একাধিক কারখানা মালিকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে বডি পার্টসের দামও অনেক বেড়ে গেছে। করোনা মহামারীর আগে সিএনজি ট্যাক্সির সামনের তলা বিক্রি হত ৬২০ টাকা। এখন দাম বেড়ে ৯০০ টাকার উপরে চলে গেছে। অন্যান্য পার্টসের দামও একইহারে বেড়ে গেছে।

বেড়েছে সিএনজি ট্যাক্সির দাম: বাদুরতলা সিএনজি ব্যবসায়ী শো’রুম কল্যাণ সমিতির নেতা ও মেসার্স জানু এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর ইসলাম জানু পূর্বকোণকে বলেন, গত ২২ অক্টোবর থেকে সিএনজি ট্যাক্সির দাম বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগেও ৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকায় একটি সিএনজি ট্যাক্সি কেনা যেত। এখন ৪ লাখ ২০ হাজার টাকায় সিএনজি ট্যাক্সির দাম। একসাথে একটি গাড়ির দাম এত বেশি কীভাবে বাড়ে এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, অতিমাত্রায় দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নগরীতে সিএনজি ট্যাক্সির দাম বেড়েছে তিনগুণ :

সরকার পরিবেশদূষণ রোধে টু স্ট্রোক অটোরিকশা তুলে দিয়ে ২০০৩ সাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে পরিবেশ সহায়ক ১৩ হাজার করে ২৬ হাজার সিএনজিচালিত ট্যাক্সির নিবন্ধন দেয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি ভেঙে প্রত্যেক মালিককে প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে নতুন ট্যাক্সি দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তে ২০০৫ সাল থেকে ভাড়ায় চালিত সিএনজি ট্যাক্সির নতুন নম্বর দেওয়া বন্ধ। তবে গাড়ি মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তার বিপরীতে নতুন নম্বর বা নতুন সিএনজি ট্যাক্সি নামানোর অনুমতি পাওয়া যায়।

বিশেষ করে শহরে চলাচলের জন্য পাওয়া নম্বরের (মেট্রো) গাড়ির কদর বেশি। নম্বরসহ একটি মেট্রোপলিটন এলাকায় চলার অনুমতি পাওয়া একটি সিএনজি ট্যাক্সির বর্তমান বাজারদর ১৪ লাখ টাকার বেশি।বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার কারণে নগরীর বিভিন্ন শো রুমে ‘রিপ্লেসকৃত’ মেট্রোপলিটন সিএনজি চালিত ট্যাক্সি বিক্রি হচ্ছে ১৪ লাখ থেকে সাড়ে ১৪ লাখ টাকায়। অথচ যখন রেজিস্ট্রেশন দিয়েছিলো, তখন সিএনজি ট্যাক্সির দাম পড়তো সর্বোচ্চ চার লাখ ১৫ হাজার টাকার মত। এতে বেকায়দায় পড়েছেন চালক, গাড়ির মালিক এবং যাত্রী সাধারণও। অতীতে একটি ট্যাক্সিতে যে পুঁজি খাটিয়ে মাস শেষে যে আয় হত এখন তার তিনগুণেরও বেশি পুঁজি লাগছে। যেকারণে ট্যাক্সির দৈনিক আয় হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে মালিকরা। অপরদিকে, দৈনিক জমার টাকা তুলতেই চালককে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। যার চাপ পড়ছে যাত্রীর উপর। বলতে গেলে ট্যাক্সির মালিক, চালক এবং যাত্রী কেউই শান্তিতে নেই।

ট্যাক্সির রেজিস্ট্রেশন ফি কত : বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, একটি সিএনজি ট্যাক্সি সরকারিভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে খরচ হয় ১৩ হাজার ২০৫ টাকা। যার মধ্যে ট্যাক্স টোকেন ২৬৯৭ টাকা, আয়কর ৩০০০, ফিটনেস, ১০৮৭, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন ৫৫৫, নম্বর প্লেট ২২৬০, নতুন রেজিস্ট্রেশন ১০২৫, রুট পারমিট ১১০৪ টাকাসহ আরও কিছু টাকা খরচ করতে হয়। নগরীর একটি সিএনজি ট্যাক্সির মালিক মোহাম্মদ নুর উদ্দিন বলেন, একটি পুরাতন গাড়ি যদি কিনতে যান, তাহলে আট থেকে নয় লাখ টাকার নিচে কেউ বিক্রি করবে না। কারণ নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না দেওয়াতে পুরাতন গাড়ির মূল্য বেড়ে গেছে। সেগুলো স্ক্র্যাপ করাতে গেলে ইঞ্জিন নম্বর চেসিস নম্বর সঠিক থাকলেও দালালকে টাকা দিতে হয়। আবার ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বরে ঘষামাজা থাকলে খরচ আরো অনেক বেড়ে যায়। যার থেকে যেভাবে পেরেছে, দালালরা সেভাবে টাকা নিয়েছে। স্ক্র্যাপ হওয়ার পর নাম পরিবর্তন এবং রেজিস্ট্রেশন বাবদ আরও এক থেকে দেড় লাখ টাকা চলে যায়। তাহলে গাড়িগুলোর মূল্য ১৩-১৪ লাখ টাকা হবে না কেন? যদি ঠিকমত রেজিস্ট্রেশন দিতো তাহলে এমনটি হতো না।

আরেক সিএনজি ট্যাক্সির মালিক মোহাম্মদ আমিনুর রহমান কোম্পানি বলেন, সিএনজি ট্যাক্সির দাম বেশি হলেও এখন সবাই নিয়ে নিচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ১৫ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখলে ব্যাংক ওই আমানতকারীকে প্রতিমাসে সুদ দেবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। একই টাকা দিয়ে একটি সিএনজি ট্যাক্সি কিনে রাস্তায় নামালে প্রতিমাসে হালালভাবে আয় দেবে অন্তত ২৭ হাজার টাকা (প্রতিদিন ৯০০ টাকা করে)। একজন ব্যক্তি যদি মাসে হালালভাবে ২৭ হাজার টাকা আয় করতে পারেন, তাহলে ওই টাকা ব্যাংকে কেন রাখবেন। বিশেষ করে প্রবাসীরা তাদের পরিবার চালানোর জন্য সামর্থ অনুযায়ী একটি বা দুইটি সিএনজি ট্যাক্সি কিনে দেয়। ওই আয় দিয়ে তাদের সংসারের খরচ অনেকটাই মিটে যায়। তাছাড়া যাদের কালো টাকা রয়েছে, তারা সবাই বেশি দাম দিয়ে সিএনজি ট্যাক্সি কিনছেন।

লেখক: নিজস্ব প্রতিবেদক

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট