চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

পশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক

ইফতেখারুল ইসলাম

২৪ জুলাই, ২০১৯ | ২:১৫ পূর্বাহ্ণ

পশু খাদ্য নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার পশু পালনকারী কৃষক ও খামারিরা। বন্যার কারণে চারণ ভূমি, অনাবাদি জমির ঘাস এবং চাষের ঘাস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শুকনা খাদ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে পশু খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানির পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে গ্রামের কৃষক ও খামারিরা। কোরবানির বাজারে বিক্রির আশায় সারাবছর ধরে গরু পালন করলেও খাদ্য সংকটের কারণে কোরবানের অনেক আগেই কম দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাঙ্গু তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হওয়ায় গরু-ছাগল নিয়ে পানিতেই রাত কাটাতে হয়েছে এলাকার কৃষক ও খামারিদের। এসব গ্রামে যারা কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য গরু মোটাতাজা করেছেন তারা মহাবিপাকে পড়েছেন। কারণ চর-বিল সব পানিতে ডুবে আছে। মাঠের সব ঘাস পচে গলে নষ্ট হয়ে গেছে। চড়া দামে কুড়া-ভুষি কিনে গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। তাই অনেকেই আগে-ভাগে গরু বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। কারণ এসব কৃষক মূলত কাঁচা ঘাসের উপর নির্ভর করেই গরু-মহিষ লালন-পালন করেন। ঘাস পচে যাওয়ার কারণে খাদ্য সংকটে তাদের পশুগুলির শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, গত দুই সপ্তাহে চট্টগ্রামের বেশির ভাগ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাঙ্গু নদী তীরবর্তী এলাকা সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা। এসব এলাকায় এবারের বন্যা গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা। সাঙ্গু নদী, ডলু খালের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে পশু খাদ্যের চরম সংকটের কারণে বেশি বিপাকে পড়েছে কোরাবানির পশু পালনকারী গ্রামের কৃষক ও খামারিরা। চিটাগং ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাঈম উদ্দীন পূর্বকোণকে জানান, মূলত রমজানের আগে থেকেই পশু খাদ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, তিন মার্চ তিনি ৩৫ কেজি ওজনের এক বস্তা পাতা ভুষি কিনেছেন ১১৬০ টাকায়। একই ভুষি গতকাল কিনেছেন ১৩০০ টাকায়। কেজিতে বেড়েছে চার টাকা। মার্চের প্রথম সপ্তাহে আটা কুড়া কিনেছিলেন প্রতিবস্তা ৭৬০ টাকায়। গতকাল কিনতে হয়েছে ৯৯০ টাকায়। অর্থাৎ কেজি প্রতি চার টাকা ৬০ পয়সা বেড়ে গেছে। মসুরি ডালের ভুষি কিনেছিলেন প্রতি ৩০ কেজির বস্তা ৬৫০ টাকায়। গতকাল কিনেছেন ৭৮০ টাকায়। এভাবে পশু খাদ্যের অন্যান্য আইটেমের দামও বেড়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবার কোরবানির ঈদের আগে পশু খাদ্যের দাম বেড়ে যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। পশু খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রেয়াজুল হক বলেন, এবারের বন্যা ছিল গত তিন দশকের মধ্যে ভয়াবহ। এই বন্যায় চট্টগ্রামের পশু সম্পদে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বন্যার পানিতে ১৬ হাজার মুরগি মারা গেছে। গরু-ছাগল মারা যাওয়ার ঘটনা না ঘটলেও খাদ্য সংকট কিছুটা আছে। বিশেষ করে চারণভূমি এবং অনাবাদি জমির ঘাস নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণেই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোরবানির পশুকে রোগ মুক্ত রাখতে বন্যা কবলিত অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার পশুদের ভেক্সিন দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট